মেয়র বলেন, “বর্ষাকালে অতিরিক্ত যে পানিটা আসে, সেটা যদি আমরা সংরক্ষণ করতে পারি তাহলে জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে এবং মাটির নিচের পানির স্তরও রক্ষা পাবে।”
Published : 12 Nov 2024, 08:04 PM
জলাবদ্ধতা নিরসনে জনসচেতনতা, পরিবেশ রক্ষা, পরিকল্পিত নগরায়ণ ও সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের মেয়র শাহাদাত হোসেন।
মঙ্গলবার নগরীর টাইগার পাসে অস্থায়ী নগর ভবনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিমের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, “নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন্দরসহ সবগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে একসাথে কাজ করতে হবে।
“কেবল হাজার-হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প করে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়, বরং প্রকল্পের পাশাপাশি জনসচেতনতা, পরিবেশ রক্ষা ও পরিকল্পিত নগরায়ণ জরুরি।”
খাল ও নদী রক্ষায় আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন মন্তব্য করে মেয়র শাহাদাত বলেন, “আমি বাকলিয়ায় কৃষিখালে গিয়ে দেখলাম খালটা যেন ডাম্পিং স্টেশন হয়ে গেছে। অথচ বাকলিয়া এলাকার জলাবদ্ধতার পানি নিরসনে খালটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চাক্তাই খালেরও অনেক স্থানে ৭-৮ তলা বিল্ডিং হয়ে গেছে।
“অন্যান্য খালেও দখল ও বর্জ্য নিয়ে একই সমস্যা যা শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে, কর্ণফুলীকেও হত্যা করছে। এজন্য আমার মনে হয় প্রয়োজনে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আমি হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াব না, তবে যারা নিয়ম মানছে না, আইনের মধ্যে চলছে না অথবা সুন্দর শহর গড়ার আমাদের যে প্রত্যয়, সেটার বিরুদ্ধে কাজ করছে, যারা নালা-খাল ময়লা-দখল করে তাদের জরিমানা করব।”
তিনি বলেন, “আমার বিকল্প কিছু পরিকল্পনা আছে জলাবদ্ধতার জন্য। এই যে বর্ষাকালে অতিরিক্ত যে পানিটা আসে, সেটা যদি আমরা সংরক্ষণ করতে পারি তাহলে জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে এবং মাটির নিচের পানির স্তরও রক্ষা পাবে।”
“বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জায়গা ছাড়া হচ্ছে কি না তা সিডিএর নিশ্চিত করা। কারণ, পানি মাটির নিচে না যেতে পারায় কিন্তু ভূমি ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে এবং ভূমিকম্প ও ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে।”
সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, “সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প দ্রত এগিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনসহ জনস্বার্থে সব বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সাথে সিডিএ একযোগে কাজ করবে।
“বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। ময়লার এসটিএস নির্মাণ করার জন্য কোথাও ভূমির প্রয়োজন হলে, সিডিএকে জানালে বিবেচনা করা হবে।”
নগরীতে ৫৭ টি খালের মধ্যে ৩৬ টি খালের কাজ সিডিএ করছে জানিয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুরুল করিম বলেন, “বাকি ২১টি খাল আদৌ বেঁচে আছে কি না, থাকলে সেগুলো কীভাবে উদ্ধার করা যায়, তা জানতে বাকি খালগুলো নিয়েও সমীক্ষা প্রয়োজন।”
সভায় সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিসরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ বলেন, চলমান প্রকল্পটির কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা তুলনামূলক কম স্থানে হয়েছে এবং জমাটবদ্ধ পানি দ্রুত অপসারিত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের ভৌতিক কাজের অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসণে পাহাড় রক্ষাও জরুরি উল্লেখ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম এবং সিডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এএএম হাবিবুর রহমানসহ কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।