চমেক ছাত্রাবাসে ‘শিবিরকর্মী সন্দেহে ছাত্রলীগের মারধর’, দুই জন আইসিইউতে

“দুই ছাত্রকে পেলেও তারা কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। যেহেতু তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে তাই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে”, বলছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2023, 11:58 AM
Updated : 10 Feb 2023, 11:58 AM

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে চারজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে।

তাদের মধ্যে দুই জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন নয়।

ছাত্রলীগ কর্মীদের দাবি, ওই ‘চার শিবির কর্মী’ কলেজের পরিবেশ ‘নষ্টের পাঁয়তারা’ করছিলেন। তাদের কাউকে মারধর করা হয়নি, কেবল ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মেডিকেলের শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের দুইজন সহজে হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ নিয়েছেন।

নগরীর চট্টেশ্বরী সড়কের প্রধান ছাত্রাবাসে বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জাহিদ হাসান ওয়াকিল, সাকিব হোসেন, এসএ রায়হান ও মোবাশ্বির হোসেনকে আটকে রাখার তথ্য পাওয়া যায়। তারা কলেজের ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে জাহিদ ও রায়হানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তবে কারা নির্যাতন করেছে, সে বিষয়ে কোনো অভিযোগ কারও কাছ থেকে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ।

কী ঘটেছে

হলের ছাত্ররা বলছেন, ‘ছাত্র শিবিরের’ সঙ্গে জড়িত থাকার কথা বলে বুধবার রাতে চার ছাত্রকে তাদের নিজ নিজ কক্ষ থেকে অন্য একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের সেখানে আটকে রাখার পর তাদের বাড়ি চলে যেতে বলা হয়।

দুই শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেলেও অপর দুই জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল সন্ধ্যায় (বৃহস্পতিবার) চার শিক্ষার্থীকে আটকে রাখার খবর শুনে আমি নিজেই হল প্রধান ও পুলিশ নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে দুই ছাত্রকে পেলেও তারা কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। যেহেতু তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তাই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”

এ দুই শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হলেও তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন নয় বলে জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ।

সংকটাপন্ন না হলে কেন আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভর্তি করানো হলে অ্যাটেনডেন্সের প্রয়োজন হয়। যেহেতু আইসিইউতে সার্বক্ষণিক নার্স ও সিনিয়র ডাক্তাররা থাকেন, তাই তাদের সেখানে রাখা হয়েছে।”

তাদের জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাদের তা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

অধ্যক্ষ বলেন, “চার জন শিক্ষার্থীর কথা জানা গেলেও সেখানে পাওয়া গেছে দুই জনকে। অন্য দুই জনের মধ্যে রাত ২টায় এক জনের অবস্থান পেয়েছি কুমিল্লায়, আর ভোর ৪টায় আরেকজনের অবস্থান পেয়েছি নারায়াণগঞ্জে।

“আমি নিজেই তাদের এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কখা বলেছি। কেউ তাদের মারধর করেছে এমন কোনো অভিযোগ করেনি।”

এ ঘটনায় কলেজ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, “কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ। ভুক্তভোগীরা যেহেতু কোনো অভিযোগ করেনি, কারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দুই শিক্ষার্থী সুস্থ হয়ে উঠলেই তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে।”

চকবাজার থানার ওসি মনজুর কাদের মজুমদার বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ শুনে পুলিশ ছাত্রাবাসে যায়। সেখানে একটি কক্ষ থেকে দুই জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

“তবে কারা তাদের নির্যাতন করেছে সে বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি আহতরা।”

ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধরে করেছে বলে পাওয়া অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “কেউ সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আমাদের জানায়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে নিজস্ব তদন্ত করবে। আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।”

ছাত্রলীগ কী বলছে

যাদের বিরুদ্ধে পিটুনির অভিযোগ উঠেছে, তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তাদের একজন অভিজিৎ দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেশ কিছুদিন কিছু ছাত্রের গতিবিধি অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হয়েছে। তারা কলেজের পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে নাশকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছিল। বিষয়টি ভালভাবে খবর নিতে আমরা কিছু ‘জুনিয়রকে’ বলেছিলাম। তারা খোঁজ নেওয়ার সময় বেশ কয়েকজন পালিয়ে গেলে চার জনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি।

“এ সময় তাদের মোবাইল ফোন চেক করতে চাইলে তারা সেগুলো লুকিয়ে ফেলে এবং তাদের রুমে চেইন, জিহাদী বইসহ বেশকিছু আলামত পাওয়া যায়। পরে তাদের মোবাইলে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়।”

মারধর ও নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিজিৎ বলেন, “কাউকে মারধর করা হয়নি। দুইজন এমনিতেই বাড়ি চলে গেছেন। অন্য দুই জন কেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।”

তিনি বলেন, “মেডিকেল শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা সহজেই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারি। সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে হয়ত এ দুই জন চিকিৎসার নামে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।”

যে কারণে বন্ধ ছাত্র রাজনীতি

মেডিকেলে আগে থেকেই সাবেক সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের একটি পক্ষ সক্রিয় ছিল। তবে বর্তমান সময়ে কলেজে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী একটি পক্ষ হয়েছে।

২০২১ সালের অক্টোবরে দুই পক্ষের মারামারিতে নওফেলপন্থি এক ছাত্রলীগ কর্মী গুরুতর আহত হয়। আকিব নামে ওই শিক্ষার্থীর মাথার খুলির হাড় ভেঙে যায়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জটিল অপরেশনের মাধ্যমে হাড়ের জোড়া লাগান।

এরপর থেকেই কলেজের ছাত্র রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।