জাহাজটিতে পাথর আছে ৫৬ হাজার টন।
Published : 02 May 2024, 09:30 PM
সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত এমভি আবদুল্লাহ দেশে পৌঁছার পর চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙরে পাথর খালাস করবে। জাহাজটি ১২ মে বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
জাহাজ চলচাল পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা মেরিটাইম ট্রাফিকের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দুপুরে এমভি আবদুল্লাহর অবস্থান ছিল ওমান উপসাগরে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে জ্বালানি নিয়ে বুধবার ভোরে এটি দেশের উদ্দেশে রওনা দেয়।
জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জ্বালানি নেওয়ার পর বুধবার ভোরে জাহাজ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। মাঝে আর কোনো বন্দরে এমভি আবদুল্লাহ থামবে না। সরাসরি বাংলাদেশে আসবে।
“এখন যে গতিতে জাহাজ চলছে, তাতে ১২ মে দেশে পৌঁছার কথা রয়েছে। মাদার ভেসেলটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর করবে। সেটা কুতুবদিয়ার আশেপাশে কোথাও হতে পারে। সেখান থেকে লাইটার জাহাজে করে জাহাজে থাকা পাথর খালাস করা হবে।”
জাহাজে ৫৬ হাজার টন পাথর আছে।
মেরিটাইম ট্রাফিকের তথ্যানুযায়ী, ১৪ মে নাগাদ এমভি আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছার সম্ভাব্য সময় দেখানো হচ্ছে।
জলদস্যুদের কবলে পড়ার ৪৪ দিন পর দেশের পথে যাত্রা করে এমভি আবদুল্লাহ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে যাত্রা শুরুর পর একই দেশের ফুজাইরা বন্দরে জ্বালানি নিতে থেমেছিল জাহাজটি।
এর আগে ২৭ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দর থেকে কাছাকাছি দূরত্বের মিনা সাকার বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল এমভি আবদুল্লাহ।
মিনা সাকার বন্দর থেকে জাহাজে পণ্য তোলার পর রোববার দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা সেদিন মালিকপক্ষ জানালেও তা সম্ভব হয়নি। পরে মঙ্গলবার ভোরে রওনা হয় এমভি আবদুল্লাহ।
সোমালি জলদস্যুদের হাতে এক মাসেরও বেশি সময়ের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ শনিবার পর্যন্ত ছিল সংযুক্ত আর আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে। সেখানে জাহাজে থাকা কয়লা খালাস করা হয়।
এরপর শনিবার দুবাইয়ের আল-হামরিয়া বন্দরের জেটিতে থাকা এমভি আবদুল্লাহতে কার্গো (পণ্য) লোড করা শেষ হয়। সেখান থেকে মিনা সাকার বন্দরে যায় জাহাজটি।
তার আগে ২২ এপ্রিল দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে ভেড়ে এমভি আবদুল্লাহ। আগের দিন ২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ ওই বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়।
১২ মে দেশে পৌঁছালে দুই মাস পর দেশের সীমানায় আসবেন এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা। জাহাজ যখন জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল তখন জাহাজে যে ২৩ নাবিক ছিলেন তারা সবাই জাহাজে করেই দেশে ফিরছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছার পর নাবিকদের অবস্থান কী হবে, এ প্রশ্নের উত্তরে দুই কর্মকর্তা বলেন, সচরাচর চুক্তির সময়সীমা পর্যন্ত নাবিকরা জাহাজেই অবস্থান করে থাকেন। কিন্তু যেহেতু এটি একটি বিশেষ পরিস্থিতি মানে এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল এবং এরপর মুক্তি পেয়েছেন নাবিকরা।
“তাই হয়ত নাবিকরা জাহাজ থেকে নেমে, পরিবারের সদ্যসদের সাথে দেখা করতে চট্টগ্রামে চলে আসতে পারেন। এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।”
গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। অস্ত্রের মুখে জাহাজ ও এর ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয় বলে জানায় মালিকপক্ষ।
এর ৩৩ দিন পর ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাত ৩টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে যায়। এরপর গন্তব্য দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় জাহাজটি।
১৪ এপ্রিল দুপুরে এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের দেওয়া ফেইসবুক পোস্টের একটি ছবিতে মুক্ত নাবিকদের পাশে অপারেশন আটলান্টার কমান্ডোদের দেখা যায়।
তারপর ১৫ এপ্রিল বিকেলে ইইউএনএভিএফওআর অপারেশন আটলান্টা মিশন তাদের টুইট বার্তায় এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ছবি প্রকাশ করে।
ওইদিন রাতে কবির গ্রুপ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, নিরাপদ এলাকায় না পৌঁছা পর্যন্ত ইইউএনএভিএফওআরের যু্দ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে।
সোমালি উপকূল পেরিয়ে এডেন উপসাগর হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছে এমভি আবদুল্লাহ। এরমধ্যে মুক্তির পর প্রায় ৪৮০ নটিক্যাল মাইল উচ্চ ঝুঁকির এলাকা পার হতে হয়েছে জাহাজটিকে।