“তারা কেন এটা বুঝছে না, সেটা আমি বুঝতে পারছি না। এটা আমার ক্ষোভ… আমি এ ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারি,” বলেন মেয়র।
Published : 08 Feb 2025, 07:18 PM
চট্টগ্রাম নগরীর জলবদ্ধতা নিরসনের ‘গুরুত্ব’ সরকার না বুঝলে কীভাবে সমাধান হবে, সেই প্রশ্ন রেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন।
শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ না মেলা এবং ঠিক সময়ে প্রকল্প পাস না হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের ত্রাণ দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজমও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জলবদ্ধতা নিরসনে খাল পরিষ্কারে চাহিদা মত বরাদ্দ না পাওয়া এবং অতীতে দেওয়া সরঞ্জাম কেনার প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মেয়র বলেন, “সেন্ট্রাল গভার্নমেন্ট গুরুত্বটা বুঝছে না, সেটা আমাদের খুব দুঃখ করে বলতে হচ্ছে। তারা কেন এটা বুঝছে না, সেটা আমি বুঝতে পারছি না। এটা আমার ক্ষোভ… আমি এ ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারি।”
জলবদ্ধতা নিরসনে প্রাথমিক পর্যায়ে এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা পরিষ্কারের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও সেই টাকা এখনও হাতে আসেনি বলে জানান মেয়র শাহাদাত।
২৯৮ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্পের কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, এমন এমন জায়গায় নালা খাল আছে, সেখানে বড় মেশিন ঢুকতে পারছে না। ছোট ছোট মেশিনগুলো দিয়ে পরিষ্কার করা যায়।
“সাত/আট মাস আগে এ প্রকল্প পাঠানো হলেও সেটা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। আমরা যে বিষয়গুলো এলজিইডিতে পাঠাচ্ছি, তারা যদি গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো না দেখে, তাহলে আমরা কীভাবে প্রবলেমগুলো সলভ করব?”
‘অতীত ভুলে’ সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা রেখে মেয়র বলেন, “আমাদেরকে এটা চিন্তা করতে হবে অতীতে যা হয়ে গেছে, তা গেছে। অতীতে অনেক অনিয়ম হয়েছে। ১৬ সাল থেকে অনিয়ম হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের কাজ সিডিএর কাছে চলে গেছে। আলটেমেটলি এটা সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এটার কোসো বিকল্প নেই।
“আমি যতই নিতে না চাই, এটা আমাকে নিতেই হবে। এটার জন্য আমাদের যে সিস্টেম আছে সেটা দেখা, লোকবল দেওয়া, ইনস্টুমেন্টস দিয়ে অথবা সেখানে ফিজিবিলিটি স্টাডিজ করে আমাদের যে একটা বাজেট সেটা নির্ধারণ করতে হবে।”
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশন কোনো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এখন ‘কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনের টাকায়’ সেই কাজ করাতে হবে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, “স্লুইচ গেইটগুলো রক্ষণাবেক্ষণে প্রচুর টাকা দরকার। স্লুইচ গেইট বলুন আর যাই বলুন সবকিছু সিটি করপোরেশনকে মেনটেইন করতে হবে। এই যে বিশাল বাজেটের মধ্যে সিটি করপোরেশন কোনো বাজেট পায়নি সেটাতো সত্য।
“এ তিন চারমাস আমাদের প্রতিনিয়ত কাজ করতে হবে। সেজন্য বাজেটটা আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন যে কাজগুলো করছি সেগুলো আমার হোল্ডিং ট্যাক্স অমুক তমুক যে ৩২ কোটি আমাদের কর্মচারীদের দিতে হয়, সেখান থেকে দিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।”
মেয়র শাহাদাত মনে করেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বেশি দরকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এর চূড়ান্ত সমাধান বর্জ্যকে ‘সম্পদে’ রূপান্তর করা।
বর্জ্য দিয়ে বিভিন্ন রিসাইকেলিং প্ল্যান্ট তৈরি করার পক্ষে মত দিয়ে নিজেদের কিছু কাজের কথাও বৈঠকে তিনি তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দুটি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে প্রকল্প হিসেবে ২০১৬ সালে নগরীর ৩৬টি খাল নিয়ে কাজ শুরু করে সিডিএ।
সিটি মেয়রের কথা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বাজেটে রাজস্ব খাতের ৫৮ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির কথা তুলে ধরেন।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা উপদেষ্টা পরিষদে ‘অগ্রাধিকার’ পেয়েছে জানিয়ে চাহিদামত বরাদ্দ দেওয়া না গেলেও বরাদ্দের একটা প্রবাহ চলমান থাকবে আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশনের বহুমুখী কাজ করার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, “যেসব পরিবার হান্ড্রেড পার্সেন্ট কমপ্লায়েন্স ফলো করে, তাদের আমরা অ্যাপ্রিশিয়েট বা পুরস্কৃত করতে পারি। যারা মান্য করবে না তাদের তিরস্কার এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারি।
“যত্রতত্র ময়লা ফেলা যাবে না। এটার জন্য মোবাইল কোর্টে ফাইনে না গিয়ে দুই/একদিনের জেল দিতে পারি। কারা ময়লা ফেলছে তাদের ছবি রেখে ডকুমেন্টশনও করা যায়।”
ফারুক ই আজম মনে করেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির পর শাস্তিতে যেতে হবে। এগুলো ধীরে ধীরে প্রয়োগ করা গেলে জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হতে পারে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়া উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভায় জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বন্দর, সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাথেন।