সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করতে পুলিশকে নির্দেশ।
Published : 15 Nov 2022, 07:49 PM
‘ঘুষ দাবি ও মারধরের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ব্যবসায়ী।
নগরীর হালিশহর থানার সবুজবাগের বাসিন্দা হেমায়েত হোসেন মঙ্গলবার চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা করেন।
বিচারক জুয়েল দেব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও ভূমি অধিগ্রহণ শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান মুরাদ, ভূমি সার্ভেয়ার মো. আব্দুল মোমেন, সার্ভেয়ার মো. ইমাম হোসেন গাজী, মোক্তার হোসেন, আবু কায়সার সোহেল ও অফিস সহকারী বেলায়েত হোসেন বুলু।
বাদী হেমায়েত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৬ সালে আমি এবং আমার বন্ধু ফখরুল ইসলাম- দুজনে মিলে পতেঙ্গা এলাকায় কিছু জমি ক্রয় করি। সেই জমি ক্রয়ের রেজিস্ট্রার চুক্তি মূলে বিক্রেতারা আমাদের জমি বুঝিয়ে না দেওয়ায় মামলা হয়। এখনও এ সংক্রান্ত দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন।“
ওই জমির একাংশ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য সরকার অধিগ্রহণ করে। এর ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে তারা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার বরবারে লিখিত আবেদন করেন বলে জানান হেমায়েত।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ১০ নভেম্বর হেমায়েত হোসেন ও ফখরুল ইসলাম এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সার্ভেয়ার মোক্তার হোসেনকে পেয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের ‘গালিগালাজ’ করা হয়।
এরপর সার্ভেয়ার আবু কায়সার সোহেল বিষয়টি ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাকে জানায় এবং ‘তার নির্দেশ মতে’ হেমায়েত ও ফখরুলকে ‘টেনেহিঁচড়ে’ ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে যায়।
হেমায়েত হোসেন বলেন, “ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা তখন জানান, আমরা কোনোভাবেই ক্ষতিপূরণের টাকা পাব না।”
মামলায় হেমায়েত অভিযোগ করেন, সার্ভেয়ার ইমাম হোসেন গাজী তার কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে দুদকে দেওয়ার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে ফখরুল ইসলামকে গলা ধাক্কা দিতে শুরু করে। সেখানকার কর্মকর্তারা হেমায়েত ও ফখরুলকে গলা ধাক্কা দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দেয়।
ওই ঘটনার ভিডিও সেই অফিসের সিসি ক্যামরায় থাকবে মন্তব্য করে তা সংরক্ষণের আবেদন করা হয় মামলায়।
হেমায়েত হোসেন বলেন, “আসামিদের সাথে যোগাসাজোশে জমি বিক্রেতারা অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। আমরা জানতে চাইলে, আমাদের ছবি তুলে রাখে। পুলিশে দিবে, দুদকে দিবে বলে ভয় দেখায়। মারধর করে বের করে দেয়। নিরুপায় হয়ে মামলা করেছি।”
বাদীর আইনজীবী এরফানুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা চাইতে গেলে বাদি ও জমির আরেক ক্রেতাকে আটকে রেখে চাঁদা দাবি করে এবং হুমকি দেয়।
“দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় ঘুষ দাবি, দুর্নীতি, চাঁদা দাবি ও মারধরের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।”
আদেশে আদালত সিসিটিভি ভিডিও পর্যালোচনা এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বা সহকারী পুলিশ সুপার মর্যাদার নিচে নয়- এমন কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী এরফানুল হক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও ভূমি অধিগ্রহণ শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান মুরাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টানেলের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে চার বছর আগে। এতদিন পর কেউ কেন ক্ষতিপূরণ আদায়ে আবেদন করল, তা বোধগম্য নয়।
"যারা অভিযোগ করেছে, তাদের বিষয়টি স্পষ্টভাবে মনে পড়ছে না। কেউ যদি মামলা করে সেটা আদালতের বিচারাধীন বিষয়। এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।"