চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব: চেয়ারম্যান

যে কোনো ধরনের ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য শতভাগ প্রস্তুত, বলছেন বন্দর চেয়ারম্যান।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2023, 03:22 PM
Updated : 25 April 2023, 03:22 PM

চট্টগ্রাম বন্দর এখন যে কোনো ধরনের ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য শতভাগ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন এই বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।

মঙ্গলবার ১৩৬তম বন্দর দিবসের মতবিনিময় সভায় বন্দরের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য দেন তিনি।

শাহজাহান বলেন, “যে কোনো ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর শতভাগ প্রস্তুত। ২০২২ সালে আমরা প্রায় সাড়ে ৩১ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছি। তবে বর্তমান সক্ষমতায় আমরা ৪৫ লাখ হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম। ইয়ার্ডের কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে।”

বাংলাদেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরে ২০২২ সালে ৩১ লাখ ৩৩ হাজার টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪৩৬১টি।

এর আগের বছর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউএস। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৪২০৯টি।

ওই বছর ১১ কোটি ৬৬ লাখ টন পণ্য পরিবহন করা হয়েছে; পরের বছর তা ছিল ১১ কোটি ৯২ লাখ টন।

বন্দর চেয়ারম্যান জানান, লাইটারেজ জেটিগুলো তারা সচল করতে পেরেছেন। ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্ন করায় কর্ণফুলী নদীতে নাব্য বেড়েছে।

এ সময় চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি প্রথমবারের মত ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের (পানিতে নিমজ্জিত অংশের গভীরতা) জাহাজ এমভি কমন অ্যাটলাস ভেড়ানোর দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন এম শাহজাহান।

তিনি বলেন, “আগে ২০০০-২২০০ টিইইউএস ধারণ ক্ষমতার জাহাজ আসত। এখন ৩০০০ বা এরও বেশি টিইইউএস ধারণক্ষমতার জাহাজ আসতে সক্ষম।”

ইউরোপের পথে সরাসরি জাহাজ চালু, অটোমেশন, বার্থিং, টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম চালু এবং কন্টেইনার ম্যানেজমেন্টে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বন্দর সব সক্ষমতায় আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে বলে দাবি বন্দর চেয়ারম্যানের।

পিসিটি, এনসিটি, বে-টার্মিনালে বেসরকারি অপারেটর

দুই বছর তিন মাস দায়িত্ব পালন শেষে বিদায়ের প্রাক্কালে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানান, পতেঙ্গা কন্টেইনটার টার্মিনালটি (পিসিটি) আন্তর্জাতিক বেসরকারি অপারেটর দ্বারা পরিচালনার জন্য সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পিপিপি কর্তৃপক্ষ ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার নিয়োগ দিয়েছে। তারা ট্রানজেকশন স্ট্রাকচার রিপোর্ট দিলে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

এক হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে এই পিসিটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ খাতে ৫৮৪ মিটারের জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের দুটি এবং ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে।

এখান থেকে বছরে সাড়ে চার লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারর্ণের কথা জানান চেয়ারম্যান শাহজাহান।

বন্দরের সক্ষমতা বাড়ার পরেও বিদেশি অপারেটর নিয়োগ কেন- এমন প্রশ্নে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, “এনসিটিতেও দেশীয় বেসরকারি অপারেটর পরিচালনা করে আগের টার্মিনালগুলো। সরকার হয়ত ভেবেছে, নতুন পিসিটিতে যদি বিদেশি অপারেটর দেওয়া যায়, দেশি-বিদেশি দুই ধরনের অপারেটর থাকলে অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে।

“প্রতিযোগিতা না হলে অগ্রগতি হবে না। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও আসবে।”

এদিকে বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালেও (এনসিটি) বিদেশি অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ২৩ মার্চ অর্থনৈতিক বিষয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের ‘নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালসহ ওভারফ্লো কন্টেইনার ইয়ার্ড পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ’ শীর্ষক প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০০৭ সালে ৫৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি জেটি সম্বলিত এনসিটি নির্মাণের পর অপারেটর নিয়োগ জটিলতায় আট বছর পার করে ২০১৫ সালের অক্টোবরে এটির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছিল।

এনসিটির পাঁচটি জেটির মধ্যে দুই ও তিন নম্বর জেটি এককভাবে এবং চার ও পাঁচ নম্বর জেটি (অংশীদারদের নিয়ে) পরিচালনা করে দেশিয় বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক। এনসিটির এক নম্বর জেটিটি শুধু পানগাঁও কন্টেইনার টার্মিনালে নৌপথে কন্টেইনার পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়।

এদিকে এই এনসিটি পরিচালনায় দুবাইভিত্তিক একটি কোম্পানি দীর্ঘদিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে চালু টার্মিনালগুলোর মধ্যে এনসিটি সবচেয়ে বড় উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন ছিল, এখানে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ হলে বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাবে কি না?

জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান শাহজাহান বলেন, “সরকার একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোন টার্মস অ্যান্ড কনডিশনে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ হবে, সেটা ঠিক করতে আমরা আগে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার নিয়োগ করি।

“আশা করি, নেগোসিয়েশনে যারা থাকবেন তারা চিন্তা করবেন- কীভাবে আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগ করলে আমরা লাভবান হব।”

কর্ণফুলী মোহনা থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল প্রকল্পেও তিনটি টার্মিনালের মধ্যে দুটি বিদেশি অপারেটরদের দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বন্দর চেয়ারম্যান শাহজাহান বলেন, “বে-টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় দুটি কন্টেইনার ও একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল হবে। এর মধ্যে কন্টেইনার টার্মিনাল-১ সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি কোম্পানি ও কন্টেইনার টার্মিনাল-২ দুবাইভিত্তিক একটি কোম্পানি পরিচালনা করবে।

“মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করবে। বে-টার্মিনাল পরিচালনায় বিজনেস মডেল কী হবে তা নির্ধারণ করতে আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বে-টার্মিনালের ড্রয়িং-ডিজাইন বন্দরের বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়েছে- ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।”

মতবিনিময় সভায় বন্দরের সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।