সংস্করাধীন কালুরঘাট সেতু পায়ে হেঁটে পার হন রেলমন্ত্রী; সেতুর ওপর নতুন করে কাঠামো স্থাপন ও রেললাইন বসানোর কাজ দেখেন।
Published : 16 Oct 2023, 02:21 PM
কালুরঘাটে নতুন ‘রেল কাম সড়ক সেতুর’ কাজ আগামী বছর শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের অংশ কালুরঘাট সেতুর মেরামত কাজ পরিদর্শনে এসে তিনি এ তথ্য জানান।
সংস্করাধীন কালুরঘাট সেতু পায়ে হেঁটে পার হন রেলমন্ত্রী। এসময় সেতুর ওপর নতুন করে কাঠামো স্থাপন ও রেললাইন বসানোর কাজ দেখেন তিনি।
সেতুর বোয়ালখালী অংশে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, “নতুন একটি ব্রিজ কালুরঘাটে, যেটা দীর্ঘদিনের দাবি এই এলাকার মানুষের, সেটি আমরা আশা করি আগামী বছরে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। এখানে ডাবল লাইন রোড এবং রেল ব্রিজ, ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ থাকবে। সড়কও থাকবে ফোর লেন, একই ব্রিজের উপরে।
“সেটি না হওয়া পর্যন্ত এই ব্রিজটি যাতে আমরা ব্যবহার করতে পারি, সেভাবে এটিকে তৈরি করা হচ্ছে। আগামী ২ তারিখে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেললাইনে ট্রায়াল রানের পূর্বে আশা করি এই কালুরঘাট সেতুতে যে কাজ চলাচলের জন্য, সেটা শেষ হবে। ছোটখাটো কিছু কাজ হয়ত থাকতে পারে।”
কালুরঘাটে বর্তমান সেতুতে নতুন করে পথচারী পারাপারে জন্য ওয়াকওয়ে করা হচ্ছে জানিয়ে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, “একই রাস্তা দিয়ে ট্রেন যায়, বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে; মানুষ হেঁটেও এই ব্রিজটা পার হয়। মানুষের কথা চিন্তা করে পথচারীদের জন্য আলাদা করে একটা লেন করে দিয়েছি।
“মূল ব্রিজের ভিতরে আসতে হবে না। এটা এর আগে ছিল না। আরও ছয় ফুট আলাদা ওয়াকওয়ে করে দেওয়া হচ্ছে। সেটির কাজ হয়ত আরো এক দুই মাস লাগতে পারে। আগে মূল ব্রিজের কাজটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটা হওয়ার পরে ওয়াকওয়ের কাজ শুরু হবে। এটা নতুন একটা সংযোজন।”
সংস্কারের পর বর্তমান কালুরঘাট সেতুতে আরো ২০ বছর ট্রেন চলতে পারবে জানিয়ে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, “দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই কালুরঘাট ব্রিজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি অতিক্রম করেই এই রেলপথ যাবে। এটি অনেক পুরনো ব্রিজ। আমাদের যে লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ছিল, সেটি ১২ টনের ছিল। অনকে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এই ব্রিজটি।
“এ কারণে স্ট্রেংথ যাতে বাড়ানো যায় সেটার জন্য আমরা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। সেটি ইতোমধ্যে কাজ চলছে। এর উপর দিয়ে আমাদের মিটার গেজ যে ইঞ্জিন ১৫ টন চলে, এটি চলতে পারবে। আগামী ২০ বছর এটার উপর দিয়ে ঝুঁকিমুক্তভাবেই ট্রেন চলতে পারবে।”
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের মানুষের যাতায়াতের প্রধান উপায় কালুরঘাট সেতু। ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের পথে যেতে হলে ট্রেনকে প্রায় শতবর্ষী এই সেতুর ওপর দিয়েই কর্ণফুলী নদী পেরোতে হবে।
এই সেতুর পরিবর্তে নতুন সড়ক ও রেলসেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের। বর্তমানে মেরামত কাজের জন্য সেতু বন্ধ থাকায় ফেরিতে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।
কক্সবাজারের পথে রেল যোগাযোগ শুরুর আগে সংস্কার কাজের জন্য গত ১ অগাস্ট তিন মাসের জন্য কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করা হয়। ১৫ অক্টোবর কক্সবাজারের উদ্দেশে চট্টগ্রাম থেকে ট্রায়াল রান হওয়ার কথা থাকলেও কালুরঘাট সেতুতে সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় তা পিছিয়ে ২ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণ সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে।
২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফা সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সে সময়ও অন্যান্য যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছিল।