“কোন পরিবারতন্ত্র, কোন মাফিয়া চক্রের কাছে প্রিমিয়ার জিম্মি করা যাবে না।“
Published : 10 Dec 2024, 01:28 PM
বেসরকারি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) হাতে ‘ফিরে আসবে’ বলে প্রত্যাশা রেখেছেন নগরের মেয়র শাহাদাত হোসেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব বুঝে পাওয়া পর্যন্ত সাবাইকে ‘অপেক্ষা’ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় কথা বলছিলেন শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, "শুরু থেকে চেয়েছিলাম আইনি প্রক্রিয়ায় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারভেন করতে। কিন্তু গত ২-৩ দিন আগে যে পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছে৷ সেখানে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। অনেক অভিভাবক আমার কাছে এসেছেন, আমার বাসায়ও গেছেন। তারা উদ্বিগ্ন।
“সবকিছু সিটি করপোরেশনের পক্ষে আছে। আমরা আইনকে শ্রদ্ধা করি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমরা এটা ফিরে পাব।”
শাহাদাত হোসেন বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আমরা চিঠি দিয়েছি৷ মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোর্টে একটা নিষেধাজ্ঞা আছে, সেটা ভেকেট করতে একজন আইনজীবীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
"আইন আইনের গতিতে চলবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।”
মেয়র জানিয়েছেন, ১৯৯২ সালের আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় করতে ৫ কোটি টাকা জমা দিতে হয়। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় করতে ২০০৩ সালে ৪৭ কোটি টাকা দেয় সিটি করপোরেশন।
“গত ১৬ বছর সিটি করপোরেশন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে৷ কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা নিজের স্বার্থ দেখে। পরে জোর খাটিয়ে পরিবারতান্ত্রিকতা করে এটা দখল নেওয়া হয়েছে। কারো নাম বলতে চাই না, সবাই জানেন।”
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি সিটি করপোরেশনের নিজের টাকায় করা জানিয়ে শাহাদাত আগামীতে এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
“এমন লোকজন দিয়ে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি পরিচালনা করব যারা খুব দক্ষ। আর কোন মাফিয়া চক্র যেন দখল নিতে না পারে৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরপ্রাপ্ত এমন শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে চাই।"
যারা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি দখলে রেখেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "মিনিস্ট্রি থেকে আদেশ আসলে ৬-৭ বছর যারা ছিলেন তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিব।”
সভায় সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, "প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রেশন, ৫০ লাখ টাকার এফডিআর ও জমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নামে করা। পরে যখন মেয়র আ জ ম নাছির সাহেব ছিলেন, এটা নিয়ে আগের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী একটা রিট করেন।
"সেটা বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে। মালিকানা নিয়ে কিছু হয়নি। আদালত মালিকানা নিয়ে সিভিল কোর্টে আবেদন করতে বলেছিলেন। কিন্তু সে আবেদন আগের মেয়র করেননি। একটি পক্ষ দুবৃর্ত্তায়নের মত দখল নিয়েছিল।"
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি৷ সেখান থেকে ইউজিসির মত চায়। ইউজিসি কমিটি করে সব কাজ শেষ করেছে। পূর্ববর্তী রুলিং ভেকেট না হওয়ায় প্রতিবেদন দিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অনেকে পলাতক।
“ভিসিসহ কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন৷ এ মুহূর্তে এক ধরণের শূন্যতা তৈরি হয়েছে৷ একমাত্র জনপ্রতিনিধি মেয়র। শিক্ষার্থী ও অভিভাবদের উদ্বেগ কাটাতে উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।"
এর আগে রোববার অস্থায়ী নগর ভবনে সিসিসি পরিচালনায় স্থানীয় সরকার বিভাগ গঠিত কমিটির বিশেষ সাধারণ সভায়, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি সিসিসির অধীনে পরিচালনার ঘোষণা দেন মেয়র শাহাদাত হোসেন।
আন্দোলনের মুখে শুক্রবার রাতে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. অনুপম সেন পদত্যাগ করেন।
নিজে মেয়র থাকাকালে সিসিসি’র উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে করপোরেশনের ‘হস্তক্ষেপ’ঠেকাতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
ওই রিটের প্রেক্ষিতে দেওয়া রায়ে আদালত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার সিসিসির নেই বলে সিদ্ধান্ত দেয় ২০১৬ সালের জুনে।
পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দেওয়ানী আদালতে যেতে বলেছিল উচ্চ আদালত।
এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের হাতে ছিল।
আরও পড়ুন
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি পরিচালনা করবে সিটি করপোরেশন: শাহাদাত
আন্দোলনের মুখে উপাচার্যের পদ ছাড়লেন অনুপম সেন
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার সিসিসি'র নেই