“ভবিষ্যতে কোনো প্রভাবশালী যেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি জবরদখল করতে না পারে, সে ব্যবস্থাও করা হবে।”
Published : 08 Dec 2024, 10:32 PM
বেসরকারি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) ‘নিয়ন্ত্রণে’ নেওয়ার কথা বলেছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন।
রোববার সিটি করপোরেশনের এক সভায় মেয়র বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং তাদের সুন্দর শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীনে।”
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে গত বুধবার আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ ছিল, উপাচার্য অনুপম সেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তিনি জুলাই বিপ্লবের বিরোধী এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ ছিলেন।
‘সাধারণ শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি’ ব্যানারে প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়টির তিনটি ক্যাম্পাসের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। পরদিন বৃহস্পতিবার জিইসি ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন। এরপর শুক্রবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন অনুপম সেন। পরে কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরও পদত্যাগ করেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশেনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রোববার নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনে জরুরি সভায় বসে সিটি করপোরেশন।
বৈঠকে মেয়র শাহাদাত বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি; চট্টগ্রামের জনগণের সম্পত্তি।
“কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয় দখল করা হয়েছে। এজন্য প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে দখলমুক্ত করতে আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, ইউজিসির চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছি।”
শাহাদাত হোসেন বলেন, “ভবিষ্যতে কোনো মেয়র বা প্রভাবশালী যেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় জবরদখল করতে না পারে, সে ব্যবস্থাও করা হবে। আমরা প্রথমে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত করব; এরপর পর্যায়ক্রমে সংস্কার করব।”
সভায় সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “ইউনিভার্সিটির ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন। একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
“এখানে ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে; নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এটা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। সেসব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমরা আজকের সভা ডেকেছি।”
শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তৎকালীন মেয়র এটার দায়িত্বে ছিলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং এটার সম্পত্তি কেনা থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাপনা কিন্তু সিটি করপোরেশন থেকে করা হয়েছে।
“২০১৫ সাল পর্যন্ত এটা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালনা করেছে। এরপরে যাই হোক এটা দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়েছে। অন্য একটি কর্তৃপক্ষ এটা জোর করে দখল করে নিয়েছিল। আমরা সিটি করপোরেশন থেকে সরকার বরাবর আবেদন জানিয়েছি।”
তিনি বলেন, “এটা শুধু সময়ের ব্যাপার; হয়তো সপ্তাহ দুয়েক লাগতে পারে; এই প্রপার্টি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আবার ফেরত আসছে।”
সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ বলেন, “লিগাল ডকুমেন্টগুলা দেখলাম। আইন বলছে, ইউনিভার্সিটি একটা ট্রাস্টের অধীনে চলবে। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি নিয়ে হাই কোর্টে দুটি মামলা হয়েছে। সেগুলো হয়েছে মূলত ইউজিসির বিভিন্ন চিঠি চ্যালেঞ্জ করে।
“মালিকানার বিষয়ে কোনো মামলা কিন্তু হাইকোর্টে হয়নি। এটা আরো গ্রেটার অথরিটির বিষয়। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পরে ইনিশিয়াল যে পাঁচ কোটি টাকা লগ্নি করতে হয়, জমি দিতে হয়, সবকিছুই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দিয়েছে।”
নিজে মেয়র থাকাকালে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়য়টিতে করপোরেশনের ‘হস্তক্ষেপ’ ঠেকাতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের জুনে দেওয়া রায়ে আদালত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার সিটি করপোরেশনের নেই বলে সিদ্ধান্ত দেয়।
পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দেওয়ানী আদালতের দারস্থ হতে বলেছিল উচ্চ আদালত। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের হাতেই ছিল।
পুরনো খবর:
আন্দোলনের মুখে উপাচার্যের পদ ছাড়লেন অনুপম সেন
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার সিসিসি'র নেই