“জলাবদ্ধতা যে আগামী বর্ষায় শেষ হয়ে যাবে তা না। কিন্তু একটা দৃশ্যমান উন্নতি আমরা দেখতে চাই,” বলেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির।
Published : 18 Jan 2025, 10:52 PM
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতার নিরসনে চলমান প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতির ‘দৃশ্যমান উন্নতি না হলে’ সেগুলো ‘চালিয়ে নেওয়া হবে কি না’, তা ভেবে দেখার কথা বলছেন সরকারের দুই উপদেষ্টা।
এর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রকল্পগুলোকে কাজের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে অগ্রগতির চিত্র পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন তারা।
শনিবার বিকালে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর কাজ পরিদর্শন করেন পরিবেশ ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
তারা নগরীর জামালখান খান, মির্জা খাল ও বাকলিয়ার এক কিলোমিটার এলাকায় সিসিসির বারইপাড়া খালের কাজ ঘুরে দেখেন। কল্পলোক আবাসিক এলাকায় রাজাখালী খালেও যান।
পরে রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। একদিনে সমাধান হবে না। তবে সমাধান হতে হবে। প্রকল্পগুলো যদি দেখি মানুষের কাজে লাগছে তাহলে অব্যাহত থাকবে। আর যদি দেখি কাজে লাগছে না, তাহলে আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে।”
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, “জলাবদ্ধতা যে আগামী বর্ষায় শেষ হয়ে যাবে তা না। কিন্তু একটা দৃশ্যমান উন্নতি আমরা দেখতে চাই। না হলে এসব প্রকল্প আদৌ দরকার আছে কিনা তা আমরা ভেবে দেখব। আরও খাল আছে, সেগুলোর বিষয়ে আমরা আগ্রহী। কিন্তু আগের কাজগুলো দৃশ্যমান কিনা তা দেখতে চাই।”
তিনি বলেন, “শুধু প্রকল্পের পর প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেই হবে না। আগামী মার্চের মধ্যে কাজ করার একটি লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হবে। এর মধ্যে তা অর্জন করতে না পারলে এবার কিন্তু দায় নিতে হবে। যে সংস্থারই হোক, দায় থেকে কেউ রেহাই পাবেন না।”
‘জলাবদ্ধতার পেছনে ৩ কারণ’
নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দুটি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণে শনিবার প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেন তিন উপদেষ্টা।
পরে পানিসম্পদ উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, “তিন কারণে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রকট হয়েছে। ভূমি অফিসের লোকদের যোগসাজশে খালের জায়গা ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে বড় বড় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ করার জন্য অবৈধ ভবনগুলো এখন ভাঙতে হচ্ছে।
“দ্বিতীয় সমস্যা খালের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চট্টগ্রামে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। বৃষ্টির সময় পাহাড় কাটার মাটি ও বালু খাল ও নালায় এসে পড়ে। এতে খাল ও নালাগুলো দ্রুত ভরাট হয়ে যায়। ফলে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া পলিথিন ও প্লাস্টিকের কারণেও নালা-নর্দমা ও খাল ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। তিনটিই জটিল সমস্যা।”
তিনি বলেন, “প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে সমন্বয়ের একটা বড় ব্যাপার আছে। সবগুলো সংস্থাকে নিয়ে বসব। বুঝার চেষ্টা করব, এই প্রকল্পগুলো থেকে এই বছর কী সুফল পাব? আগামী বছর ও এর পরের বছর কী সুফল পাব।”
‘জলাবদ্ধতা মনুষ্যসৃষ্ট’
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতাকে ‘মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির।
তার কথায়, এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যা নয়। নগরবাসী খাল দখল করে ভবন নির্মাণ করেছেন। খালকে ময়লা ফেলার জায়গা বানানো হয়েছে।
“এসব নগর প্রশাসনের লোকজন, জেলা প্রশাসনের লোকজনের নিরব বা সরব সমর্থনে করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। জলাবদ্ধতার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মামলা ও ভূমি অধিগ্রহণ কিছু ব্যাপার রয়েছে, তা দ্রুত সমাধান করা হবে।”
জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরকারের চার উপদেষ্টা সভা করবেন।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, “কালকে (রোববার) সবার সঙ্গে বসব। সেখানে কর্মপরিকল্পনা আমরা করব। তা সংস্থাগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
“আগের সভাগুলোর চেয়ে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে। কেউ যারা কাজ করতে ব্যর্থ হলে তাদেরকে এটার দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো ধরনের অযুহাত শোনা হবে না। ব্যর্থতার জন্য খেসারত তাদের দিতে হবে।”
উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়নে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে এবং কীভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করব। জলাবদ্ধতার জন্য নগরবাসীরও দায় রয়েছে।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম ও প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস উপদেষ্টাদের প্রকল্প পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন।