সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে ‘সাংবাদিকতার নামে রাজনীতি করা’ সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী।
Published : 31 Mar 2023, 04:16 PM
বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেকের ‘পছন্দ হয় না’ বলে কিছু কিছু পত্রিকায় ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেতিবাচক প্রতিবেদন’ প্রকাশ করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের বাড়িতে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তার এমন মন্তব্য আসে।
হাছান মাহমুদ বলেন, “অব্যাহতভাবে দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্য কমছে, দেশের সমৃদ্ধির সাথে প্রতিটি মানুষের সমৃদ্ধি এবং স্বচ্ছলতা এসেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেকের পছন্দ হয় না।
“সেজন্য দেখা যায়, কিছু কিছু পত্রিকায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেগেটিভ রিপোর্ট করা হয়। বিদেশ থেকে চিহ্নিত ব্যক্তি বিশেষ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখা যায়নি।”
পদ্মা সেতুর উদাহরণ টেনে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আপনাদের মনে আছে, যখন বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল, তখন কিছু বড় পত্রিকায় ব্যানার হেডিং দিয়েছিল ‘পদ্মা সেতু আর হচ্ছে না।’ কিন্তু বাংলাদেশে পদ্মা সেতু হয়েছে নিজেদের টাকায়।”
এদের বিষয়ে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা ভূমিকা রাখে। এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম মানুষকে সঠিক তথ্য পেতে এবং সঠিক চিন্তা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। একইসাথে মানুষকে বিশ্ব পরিস্থিতিও জানাতে সহায়তা করে।”
প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের গ্রেপ্তার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২ দেশের মিডিয়া জোটের বিবৃতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “১২টি দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।
“ভারতের দিকে তাকানোর অনুরোধ করি। সেখানে কয়েকদিন ধরে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি করা হয়েছে, সেখানে কি এ ধরনের বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ, বিবৃতি দিয়েছে? দেওয়া হয়নি। কারণ ভারত বড় দেশ, ভারতের শক্তি সামর্থ্য বেশি, সেজন্য সেখানে সেই সাহস দেখাতে পারেনি।”
মন্ত্রী বলেন, “কূটনীতিকদের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো সমীচীন নয়। প্রয়োজনে কূটনীতিকদের আচরণ সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে।
“আমাদের বাজেটের জন্য ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে কারো দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াই না। বরং আমাদেরকে সাহায্য দেওয়ার জন্য তারা অর্থের ঝুলি নিয়ে আমাদের কাছে আসে এখন। আমাদেরকে খাটো করার সময় চলে গেছে।”
সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ‘নিশ্চিত করেছে’ দাবি করে তিনি বলেন, “এই স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এবং তা অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা মনে করি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সাথে রাষ্ট্রের বিকাশ, গণতন্ত্রের বিকাশ জড়িত।
“কিন্তু একইসাথে আমাদের সম্মিলিত দায়িত্বশীলতাও আছে। স্বাধীনতার নামে যদি আমরা কেউ অপসাংবাদিকতা করি, তাহলে দেশের আপামর জনগণ এবং সাংবাদিক সমাজ নিশ্চয় সেটিকে সমর্থন করে না। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার নামে রাজনীতি করা, সেটি যে সমীচীন নয়, সেটিও নিশ্চয় আপনারা আমার সাথে একমত হবেন।”
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চাওয়া ‘দেশবিরোধী’
কূটনীতিকদের সাথে ইফতারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কূটনীতিকদের সহায়তা কামনা করেন, এ বিষয়েও কথা বলেন হাছান মাহমুদ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমরাতো প্রথম থেকেই বলে আসছি, তারা জনগণের কাছে যায় না, তারা বিদেশি কূটনীতিকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পদলেহন করে। আমি আশা করেছিলাম তারা দুঃস্থ মানুষের সাথে ইফতার করবে, সেটি না করে ফাইভ স্টার হোটেলে বসে কূটনীতিকদের সাথে ইফতার করেছে।
“সেখানে গিয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য অনুনয় বিনয় করেছে। আসলে দোষটা কূটনীতিকদের চেয়েও আমাদের অনেকের অনেক বেশি। কারণ আমরা গিয়ে তাদের হাতে পায়ে ধরি একটু কিছু বলার জন্য। এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য। এটি আসলে দেশবিরোধী, এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শামিল।”
পণ্যের কোনো সংকট নেই
হাছান মাহমুদ বলেন, “বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে করোনা মহামারী এবং বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, অর্থনীতিক সমৃদ্ধি যেভাবে অব্যাহত আছে, এটি পৃথিবীর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রশংসা করছে।
“সম্প্রতি ব্লুমবার্গ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে তারা বলেছেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কারণে আগামী নির্বাচনেও জননেত্রী শেখ হাসিনা জয়লাভের সম্ভাবনা এবং তিনি চতুর্থ মেয়াদের মত নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।”
পরিকল্পনা মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে হাছান মাহমুদ বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে দারিদ্রসীমার নিচে ছিল ৪১ শতাংশ মানুষ, কিছুদিন আগে সেটা কমে ২০ শতাংশে নেমেছিল। মহামারী এবং বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও তা কমে এখন ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যের হার ১৭ শতাংশ।
“আজকে বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে যেখানে ইউকে এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পণ্যের সঙ্কট হয়েছে, আমাদের দেশে কোনো পণ্যের সঙ্কট হয়নি। ইউরোপের সুপারমার্কেটে এক লিটারের বেশি ভোজ্যতেল, ছয়টার বেশি ডিম কিনতে দেওয়া হয় না একসাথে, কারণ সেখানে পণ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের দেশে পণ্যের মূল্য বেড়েছে, কিন্তু পণ্যের সঙ্কট তৈরি হয়নি। এখানেই হচ্ছে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য।”
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।