চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় চিকিৎসা শিক্ষার মান ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টিও আসে আলোচনায়।
Published : 21 Dec 2024, 09:24 PM
দেশের স্বাস্থ্যখাতকে সংস্কার করতে হলে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স ও যন্ত্রপাতির সংকট নিরসনের পাশাপাশি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ এসেছে সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায়।
শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় কথা বলছিলেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সভায় তারা এ খাতের প্রান্তিক পর্যায় থেকে সংস্কার শুরুর তাগিদ দেন। চিকিৎসা শিক্ষার মান ও চিকিৎসকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধার বিষয়েও কথা বলেন তারা।
সভায় স্বাস্থ্য খাতের কমিশনের চেয়ারম্যান জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ বলেন, মতবিনিমিয় সভায় উঠে আসা পরামর্শ গ্রহণ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।
বেসরকারি অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ল্যাবরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক আকরাম হোসেন বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো ছাড়া কোনো সংস্কার হবে না। আফ্রিকায় স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের ১১ ভাগ রাখা হলেও বাংলাদেশে মাত্র ৫ ভাগ।
নাক, কান গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, সরকারি হাসপাতালে এক হাজার শয্যার বিপরীতে রোগী থাকে সাড়ে তিন হাজার। এভাবে স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন অসম্ভব। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট নিরসন করতে হবে।
দেশে চিকিৎসক ও নার্স তৈরি হলেও মানসম্মত তৈরি হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।
প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মোতালেব দেশে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাত অবহেলিত থাকার কথা তুলে ধরে প্রশ্ন রাখেন, যা উন্নয়ন হচ্ছে তা কতটুকু মানসম্মত?
জেলায় জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তৈরি হলেও এসব প্রতিষ্ঠানে চাহিদা অনুপাতে শিক্ষক ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে কি না তা ভেবে দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি। তিনি চিকিৎসা শিক্ষার পাঠ্যক্রম বিদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হালনাগাদ করার কথা বলেন।
পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসা খাতে নজরদারি রাখারও পরামর্শ দেন ডা. মোতালেব।
দেশে গড়ে ওঠা অনেক হাসপাতাল মানসম্মত নয় মন্তব্য করে অফথামোলজিস্ট সাইফুদ্দিন মো. তারিক সেগুলোর মান বাড়াতে আধা সরকারি করার পরামর্শ দেন।
পাশাপাশি মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মুখস্ত বিদ্যার ওপর ভর করে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। বিষয় নিয়ে ভাবার পরামর্শও দেন তিনি।
চিকিৎসক সাইফুদ্দীন শিক্ষানবীশ চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপ এক বছর শহরে এবং এক বছর বিভিন্ন উপজেলায় করার পরামর্শ দেন।
চিকিৎসা সেবায় চিকিৎসক ও নার্সরা ভালো কাজ করছে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওমর ফারুক ইউসুফ চিকিৎসকদের ওয়ার্ডেও কাজ করতে হয়, আবার ক্লাসও নিতে হয় এক্ষেত্রে সমতা খুঁজে বের করতে হবে।
এছাড়া মত বিনিময় সভায় চিকিৎসকরা কর্মস্থলে নিরাপত্তা, পদোন্নতি, ক্যাডার ভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণ, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংস্কার ও দ্রুত কাজের জন্য চিকিৎসকদের বিভাগওয়ারী টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
সভায় নার্সিং পেশার সঙ্গে জড়িতদের নিরাপত্তা, পদোন্নতি, বিসিএস পরীক্ষায় নার্সিং ক্যাডার যুক্ত করা এবং কলেজগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী মো. আল রিদুয়ান।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার নিয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো রোগী কিংবা স্বজন না থাকায় প্রশ্ন তোলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি জসীম উদ্দিন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন নাম হলেও অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এটি ‘মেডিকেল শিক্ষা সংস্কার কমিশন’। যে যার যার স্বার্থ নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু যারা সেবা নিচ্ছেন তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের অনেক চিকিৎসক সেবা দিতে চাননি অভিযোগ করে তিনি চিকিৎসকদের দলীয় রাজনীতি বন্ধ করার পরামর্শ দেন।
বেসরকারি ডায়াগনেস্টিক সেন্টারগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন দাম, রিপোর্টের ভিন্নতার বিষয়েও কথা বলেন তিনি।
হাসপাতালের রোগীদের অভিযোগ ও প্রয়োজনীয় বিষয়াদি জানাতে হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ পরামর্শ দেন জসীম।
রোগীদের সঙ্গে কর্মচারীদের আচরণ, মেডিকেলকেন্দ্রীক অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট ভাঙারও তাগিদ দেন তিনি।
কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনালের মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অং সুই প্রু মারমা, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ এবং প্রতিনিধিরা।