“যে পদ্ধতিতে প্রকল্প এলাকার পাহাড়গুলোকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তা আগে কখনো বাংলাদেশে হয়নি,” বলেন হাসপাতালের পরিচালক।
Published : 08 Jan 2025, 08:22 PM
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বার্ন ইউনিট পাহাড় ‘রক্ষা করেই’ নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আশ্বস্ত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ও চীনের প্রকৌশলী।
বুধবার ‘চায়না এইড প্রজেক্ট অব বার্ন ইউনিট অব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হসপিটাল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই আশ্বাস মেলে।
সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে হাসপাতাল ভবনের পশ্চিমে গোয়াছি বাগান এলাকায় প্রকল্পের নির্ধারিত স্থানে পাহাড় কেটে জমি প্রস্তুতের সংবাদ প্রকাশের পর বুধবার এই সভা হলো।
সভায় চট্টগ্রাম মেডিকেল, প্রকল্পের চীনা কর্মকর্তা, গণপূর্ত অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ (বেলা) বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণের কাজ চলতি মাসে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সভায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, “এই প্রকল্পের ১৮০ কোটি টাকা চীন দিচ্ছে। বাংলাদেশ দিচ্ছে ১০৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু চীনে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর অর্থবছর হিসাব করা হয়। তাই আমাদের কাজ শুরু করে দিতে হয়েছে। সে কারণে পাহাড়ি ও সমতল এলাকায় কাজ শুরু হয়।”
পাহাড় কাটার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যে পদ্ধতিতে প্রকল্প এলাকার পাহাড়গুলোকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তা আগে কখনো বাংলাদেশে হয়নি। পাহাড় ছেঁটে ঢালু করা হচ্ছে। তাতে কলাম পদ্ধতিতে কাঠামো করে ঘাস লাগানো হবে। এছাড়া গাছপালাও লাগানো হবে।
“এখানে পাহাড় এবং পাহাড়ের পাশে যে ভবন তৈরি হবে সেটা রক্ষার কথা মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। তবে পরিবেশগত ছাড়পত্র অনুমোদনের আগে কাজ করা উচিত হয়নি। এখন আমরা পাহাড়ে কাজ বন্ধ রাখব। তবে সমতলে কিছু কাজ চলবে। পাহাড়ের আকৃতির পরিবর্তন হবে না। উচ্চতা ঠিক থাকবে।”
সভায় তসলিম উদ্দীন প্রকল্প নকশার ছবি এবং পাহাড় কীভাবে রক্ষা করা হবে সেই চিত্র প্রদর্শন করেন।
সভা শেষে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম খান বলেন, “এটা সয়েল নেইলিং, এখানে পাহাড়ের মধ্যে পাইল করা হবে এবং কলাম বিম দিয়ে ঘিরে রাখা হবে। পাহাড়টা কোনোভাবেই পড়বে না।
“এই টেকনোলজি চট্টগ্রামে আগে ইউজ হয়নি। চীনাদের সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করছি। চেষ্টা করব তাদের কাছ থেকে এই টেকনোলজি হায়ার করতে। চট্টগ্রামে সবসময় যে বাটালি হিলের পাহাড় ভেঙে যাচ্ছে সেটা প্রতিরোধে নেইলিং করে ঘিরে দেয়া যায় এই প্রক্রিয়ায়।”
এ সময় প্রকল্পের চীনা প্রকৌশলী মেই ইউ চ্যা বলেন, “এই পাহাড়টা দেখার পরে ভেবেছি, এর পাশে ভবন নির্মাণ নিরাপদ নয়। কারণ ভবনের বেইস করতে গেলে পাহাড়টি ধসে পড়বে। এই পাহাড়ের মাটি খুবই নরম। মাটিটা পানির স্পর্শ পেলেই নিচের দিকে চলে আসবে।
“তখন চিন্তা করলাম, সয়েল নেইলিং করে কিভাবে করা যায়। এজন্য পাহাড়টি ড্রেসিং করে এর উপর কলাম স্ট্রাকচার করে ঢালাই দিয়ে এর ওপর আবার মাটি দিয়ে ঘাস রোপন করে দেওয়া হবে, যাতে পাহাড় ধসে না আসে। ড্রেনেজ সিস্টেম থাকবে যাতে পানি ড্রেন দিয়ে চলে যেতে পারে।”
বেলা চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার ফারমিন এলাহি বলেন, “এ বিষয়ে আগে বৈঠক হয়েছিল। তারা বলেছিলেন, পাহাড় সংরক্ষণ করে কাজ করবেন। যে কোনো প্রকল্প কাজ শুরুর আগে এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট (ইআইএ) করতে হয়। উনাদের সেটা নেই।
“চমেক এর মত দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের কাছে এটা আশা করা যায় না। আশা করি উনারা ইআইএ করেই কাজ করবেন। পাহাড়ে গাছ লাগাবেন বলেছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশিয় প্রজাতির গাছ লাগাবেন আশা করি।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত। চলতি মাসের মধ্যে ভৌত কাজ শুরু হবে আশা করি।
“ভবন থেকে মেডিকেল যন্ত্রপাতি পর্যন্ত প্রকল্পের সব কাজ চীন সরকার করছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা মাত্র কয়েকদিন আগে এসেছে।”
বার্ন ইউনিটের নির্মিতব্য ভবন ও পাহাড় রক্ষায় ড্রেসিং চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পাহাড়ের মেজারমেন্ট একটুও কমবে না। পরিবেশকে রক্ষা করতেই তারা আগে ভবন না করে পাহাড় রক্ষায় স্লোপ করছে। এই টেকনোলজি বাংলাদেশে আগে দেখিনি। তারা পরিবেশে জোর দিয়েছে।”
সভায় প্রকল্পটিতে কর্মরত দুই চীনা প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক রাজীব পালিত ও রুমা ভট্টাচার্য এবং বার্ন ইউনিটের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রফিক উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের মে মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ২৮৫ কোটি টাকার ব্যয়ের এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০২৩ সালের ১৩ মার্চ চীন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি হয়।
একনেকের সায় পেল চট্টগ্রামের বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট প্রকল্প
চট্টগ্রামে বার্ন হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু 'শিগগিরই'
চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি .