মামলার বাদী ২০১৫ সালে ঘটনার সময় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
Published : 03 Sep 2024, 07:40 PM
অপহরণ করে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, মারধর ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে নয় বছর পর মামলা করেছেন একজন চিকিৎসক।
মঙ্গলবার অভিযোগটি চট্টগ্রামের রাউজান থানায় মামলা হিসেবে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হারুন। এর আগে সোমবার আদালতে অভিযোগ করা হয়।
মামলার বাদী ডা. জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গুজরা গ্রামের বাসিন্দা।
২০১৫ সালে ঘটনার সময় তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
মামলার আসামিরা হলেন- রাউজান থানার সেসময়ের এসআই টোটন মজুমদার, স্থানীয় পাইনিয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. ফজল করিম ওরফে বাবুল, পরিচালক মনজুর হোসেন, রাউজান থানার এসআই শাফায়েত আহমদ, রাউজান থানার সেসময়ের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং পাইনিয়ার হসপিটালের সুপারভাইজার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী নাজমুল হাসান সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অপহরণ করে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও মারধরের অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি রাউজান থানায় মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।”
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া পথেরহাট এলাকায় অ্যাপোলো ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখতেন জাহাঙ্গীর আলম।
উত্তর বিএনপির কমিটিতে নাম থাকায় তাকে ক্রসফায়ারের হুমকি দেন রাউজান থানার সেসময়ের এসআই টোটন মজুমদার। বাঁচতে চাইলে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলা হয় তাকে।
এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনার আগে পথেরহাট এলাকার ওই চেম্বারে গিয়ে আসামি এসআই টোটন মজুমদার, এসআই শাফায়েত আহমদ ও ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বাদীকে অপহরণ করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল দুপুরে এসআই টোটন মজুমদার অজ্ঞাতনামা পাঁচ ছয়জনকে সাথে নিয়ে সাদা পোশাকে আমাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করে।”
মামলার তথ্য অনুযায়ী, সেসময় এসআই টোটন মজুমদার বাদীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে চিৎকার না করতে বলেন। পরে সঙ্গে থাকা অজ্ঞাত আসামিরা তার চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মারধর করেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমার খোঁজ না পেয়ে বন্ধু-বান্ধবরা পুলিশের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে। তুলে নেয়ার ৮ ঘণ্টা পর আমাকে থানায় হাজির করা হয়।”
সেদিনই স্থানীয় পাইনিয়ার হসপিটালের সুপারভাইজার মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ডা. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে রাউজান থানায় একটি মামলা করেন।
ওই মামলার অভিযোগ করা হয় ডা. জাহাঙ্গীর আলম পাইনিয়ার হসপিটালের গাড়ি চালক রাসেল শেখকে মারধর করে তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছেন।
পরে রাসেল শেখ আদালতে হলফনামা দিয়ে জানান, তিনি ডা. জাহাঙ্গীর আলম নামের কাউকে চেনেন না এবং তার কাছ থেকে কেউ টাকাও ছিনিয়ে নেয়নি। এরপর গত ২৯ আগস্ট আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়।
ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, “পুলিশের মত একটি পোশাকাধারী বাহিনীর সদস্যরা কীভাবে একজনকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবি করে এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পারে? আমি এর বিচার চাই।
“মিথ্যা মামলা হওয়ার পর থেকে গত ৯ বছর আমি আর ওই চেম্বারে বসে রোগী দেখতে পারিনি। কেন, কার নির্দেশে পুলিশ এবং অন্যান্য আসামিরা আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে, সেটার তদন্ত হোক। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক।”