সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “যারা সাধারণ শিক্ষার্থী তাদের হাতে তো ককটেল থাকার কথা না, লাঠিও থাকে না।”
Published : 17 Jul 2024, 08:00 PM
চট্টগ্রামে সরকার দলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘাতের নেতৃত্বে ছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা; তাদের সাথে যুক্ত হয়েছিল ছাত্রদলের কিছু কর্মী।
সংঘর্ষের পর বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি যাচাইয়ের পর পুলিশ কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবারের মারামারিতে জামায়াত-শিবিরের ও বিএনপির কিছু সংশ্লিষ্টতা পুলিশ পেয়েছে। বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “কয়েকদিন ধরে আন্দোলন হয়েছে সেগুলো শান্তিপূর্ণ ছিল। তাদের হাতে তো কিছু ছিল না। কিন্তু গতকাল (মঙ্গলবার) ককটেল নিয়ে হেঁটেছে। যারা সাধারণ শিক্ষার্থী, তাদের হাতে তো ককটেল থাকার কথা না, লাঠিও থাকে না।”
টানা কয়েক দিনের আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার বিকালে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সরকার সমর্থক দলের কর্মীরা। মুরাদপুর থেকে ষোলশহর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া এ সংঘর্ষ সহিংসতায় রূপ নিলে এক পথচারি ও দুই কলেজ ছাত্র তিন জন নিহত হন।
নিহত দুই কলেজ ছাত্রের মধ্যে একজন ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। অপরজন ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমদ শান্ত (২০)।
ফয়সালের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করা না গেলেও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, তিনি ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
সংঘর্ষ চলার সময় মুরাদপুরের বেলাল মসজিদের পাশে পাঁচ তলা একটি ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফেলে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনের ছাদে আটকে পড়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রক্তাক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাদে পড়ে আছেন।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কর্মীদের ওই ভবনে আটকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে মাথায় এবং হাতে-পায়ে। একজনের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। পাঁচ-ছয়জনকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
“কোটার বিরোধিতার নামে ইসলামী ছাত্র শিবির ও ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা এই হামলা করেছে। কয়েক ঘণ্টা আহতরা ওই ভবনে আটকে ছিল। পুলিশকে বারবার বলার পরেও তারা উদ্ধারে এগিয়ে যেতে দেরি করেছে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।”
মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপালন করা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল আগে। মঙ্গলবার পরিকল্পিতভাবে শিবির নেতাকর্মীরা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। তাদের সাথে ছিল ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী।
সরকার দলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধাওয়া ও হামলার পর যেভাবে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থী হলে পুনরায় সংগঠিত হয়ে পাল্টা হামলা করত কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের অনেকেই হাতে লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে পাল্টা হামলা করেছেন।
তারা বলেন, বেলাল মসজিদের পাশের ভবন থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা সরকার সমর্থকদের হাসপাতালে নেয়ার পথেও দফায় দফায় হামলা করা হয়েছে রিকাশা থামিয়ে।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জহিদুল ইসলাম জয় (২৩) নামের এক যুবকসহ দুইজনকে আটক করেছে। জাহিদুলের কাছে থেকে মারামারিতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সম্পৃক্ততার বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গ্রেপ্তার জাহিদুল ইসলাম জয় ইসলামী ছাত্র শিবির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের আন্তর্জাতিক ও ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি মঙ্গলবার মুরাদপুর এলাকায় সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।
তিনি আরও বলেন, জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইলে তারা বেশকিছু তথ্য পেয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে এবং বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেনেছে মঙ্গলবারের আন্দোলনের ‘নিয়ন্ত্রণ’ ছিল শিবিরের হাতে।
নিহত শান্ত শিবির কর্মী?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার জাহিদুলের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে ‘গাঙচিল’ নামের একটি গ্রুপের খোঁজ পাওয়া গেছে। সেখানে একজন লিখেছেন ‘আমাদের ওয়ার্ড সভাপতি ফয়সাল আহমেদ শান্ত ভাই, আল্লাহ ভাইকে শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।’
পরবর্তীতে ওই গ্রুপেই একজন একটি মেসেজ ফরওয়ার্ড করেছেন। সেখানে লেখা আছে ‘ফয়সাল আহমেদ শান্ত ভাইয়ের পরিচয় বাইরে প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে’।
শনাক্ত হয়নি সশস্ত্র যুবকরা
এদিকে মঙ্গলবারের সহিংসতায় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে কয়েকজন যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। এর মধ্যে মাথায় হেলমেট পরা এক যুবককে গুলি ছুড়তেও দেখা গেছে।
সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, অস্ত্রহাতে যারা ছিল তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।
চার মামলায় সাড়ে ছয় হাজার আসামি
মঙ্গলবারের সহিংসতার ঘটনায় সাড়ে ছয় হাজার জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ ও খুলশী থানায় চারটি মামলা হয়েছে।
পাঁচলাইশ থানায় হওয়া তিনটি মামলার মধ্যে হত্যা, দাঙ্গা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়া, বিষ্ফোরক আইনে করা দুইটি মামলার বাদি পুলিশ। অপর একটি মামলা করেছেন আহত এক শিক্ষার্থীর মা।
সংঘর্ষে আহত সাহেদ আলী নামে এক ব্যক্তি খুলশী থানায় এক জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০০/৬০০ জনকে আসামি করে আলাদা একটি মামলা করেছেন।
আরও পড়ুন
সংঘর্ষ: চট্টগ্রামে চার মামলায় আসামি সাড়ে ৬ হাজার
হোটেলে ভাত খেয়ে ফিরছিলেন কাজে, সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ গেল ফারুকের
‘এ ছাত্রলীগ করে, একে মেরে ফেল’