আইসিসি বর্ষসেরা পুরুষ ক্রিকেটারের লড়াইয়ে আছেন এই চার তারকা।
Published : 05 Jan 2024, 05:16 PM
প্যাট কামিন্সের নিঃসন্দেহে স্বপ্নের মতো কেটেছে ২০২৩ সাল। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে তো তিনি বরাবরই উজ্জ্বল। গত বছরটা তার জন্য বিশেষ নেতৃত্বের কারণে; অস্ট্রেলিয়াকে যে এনে দিয়েছেন বেশ কয়েকটি শিরোপা। অনুমিতভাবেই আইসিসি বর্ষসেরা পুরুষ ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান এই পেসার।
স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফির লড়াইয়ে কামিন্সের সঙ্গী তার সতীর্থ ট্রাভিস হেড, ভারতের ব্যাটিং গ্রেট ভিরাট কোহলি ও স্পিনিং অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা।
মেয়েদের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার র্যাচেল ফ্লিন্ট ট্রফির সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছেন শ্রীলঙ্কার চামারি আতাপাত্তু, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশলি গার্ডনার, ইংল্যান্ডের ন্যাট সিভার-ব্রান্ট ও অস্ট্রেলিয়ার বেথ মুনি।
এই দুই সংক্ষিপ্ত তালিকা শুক্রবার প্রকাশ করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থা।
প্যাট কামিন্স
গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৪ ম্যাচে ৫৯ উইকেট নেন কামিন্স। যেখানে টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২ শিকার ধরেন ১১ ম্যাচে; ইনিংসে ৫ উইকেট তিনবার ও ম্যাচে ১০ উইকেট একবার। ওয়ানডেতে ১৩ ম্যাচে নেন ১৭টি। ২০২৩ সালে কোনো টি-টোয়েন্টি খেলেননি এই অস্ট্রেলিয়ান। দুই সংস্করণ মিলিয়ে ব্যাট হাতে করেন ৪২২ রান।
কামিন্সের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ছাপিয়ে আলোচনায় তার নেতৃত্ব। গত বছর এই পেসারের অধিনায়কত্বে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের আগ্রাসী ‘বাজবল’ কৌশলের বিপক্ষে ধরে রাখে অ্যাশেজ।
অধিনায়ক কামিন্সের সবচেয়ে বড় সাফল্য মেলে বছরের শেষ দিকে। অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা ছিল তার বুদ্ধিদীপ্ত ও তীক্ষ্ণ নেতৃত্বের। সব কিছু মিলিয়ে বর্ষসেরা লড়াইয়ে তার থাকা অবধারিতই ছিল।
ভিরাট কোহলি
এশিয়া কাপ ছাড়া গত বছর কিছুই জেতেনি ভারত। তবে কোহলি ঠিকই করে যান নিজের কাজ। ব্যাট হাতে বইয়ে দেন রানের স্রোত। সব সংস্করণ মিলিয়ে ২০২৩ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৮ রান করেন তিনি ৩৫ ম্যাচে; তার ৮ সেঞ্চুরিই বছরে সবচেয়ে বেশি।
ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল ছিলেন কোহলি, করেন ৬ সেঞ্চুরি। কিংবদন্তি সাচিন টেন্ডুলকারের ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ছাড়িয়ে এই সংস্করণে এখন সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি তার, ৫০টি। বিশ্বকাপে তো কোহলি ছিলেন প্রায় অপ্রতিরোধ্য। ৭৬৫ রান করে গড়েন বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড।
ট্রাভিস হেড
২০২২ সালের সেরা ওয়ানডে দলে থাকা হেড গত বছর নিজেকে তুলে নেন নতুন উচ্চতায়। হাতের চোট কাটিয়ে বিশ্বকাপে যে পারফরম্যান্স করেন তিনি, তা ছিল দেখার মতো। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ফেরার ম্যাচে খেলেন ১০৯ রানের ইনিংস। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক ছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার, করেন ১৩৭ রান। সেমি-ফাইনালে তার ব্যাট থেকে আসে ৬২ রান। ম্যাচ সেরা হন তিনি শেষ দুই ম্যাচেই।
গত বছর ওয়ানডেতে করা তার ৫৭০ রানের ৩২৯ রানই আসে বিশ্বকাপে। আসরে তার স্ট্রাইক রেটও ছিল দুর্দান্ত, ১২৭.৫১। টেস্টেও ব্যাট হাতে সাফল্য পান হেড। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রান করে বড় ব্যবধান গড়ে দেন তিনি। ম্যাচটি পরে ২০৯ রানে জেতে অস্ট্রেলিয়া।
২০২৩ সালে ৪২ গড়ে ৯১৯ টেস্ট রান করেন হেড। গত বছর তিনি টি-টোয়েন্টি খেলেননি একটিও।
রবীন্দ্র জাদেজা
হাঁটুর চোটের কারণে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে মাঠের বাইরে ছিলেন জাদেজা। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি দিয়ে ফিরেই মেলে ধরেন নিজেকে। ২২ উইকেট নিয়ে ভারতের সিরিজ জয়ে রাখেন বড় অবদান। গত বছর টেস্টে মোট ৩৩ উইকেট নেন জাদেজা ৭ ম্যাচে।
ওয়ানডেতেও বেশ ভালো বোলিং করেন তিনি। ২৬ ওয়ানডেতে ধরেন ৩২ শিকার। যেখানে বিশ্বকাপে নেন ১৬ উইকেট, ২৪.৮৭ গড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ম্যাচে ওয়ানডের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৩৩ রানে নেন ৫ উইকেট ।
আর ব্যাট হাতে গত বছরে সব সংস্করণ মিলিয়ে ৬১৩ রান করেছেন জাদেজা।
চামারি আতাপাত্তু
গত বছর ২৪ ম্যাচে ৮৮৫ রান করেন আতাপাত্তু। যার মধ্যে ৪৭০ রানই করেন তিনি টি-টোয়েন্টিতে। অফ স্পিনে ২০২৩ সালে নেওয়া তার ৯ উইকেটের ৮টিই টি-টোয়েন্টিতে।
অ্যাশলি গার্ডনার
সব সংস্করণেই গত বছর ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দেন গার্ডনার। ২৯ ম্যাচে ৪৮১ রান করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার নেন ৫৮ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের ২০২৩ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। ১০ উইকেট নেন, সঙ্গে করেন ১১০ রান। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার ওঠে তারই হাতে। টি-টোয়েন্টিতে তার প্রাপ্তি ১৭ উইকেট, সঙ্গে ২৩৪ রান করেন তিনি।
২০২৩ সালে টেস্টেও বল হাতে ভালো করেন গার্ডনার। দুই টেস্টে নেন ১৭ উইকেট। ব্যাটিংয়ে অবশ্য জ্বলে উঠতে পারেননি, রান কেবল ৫৯। আর ওয়ানডেতে তার শিকার ছিল ১৩ ম্যাচে ২৪টি, রান করেন ১৮৮।
বেথ মুনি
অস্ট্রেলিয়ার নারী দলের সময়ের সেরা ব্যাটারদের একজন মুনি। গত বছরটা দারুণ কাটে তার। সব সংস্করণ মিলিয়ে ২৯ ম্যাচে করেন ১ হাজার ৪০ রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে ২০৬ রান করে বড় অবদান রাখেন তিনি। ফাইনালের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারও পান এই ব্যাটার।
ন্যাট সিভার-ব্রান্ট
২০২২ সালের র্যাচেল ফ্লিন্ট ট্রফি জেতেন ইংলিশ এই অলরাউন্ডার। এবারও বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটার হওয়ার লড়াইয়ে আছেন তিনি। গত বছর ১৮ ম্যাচ খেলে ৮৯৪ রান করেন সিভার-ব্রান্ট। পেস বোলিংয়ে নেন ৯ উইকেট।
নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গত আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৬ রান ছিল সিভার-ব্রান্টের। কিন্তু বোলিংয়ে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি, নেন কেবল ১ উইকেট। ওয়ানডেতে ২০২৩ সালে মাত্র ৬ ম্যাচে খেলে ৩৯৩ রান করেন তিনি ১৩১ গড়ে। যেখানে তিন ম্যাচেই সেঞ্চুরির দেখা পান সিভার-ব্রান্ট। বছরে দুই টেস্টে দুটি ফিফটিও করেন ডানহাতি এই ব্যাটার।