ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্রেফ ১৫০ রানেই গুটিয়ে দিয়ে ভারত দিন শেষ করেছে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮০ রান নিয়ে।
Published : 13 Jul 2023, 09:00 AM
সিরিজ শুরুর আগে আলোচনা ছিল ভারতের পেস আক্রমণের অনভিজ্ঞতা নিয়ে। কিন্তু স্পিন আক্রমণে তো সেই ঘাটতি নেই! রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা মিলেই একরকম সেরে ফেললেন কাজ। দুই অভিজ্ঞ স্পিনারের দুর্দান্ত বোলিংয়ের জবাব পেল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজ শুরুর আগে অ্যান্টিগায় ক্যাম্প, কিংবদন্তি ব্রায়ান লারার সঙ্গে কাজ করা, সেসবের কোনো ফল প্রথম ইনিংসে অন্তত দেখাতে পারলেন না ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা।
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম দিনেই কোণঠাসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৬ বছর পর ডমিনিকায় টেস্ট ম্যাচ ফেরার দিনটিতে স্বাগতিক দর্শকরা উপহার পেলেন না ভালো কিছু। প্রথম দিনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবিয়ানরা অল আউট স্রেফ ১৫০ রানেই।
ভারতের বোলিং নায়ক অশ্বিন ৬০ রানে নেন ৫ উইকেট। টেস্টে এক ইনিসে ৫ উইকেট হয়ে গেল তার ৩৩ বার। ভারতের হয়ে ৩৫ বার ৫ উইকেটের রেকর্ড গড়া অনিল কুম্বলেকে ছোঁয়ার পথে আরেকটু এগোলেন তিনি। তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭০০ উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করেন তিনি।
তার স্পিন জুটির সঙ্গী জাদেজার শিকার ৩ উইকেট।
ভারত শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে দিন শেষ করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮০ রান নিয়ে। টেস্ট অভিষেকের দিনটিতে উজ্জ্বল সম্ভাবনার ছাপ রেখে যাশাসবি জয়সওয়াল অপরাজিত থাকেন স্ট্রোক সমৃদ্ধ ৪০ রান নিয়ে। তার সঙ্গী অধিনায়ক রোহিত শর্মা অপরাজিত ৩০ রানে।
সকালে টস জিতে ব্যাটিং নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। শুরুতে উইকেটে আর্দ্রতা থাকবে অনেক, তা অবশ্য তিনি জানতেন। তবে তিনি ও তেজনারাইন চন্দরপল শুরুর সময়টা কাটিয়েই দিয়েছিলেন অনেকটা। পরে দেখা যায়, উইকেট বেশ মন্থর, স্পিন ধরেছে প্রথম দিনেই।
মোহাম্মদ সিরাজ ও জয়দেব উনাদকাটের নতুন বলের চ্যালেঞ্জ মোটামুটি উতরে যান দুই ক্যারিবিয়ান ওপেনার। উইকেটের ধরন বুঝে নবম ওভারেই অশ্বিনকে আক্রমণে আনেন রোহিত শর্মা। প্রথম ওভারেই তাকে বাউন্ডারিতে স্বাগত জানান ব্র্যাথওয়েট। তবে সাফল্য পান তিনি দ্রুতই।
নিজের তৃতীয় ওভারেই জাদুকরি এক ডেলিভারিতে তিনি বোকা বানান চন্দরপলকে। মিডল স্টাম্পে পিচ করা ডেলিভারি টার্ন করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় অফ স্টাম্পে।
তাতে একটি বিরল কীর্তিও গড়া হয়ে যায় অশ্বিনের। টেস্ট ইতিহাসের পঞ্চম বোলার হিসেবে বাবা ও ছেলে, দুজনকেই আউট করার স্বাদ পান তিনি। তেজনারাইনের বাবা শিবনারাইন চন্দরপলকে ৪ বার আউট করেছিলেন তিনি।
উইকেট হারালেও অশ্বিনকে চাপে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যান ব্র্যাথওয়েট। আরেকটি চার মারেন তিনি সুইপ শটে। কিন্তু তার পতনও হয় এই পথেই। অশ্বিনকেই অন সাইডে তুলে মারতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২০ রান করে।
পেস বোলিংয়ে প্রথম সাফল্য আসে একটু পরই। তিনে নামা রেমন রিফার স্টাম্পের বাইরের আলগা বলে ব্যাট চালিয়ে দেন। নিচু হওয়া বলটি গ্লাভসে জমিয়ে টেস্টে প্রথম ক্যাচ নেওয়ার স্বাদ পান অভিষিক্ত কিপার ইশান কিষান।
প্রথম সেশনেই উইকেট শিকারে যোগ দেন জাদেজাও। জার্মেইন ব্ল্যাকউডের তুলে মারা বল মিড অফে লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন সিরাজ। ৪ উইকেটে ৬৮ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বিরতির পরপরই জাদেজার বল খুব কাছ থেকে কাট করার চেষ্টায় উইকেট হারান জশুয়া দা সিলভা।
৭৬ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন আলিক আথানেজ ও জেসন হোল্ডার। ঘরের মাঠে টেস্ট অভিষেকের দিনটি দর্শকদের কিছুটা বিনোদন দেন ডমিনিকার সন্তান আথানেজ।
নান্দনিক ক্যারিবিয়ান পুল শটে প্রথম বাউন্ডারি পান ২৪ বছর বয়সী প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। এরপর দারুণ কিছু সুইপ ও ড্রাইভ খেলেন। অশ্বিনকে স্লগ সুইপে মারেন বাউন্ডারি। গত মাসে ওয়ানডে অভিষেকে দ্রুততম ফিফটির বিশ্বরেকর্ড ছোঁয়া ব্যাটসম্যান টেস্ট অভিষেকে ফিফটি পাননি একটুর জন্য। অশ্বিনের জোরের ওপর করা বলে পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দিয়ে ধরা পড়েন তিনি ৪৭ রানে।
হোল্ডারের সঙ্গে তার জুটি অবশ্য ভাঙে আগেই। সিরাজের শর্ট বলে পুল করে হোল্ডার বিদায় নেন ১৮ রানে। ষষ্ঠ উইকেটে ৪১ রানের সেই জুটিই ইনিংসের সর্বোচ্চ।
লোয়ার অর্ডারে রাকিম কর্নওয়াল ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতে পারেননি। ৩৩ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুবমান গিলের দারুণ ক্যাচে শেষ উইকেটটি নিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন অশ্বিন।
বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে নেমেও দাপট দেখায় ভারত। শুরুটা করেন রোহিত শর্মা। প্রথম রানের দেখা পেতে যাশাসবি জয়সওয়ালের লাগে ১৬ বল। আলজারি জোসেফকে আপার কাট শটে বাউন্ডারিতে রানের মুখ দেখার পর অবশ্য আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে ২১ বছর বয়সী বাঁহাতি ওপেনার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৮০ গড় নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করা ব্যাটসম্যান চমৎকার কিছু ড্রাইভ ও সুইপ খেলেন। এমনকি দিনের শেষ ওভারে চার মারেন রিভার্স সুইপেও।
ক্যারিবিয়ানরা স্পিন আক্রমণে আনে অষ্টম ওভারেই। কিন্তু অফ স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল ও পরে বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যান কোনো প্রভাব রাখতে পারেননি। ভারত তাই দিন শেষ করে দাপট দেখিয়েই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৬৪.৩ ওভারে ১৫০ (ব্র্যাথওয়েট ২০, চন্দরপল ১২, রিফার ২, ব্ল্যাকউড ১৪, আথানেজ ৪৭, জশুয়া ২, হোল্ডার ১৮, জোসেফ ৪, কর্নওয়াল ১৯*, রোচ ১, ওয়ারিক্যান ১; সিরাজ ১২-২-২৫-১, উনাদকাট ৭-২-১৭-০, অশ্বিন ২৪.৩-৬-৬০-৫, শার্দুল ৭-৩-১৫-১, জাদেজা ১৪-৭-২৬-৩)।
ভারত ১ম ইনিংস: ২৩ ওভারে ৮০/০ (জয়সওয়াল ৪০*, রোহিত ৩০*; রোচ ৪-১-৭-০, জোসেফ ৫-১-২৫-০, কর্নওয়াল ৪-০-১৭-০, ওয়ারিক্যান ৬-০-২০-০, হোল্ডার ৪-২-৬-০)।