৩২ বছর বয়সে ওয়ানডে অভিষেক রাঙাতে পারলেন না রনি

বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি বয়সে অভিষেক হয়েছে স্রেফ আর দুই জন ক্রিকেটারের।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 10:31 AM
Updated : 14 May 2023, 10:31 AM

কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের ধারেকাছে ছিলেন না রনি তালুকদার। সেই তিনিই এবার ওয়ানডে ক্যাপ পেলেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিরল একটি ঘটনাও তাতে দেখা গেল। এত বেশি বয়সে অভিষেক যে খুব একটা দেখা যায় না এই দেশে!

৩২ বছর ২১৬ দিন বয়সে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবার মাঠে নামলেন রনি। গত ৩৭ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষেক তারই। তবে সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। আউট হয়ে যান ম্যাচের চতুর্থ ওভারেই।

ওয়ানডে দলে রনি প্রথমবার ডাক পেয়েছিলেন ৮ বছর আগে। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৫১ গড়ে ৭১৪ রান করার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে স্কোয়াডে জায়গা পান তিনি। তবে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। পরের সিরিজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি খেলতে পারেন তিনি। পরে জায়গা হারান সীমিত ওভারের দুই সংস্করণ থেকেই।

এবার বিপিএলে নজরকাড়া ব্যাটিং করে সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি দলে ফেরেন তিনি ৭ বছরের বেশি বিরতির পর। এরপর ওয়ানডে দলে তার ডাক পাওয়াটা ছিল কিছুটা সৌভাগ্যের ছোঁয়ায়। গত মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে জায়গা হয়েছিল শুরুতে জাকির হাসানের। কিন্তু আঙুলের চোটে তিনি ছিটকে পড়েন সিরিজ শুরুর আগেই। সেখানেই বদলি হিসেবে নেওয়া হয় রনিকে।

যদিও গত কয়েক বছরে ঘরোয়া একদিনের ম্যাচের টুর্নামেন্টে উল্লেখযোগ্য কোনো পারফরম্যান্স তার ছিল না। মূলত বিপিএলের পারফরম্যান্স আর আক্রমণাত্মক মানসিকতার কারণে সুযোগটা মেলে তার। দেশের মাঠে সিরিজের পর এই সফরেও জায়গা ধরে রাখেন। স্কোয়াডে ফেরার মতো তার অভিষেকের সুযোগও এলো আরেকজনের চোটে।

আঙুলের চোটে সাকিব আল হাসান খেলতে না পারায় একাদশে ঠাঁই পান রনি। বাংলাদেশের ১৪১তম ওয়ানডে ক্রিকেটারকে ক্যাপ পরিয়ে দেন সাকিবই।

রনির চেয়ে বেশি বয়সে অভিষেক বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে আছে আর কেবল আর দুই জনের। সেই দুজনের অভিষেক হয়েছিল ১৯৮৬ সালের মার্চে, এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ায় সেই ম্যাচে ৩৬ বছর ২৫৫ দিন বয়সে অভিষেক হয়েছিল পেসার জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাহর। ওপেনার রকিবুল হাসান সেই ম্যাচটি খেলতে নেমেছিলেন ৩৩ বছর ৮৯ দিন বয়সে।

বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা পেসারদের একজন বলে বিবেচিত জাহাঙ্গীর ওই বয়সেও অভিষেকে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। ব্যাটিং ব্যর্থতায় পাকিস্তানকে মাত্র ৯৫ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। স্বল্প পুঁজি নিয়েই দারুণ বোলিংয়ে ৯ ওভারে কেবল ২৩ রান দিয়ে মহসিন খান ও রমিজ রাজার উইকেট নিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর।

রকিবুল অবশ্য ওপেন করতে নেমে আউট হয়ে গিয়েছিলেন ১৪ বলে ৫ রান করে। এবার রনির অভিজ্ঞতাও ঠিক তেমনই। ওপেন করতে নেমে অস্বস্তিময় কয়েকটি মুহূর্তের পর একটি বাউন্ডারি মারতে পারলেও পরের বলেই তিনি আউট হন ১৪ বলে ৪ রান করে।

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের সেই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই ৩২ বছর ১১৮ দিন বয়সে অভিষেক হয়েছিল সামিউর রহমানের। তিনি এখন আছেন তালিকার চারে।

সাম্প্রতিক অতীতে ৩০ ছুঁয়ে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকের উদাহরণ ছিল একটিই। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে অভিষেকের সময় ফজলে মাহমুদ চৌধুরির বয়স ছিল ৩০ বছর ২৯৫ দিন। সেবার তার সুযোগটাও এসেছিল সাকিবের চোটের কারণে। টানা দুই ম্যাচে শূন্য রানে ফেরার পর আর সুযোগ পাননি তিনি।

এছাড়া বাংলাদেশের হয়ে ৩০ বছর বয়সে অভিষেকের উদাহরণ আছে আর কেবল দুটি। ১৯৯৯ সালে মাহবুবুর রহমানের অভিষেক হয়েছিল ৩০ বছর ৫২ দিন বয়সে। ১৯৮৮ সালে ওয়াহিদুল গণির অভিণেক হয়েছিল ৩০ বছর ৩৭ দিন বয়সে।

ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষেকের বিশ্বরেকর্ড যেটি, এখনকার বাস্তবতায় সেই রেকর্ড ভাঙা অসম্ভবই বলা যায়। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ভদোদরায় মাঠে নামার দিন নেদারল্যান্ডসে নোলান ক্লার্কের বয়স ছিল ৪৭ বছর ২৪০ দিন!