তানজিদের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে নায়ক চিরাগ

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্সকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে মাশরাফির রূপগঞ্জ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2023, 01:16 PM
Updated : 21 March 2023, 01:16 PM

আগের দুই ম্যাচে তেমন কিছু করতে না পারা তানজিদ হাসান ছড়ালেন আলো। তার চমৎকার সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহ গড়ল ব্রাদার্স ইউনিয়ন। কিন্তু চিরাগ জানির অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ও পারভেজ হোসেনের ঝড়ো ফিফটিতে দারুণ জয় তুলে নিল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মঙ্গলবার ব্রাদার্সকে ৩ উইকেটে হারায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। প্রতিপক্ষের ২৯৯ রান রূপগঞ্জ পেরিয়ে যায় ৮ বল বাকি থাকতে।

ব্রাদার্সের বড় পুঁজি গড়ার কারিগর তানজিদ খেলেন ৪ ছক্কা ও ১৪ চারে ক্যারিয়ার সেরা ১৪২ রানের ইনিংস। তার আগের সেরা অপরাজিত ১০১।

পরে সব আলো কেড়ে নেন চিরাগ। বল হাতে ২ উইকেট নেওয়া ভারতীয় এই অলরাউন্ডার পাঁচে নেমে খেলেন ৮৪ বলে ৯৪ রানের ইনিংস। জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

তার আগে রান তাড়ায় ওপেনিংয়ে নেমে বিধ্বংসী ইনিংসে ভিত গড়ে দেন পারভেজ; ৭ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৩ বলে ৬৬ রান করেন তিনি। এছাড়া ৩ চারে ৫৩ রান করেন কিপার-ব্যাটসম্যান ইরফান শুক্কুর।

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ব্রাদার্স শুরুটা ভালোই করে। মিজানুর রহমানের বিদায়ে ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর দলকে টানেন তানজিদ ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সাব্বির হোসেন।

এবার অবশ্য বড় ইনিংস খেলতে পারেননি সাব্বির। তাকে ৩৭ রানে কট বিহাইন্ড করে ৮০ রানের এই জুটি ভাঙেন চিরাগ। এরপর আনিসুল ইসলাম কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন তানজিদকে।

আসরে নিজের প্রথম দুই ম্যাচে ৮ ও ১৪ রান করা তানজিদ পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৫৪ বলে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি ১১১ বলে। মাশরাফির বলে ৪৫তম ওভারে বোল্ড হয়ে থামে তার দারুণ ইনিংসটি।

১ ছক্কা ও ২ চারে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন মাইশুকুর রহমান।

বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে মুনিম শাহরিয়ারকে হারানো রূপগঞ্জের হাল ধরেন পারভেজ ও সাব্বির রহমান। ২৫ বলে ফিফটি করা পারভেজের বিদায়ে ভাঙে ৮৩ রানের জুটি।

আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা সাব্বির রহমান (৩৪) যেতে পারেননি বেশিদূর। ইরফানকে নিয়ে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন চিরাগ। ফিফটির পর ইরফান বিদায় নিলে দ্রুত আরও দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা শঙ্কায় পড়ে রূপগঞ্জ।

কিন্তু হাল ছাড়েননি ৪৮ বলে ফিফটি করা চিরাগ। সেঞ্চুরির দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে তিনি ফেরেন ৬ রানের আক্ষেপ নিয়ে। ততক্ষণে অবশ্য জয়ের কাছে পৌঁছে যায় দলটি। বাকি পথ পার করেন সোহাগ গাজী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৫০ ওভারে ২৯৯/৫ (মিজানুর ২০, তানজিদ ১৪২, সাব্বির ৩৭, আনিসুল ২৮, মাইশুকুর ৫৩*, জাহিদুজ্জামান ৭, নাদিফ ১*; সোহাগ ৭-০-৩৫-১, চিরাগ ১০-০-৪৭-২, আল আমিন ১০-০-৬৭-১, মাশরাফি ১০-০-৬৯-১, নাঈম জুনি. ৪-০-৩০-০, মুক্তার ৯-০-৪৮-০)

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৪৮.৪ ওভারে ৩০২/৭ (মুনিম ১০, পারভেজ ৬৬, সাব্বির ৩৪, ইরফান ৫৩, চিরাগ ৯৪, মাশরাফি ০, তানবির ১৩, সোহাগ ১৩*, মুক্তার ০*; সজিব ১০-০-৭২-০, সঞ্জিত ১০-১-৫১-১, গালিব ৮.৪-০-৬০-০, সাব্বির ৮-০-৪১-৩, আনিসুল ২-০-১৬-০, রাহাতুল ১০-০-৬০-৩)

ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৩ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: চিরাগ জানি

মিঠুনের ৭ রানের আক্ষেপ, দ্যুতিময় রুবেল

দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত আক্ষেপে পুড়লেন মোহাম্মদ মিঠুন। তবে আদিল আমিনের ফিফটি ও বাকিদের টুকটাক অবদানে তিনশর কাছাকাছি গেল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। পরে রুবেল হোসেনের আগুনে বোলিংয়ে লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারল না শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব।

মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রাইম ব্যাংকের জয় ৭৮ রানে। ২৯৫ রানের পুঁজি গড়ে শাইনপুকুরকে তারা থামিয়ে দেয় ২১৭ রানে।

৩ ছক্কা ও ১০ চারে ৯৩ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন প্রাইম ব্যাংকের অধিনায়ক মিঠুন। পাকিস্তানের আদিল খেলেন ২ ছক্কা ও ১ চারে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। ইনিংস শুরু করতে নেমে প্রান্তিক নাবিল করেন ৪৩ রান।

শাইনপুকুরের হয়ে পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি কেউ। চল্লিশের ঘরে থামেন তিন জন। সর্বোচ্চ ৪৯ রান শ্রীলঙ্কার সঙ্গিত মালিন্দুর।

৩৬ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়ে প্রাইম ব্যাংকের জয়ের কারিগরদের একজন রুবেল।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে হাসানুজ্জামানকে হারায় প্রাইম ব্যাংক। মিঠুন ও নাবিলের ১৩২ রানের জুটিতে সেই ধাক্কা সামাল দেয় তারা।

নাবিলের পর দ্রুত বিদায় নেন নাসির হোসেন। কিছুক্ষণ পর সেঞ্চুরির দুয়ারে থাকা মিঠুনকে বোল্ড করে হতাশায় ডোবান হাসান মুরাদ। আল আমিন জুনিয়র, অলক কাপালীদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত খেলে যান আদিল।

রান তাড়ায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় শাইনপুকুর। ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি সঙ্গিত, আমিনুল ইসলাম (৪১), মেহেদি হাসান রানা (৪৬)।

দুই অঙ্কের ঘরে যান আরও চার ব্যাটসম্যান। তেমন বড় কোনো জুটিই গড়তে পারেনি শাইনপুকুর। তাদের কেবল সঙ্গিত ও আমিনুলের জুটি স্পর্শ করে পঞ্চাশ, ৫৭ রানের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৯৫/৮ (নাবিল ৪৩, হাসানুজ্জামান ০, মিঠুন ৯৩, নাসির ১২, আদিল ৬৪*, আল আমিন জুনি. ৩৯, মইনুল আহত অবসর, কাপালী ২৮, রাজা ১, তাইজুল ০; নাবিল সামাদ ১০-০-৫১-০, নাহিদ ৯-০-৪৯-২, মেহেদি রানা ৮-০-৬৯-০, মুরাদ ১০-০-৩২-১, সঙ্গিত ১-০-৭-০, রেজা ৫-০-৩১-৩, আমিনুল ৭-০-৫০-২)

শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪৫.১ ওভারে ২১৭ (অভিশেক ২, খালিদ ১৯, সঙ্গিত ৪৯, অমিত ১৫, আমিনুল ৪১, সাজ্জাদুল ১৩, রেজা ০, মেহেদি রানা ৪৬, মুরাদ ২১, নাহিদ ১, নাবিল সামাদ ০*; রুবেল ৮-০-৩৬-৪, নাসির ৫-১-২৩-০, রাজা ৮.১-০-৩৩-২, আদিল ৯-১-২৬-১, তাইজুল ৮-০-৪৪-১, কাপালী ৬-০-৪৩-১, মইনুল ১-০-১০-০)

ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৭৮ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ মিঠুন

শেষের রোমাঞ্চে শেখ জামালের জয়

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে শেষ ওভারে সিটি ক্লাবের প্রয়োজন পড়ে ১২ রান। প্রথম দুই বলে তারা ৫ রান তুললেও পরে দুর্দান্ত বোলিং করেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। দারুণ এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।

নারায়নগঞ্জে মঙ্গলবার ডাকওয়ার্থ-লুইস ও স্টার্ন পদ্ধতিতে ৫ রানে জেতে শিরোপাধারী শেখ জামাল।

টস জিতে আগে ব্যাটিং করা শেখ জামাল তোলে ৮ উইকেটে ২২৮ রান। দ্বিতীয় ইনিংসের মাঝে বৃষ্টি নামলে সিটি ক্লাবের সামনে নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩২ ওভারে ১৬৮ রানের। জয়ের দুয়ারে গিয়েও তারা থেমে যায় ১৬২ রানে।

শেখ জামালকে দারুণ শুরু এনে দেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সাইফ হাসান ও সৈকত আলি। তাদের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১১০ রান। পরে চার ওভারে মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় দলটি।

১ ছক্কা ও ৫ চারে ৫২ রান করে ম্যাচ সেরা হন সৈকত। সাইফ ৫৬ রান করেন ১ ছক্কা ও ৩ চারে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে শেখ জামাল।

অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান, পারভেজ রাসুল, জিয়াউর রহমানরা করতে পারেননি কিছু। ফজলে মাহমুদ ৩৬ ও তাইবুর রহমান করেন ৩৯ রান।

সিটি ক্লাবের হয়ে বল হাতে আলো ছড়িয়ে ৩৬ রানে ৪ উইকেট নেন অধিনায়ক রবিউল হক।

সিটি ক্লাবের প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানই যান দুই অঙ্কে। কিন্তু কেউই বড় ইনিংস খেলে টেনে নিতে পারেননি দলকে।

৩ ছক্কা ও ৪টি চারে সর্বোচ্চ ৪২ রান আসে ওপেনার তৌফিক খানের ব্যাট থেকে। ৩৬ রান করেন রাফসান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৪৯.৪ ওভারে ২২৮ (সাইফ ৫৬, সৈকত ৫২, ফজলে মাহমুদ ৩৬, সোহান ৭, রাসুল ২, তাইবুর ৩৯, জিয়াউর ৯, রবিউল ০, মৃত্যুঞ্জয় ২, আরিফ ২*, শফিকুল ৬; রবিউল ৯-০-৩৬-৪, তৌফিক ৮.৪-০-৬১-২, আসিফ ৮-০-৩৭-১, নাইমুর ৭-০-৩৩-১, আসিফ রাতুল ১০-১-২৮-১, রায়ান ৬-০-২৩-১, রাফসান ১-০-৪-০)

সিটি ক্লাব: (লক্ষ্য ৩২ ওভারে ১৬৮) ৩২ ওভারে ১৬২/৮ (জয়রাজ ১১, তৌফিক ৪২, মামুন ১৩, সাইফুল ২০, রাফসান ৩৬, আসিফ রাতুল ২২*, রায়ান ২, রবিউল ৭, নাইমুর ০, আসিফ ০*; আরিফ ৫-০-১৬-০, শফিকুল ৭-০-৩৭-৩, রাসুল ৬-০-৪৩-১, মৃত্যুঞ্জয় ৭-০-২৮-১, জিয়াউর ১-০-৬-০, রবিউল ৩-০-১৮-০, তাইবুর ৩-১-১৩-১)

ফল: ডিএলএস পদ্ধতিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৫ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: সৈকত আলি