ডাচদের উড়িয়ে ৯-০ করে ফেলল ভারত

শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুলের ঝড়ো শতকের পর বোলারদের নৈপুণ্যে নেদারল্যান্ডসকে অনায়াসে হারাল ভারত। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2023, 05:08 PM
Updated : 12 Nov 2023, 05:08 PM

রোহিত শার্মার ঝুলিয়ে দেওয়া বল উড়িয়ে মারলেন তেজা নিদামানুরু। কিন্তু দূরত্ব পেলেন না, ধরা পড়লেন লং অন বাউন্ডারিতে। বাতাসে হাত ছুড়ে তীব্র গর্জনে উদযাপন সারলেন রোহিত। তার আগে উইকেটের খাতায় নাম তোলেন ভিরাট কোহলিও। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ‘বোলার’ হওয়ার দিনে নেদারল্যান্ডসকে উড়িয়ে দিল ভারত।

বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে ১৬০ রানে জিতেছে স্বাগতিকরা। ৪১১ রানের লক্ষ্যে ১৩ বল বাকি থাকতেই ২৫০ রানে গুটিয়ে গেছে নেদারল্যান্ডস। 

প্রথম রাউন্ডে ৯ ম্যাচের সবগুলি জিতল ভারত। বিশ্বকাপে টানা এর চেয়ে বেশি ম্যাচ একবারই জিতেছে তারা। ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপ মিলিয়ে জিতেছিল টানা ১১ ম্যাচ।

সেমি-ফাইনালের টিকেট সবার আগে পেয়েছে স্বাগতিকরা। মুম্বাইয়ে আগামী বুধবার প্রথম সেমি-ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড।

নেদারল্যান্ডসের জন্য ম্যাচটি ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে কিংবা ভারতকে হারাতে পারলে প্রথমবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকেট পেত তারা। ডাচদের পরাজয়ে সেরা আটে থেকে ওই টিকেট পেয়েছে বাংলাদেশ। 

প্রথম ইনিংসেই মূলত ঠিক হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুলের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর গড়ে ভারত। ২০০৭ সালে বারমুডার বিপক্ষে তারা করেছিল ৪১৩ রান। 

পাঁচ নম্বরে নেমে স্রেফ ৬২ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন রাহুল। বিশ্বকাপে এটিই ভারতের দ্রুততম শতক। চলতি আসরেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬৩ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন রোহিত। 

অষ্টাদশ ওভারে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা ইনিংসে শ্রেয়াস করেছেন ১২৮ রান। ৯৪ বলে ১০ চার ও ৫ ছক্কায় সাজানো ইনিংসে তিনিই জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রোহিত, শুবমান গিল। প্রথম পাওয়ার প্লেতে আসে ৯১ রান। দ্বাদশ ওভারে দলের একশ পূর্ণ করে ফেরেন গিল। ৩ চার ও ৪ ছক্কায় স্রেফ ৩২ বলে তিনি করেন ৫১ রান।

রোহিতের ব্যাটে দেখা যায় বড় কিছুর সম্ভাবনা। কিন্তু বাস ডে লেডের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে শেষ হয় তার ৮ চার ও ২ ছক্কায় গড়া ৫৪ বলে ৬১ রানের ইনিংস। এই ইনিংসের পথে বেশ কয়েকটি রেকর্ডে নাম লেখা তিনি।

রোহিতের পর বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়ে ফিফটি ছুঁয়েই থামেন কোহলি (৫৬ বলে ৫১)। এরপর চতুর্থ উইকেটে ১২৮ বলে ২০৮ রানের বিস্ফোরক জুটি গড়েন রাহুল, শ্রেয়াস। বিশ্বকাপে চতুর্থ উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ জুটি। আগের রেকর্ড ছিল ২০০৭ সালে একই দলের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লার্ক ও ব্র্যাড হজ জুটির ২০৪ রান।

প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের মতো পঞ্চাশে না থেমে সেঞ্চুরির স্বাদ নেন শ্রেয়াস, রাহুল। এতে দল হিসেবে অনন্য রেকর্ড গড়ে ভারত। বিশ্বকাপে এক ইনিংসে প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের পঞ্চাশ ছোঁয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।

রেকর্ডময় ইনিংসে এত বড় স্কোর গড়ার পর ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় ছিল অল্পই। তবু চেষ্টা করেন নেদারল্যান্ডসের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু ভালো শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে না পারার আক্ষেপে পোড়েন তারা।

ডাচদের আট ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুঁলেও ফিফটি করতে পারেন শুধু নিদামানুরু। ১ চার ও ৬ ছক্কায় স্রেফ ৩৯ বলে ৫৪ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। 

ইনিংসের ২৫তম ওভারে ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসকে কট বিহাইন্ড করে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম উইকেট পান কোহলি। আর ম্যাচের শেষ বলে রোহিত ধরেন বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম শিকার।

এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ, জাসপ্রিত বুমরাহ, কুলদিপ ইয়াদাভ, রবীন্দ্র জাদেজা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ৪১০/৪ (রোহিত ৬১, গিল ৫১, কোহলি ৫১, শ্রেয়াস ১২৮*, রাহুল ১০২, সুরিয়াকুমার ২*; আরিয়ান ৭-০-৫২-০, ফন বিক ১০-০-১০৭-০, আকারম্যান ৩-০-২৫-০, মেকেরেন ১০-০-৯০-১, ফন ডার মেরওয়া ১০-০-৫৩-১, ডে লেডে ১০-০-৮২-২)

নেদারল্যান্ডস: ৪৭.৫ ওভারে ২৫০ (বারেসি ৪, ও'ডাওড ৩০, আকারম্যান ৩৫, এঙ্গেলব্রেশট ৪৫, এডওয়ার্ডস ১৭, ডে লেডে ১২, নিদামানুরু ৫৪, ফন বিক ১৬, ফন ডার মেরওয়া ১৬, আরিয়ান ৫, মেকেরেন ৩*; বুমরাহ ৯-১-৩৩-২, সিরাজ ৬-১-২৯-২, শামি ৬-০-৪১-০, কুলদিপ ১০-১-৪১-২, জাদেজা ৯-০-৪৯-২, কোহলি ৩-০-১৩-১, গিল ২-০-১১-০, সুরিয়াকুমার ২-০-১৭-০, রোহিত ০.৫-০-৭-১)

ফল: ভারত ১৬০ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শ্রেয়াস আইয়ার