বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডকে হারাল পাকিস্তান, সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত হলো দক্ষিণ আফ্রিকার।
Published : 04 Nov 2023, 07:20 PM
জিততে হলে পাকিস্তানকে টপকাতে হতো রানের পাহাড়। খুনে ব্যাটিংয়ে সুর বেঁধে দিলেন ফাখার জামান। দুই দফা হানা দিল বৃষ্টি। যেখানে শেষ হাসি হাসল পাকিস্তানই। নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখল বাবর আজমের দল।
বেঙ্গালুরুতে শনিবার নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ডাকওয়ার্থ লুইস স্টার্ন পদ্ধতিতে পাকিস্তানের জয় ২১ রানে।
নিউ জিল্যান্ড করে এ দিন ৪০১ রান। পাকিস্তানের রান তাড়ার মাঝে বৃষ্টির বাধায় নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪১ ওভারে ৩৪২। ২৫.৩ ওভারে ১ উইকেটে ২০০ রান তোলার পর আরেক দফা বৃষ্টিতে আর খেলা হয়নি। তখন ২১ রানে এগিয়ে ছিল পাকিস্তান।
৮১ বলে ১১ ছক্কা ও ৮ চারে অপরাজিত ১২৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে পাকিস্তানের নায়ক ফাখার। তার ১১ ছক্কা বিশ্বকাপে এক ইনিংসে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। ১৯৯৬ আসরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১ ছক্কা মেরেছিলেন শাহিদ আফ্রিদিও।
ফাখারের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১৯৪ রানের জুটিতে অধিনায়ক বাবর ৬৩ বলে করেন ৬৬ রান।
তাদের এই জুটি বিশ্বকাপে যে কোনো উইকেটের পাকিস্তানের রেকর্ড। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেই রান তাড়ায় সাঈদ আনোয়ার ও ওয়াজাহাতউল্লাহ ওয়াস্তির উদ্বোধনী জুটিতেও এসেছিল ১৯৪ রান।
নিউ জিল্যান্ডের এই হারে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমি-ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত হলো দক্ষিণ আফ্রিকার। আসরে প্রথম চার ম্যাচে জয়ের পর টানা চারটি হারল কিউইরা।
অথচ বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের পর এ দিন তাদের হারের কথা হয়তো অনেকে কল্পনাও করেনি। রাচিন রবীন্দ্রর ৯৪ বলে ১০৮ রানের ইনিংস শেষ পর্যন্ত কাজে এলো না। চোট কাটিয়ে ফিরে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ৭৯ বলে ৯৫ রানের ইনিংসও রইল আক্ষেপ হয়ে।
আট ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে এখনও অবশ্য চার নম্বরে আছে নিউ জিল্যান্ড। তাদের সমান পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটে পিছিয়ে পাঁচে পাকিস্তান। প্রথম রাউন্ডে দুই দলেই ম্যাচ বাকি একটি করে।
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় পাকিস্তানের শুরুটা ছিল হতাশার। দ্বিতীয় ওভারে উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন আবদুল্লাহ শাফিক।
তবে ফাখার আগের ম্যাচ যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু করেন আবার। পাঁচ ম্যাচ পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিরে ৭৪ বলে ৭ ছক্কায় ৮১ রানের ইনিংসে দলকে জেতান তিনি। এবার পঞ্চম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে পরপর চার ও ছক্কা মেরে ডানা মেলে দেন বাঁহাতি ওপেনার।
ফিফটি করেন তিনি ৩৯ বলে। সেখান থেকে শতকে যেতে লাগে আর কেবল ২৪ বল। তার ৬৩ বলে শতক বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানের দ্রুততম। পেছনে পড়ে গেছে ২০০৭ আসরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইমরান নাজিরের ৯৫ বলে শতক।
ফাখারের শতকের পরপরই বৃষ্টি নামে। পাকিস্তানের রান তখন ২১.৩ ওভারে ১ উইকেটে ১৬০। দীর্ঘ অপেক্ষার পর খেলা শুরু হলে দেওয়া হয় নতুন লক্ষ্য।
২৫তম ওভারে লেগ স্পিনার ইশ সোধিকে টানা তিনটি ছক্কা মারেন ফাখার। সেখানেই নিউ জিল্যান্ডকে অনেকটা পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় পাকিস্তান। পরের ওভারে দ্বিতীয় দফা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ এবং পরে পাকিস্তানের জয়ের আনন্দ।
এম চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম ভাগে পাকিস্তানের সঙ্গী হয় শুধু হতাশা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটিতে নিউ জিল্যান্ডের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন ডেভন কনওয়ে ও রবীন্দ্র।
দ্বিতীয় উইকেটে রবীন্দ্র ও উইলিয়ামসনের জুটিতে আসে ১৪২ বলে ১৮০ রান। রবীন্দ্র আসরে নিজের তৃতীয় শতক পূর্ণ করেন ৮৮ বলে।
স্পিনার ইফতিখার আহমেদকে ছক্কায় শতকের চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে উইলিয়ামসন বিদায় নিলে ভাঙে জুটি। রবীন্দ্রও এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি।
ড্যারিল মিচেল (১৮ বলে ২৯), মার্ক চ্যাপম্যান (২৭ বলে ৩৯), গ্লেন ফিলিপস (২৫ বলে ৩৯), মিচেল স্যান্টনারের (১৭ বলে ২৬) ক্যামিও ইনিংসে চারশ ছাড়ায় নিউ জিল্যান্ড।
পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের মূল অস্ত্র শাহিন শাহ আফ্রিদি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ে ১০ ওভারে দেন ৯০ রান। বিশ্বকাপে যা পাকিস্তানের কোনো বোলারের সর্বোচ্চ। এ দিনই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৫ রান দেন হারিস রউফ।
তাদের বোলিংয়ের সেই হতাশা হয়তো খানিকটা কেটেছে ম্যাচ শেষে, দলের দারুণ জয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৪০১/৬ (কনওয়ে ৩৫, রবীন্দ্র ১০৮, উইলিয়ামসন ৯৫, মিচেল ২৯, চ্যাপম্যান ৩৯, ফিলিপস ৪১, স্যান্টনার ২৬*, ল্যাথাম ২*; আফ্রিদি ১০-০-৯০-০, হাসান ১০-০-৮২-১, ইফতিখার ৮-০-৫৫-১, রউফ ১০-০-৮৫-১, ওয়াসিম ১০-০-৬০-৩, সালমান ২-০-২১-০)
পাকিস্তান: (২৫.৩ ওভারে লক্ষ্য ১৮০) ২৫.৩ ওভারে ২০০/১ (শাফিক ৪, ফাখার ১২৬*, বাবর ৬৬*; বোল্ট ৬-০-৫০-০, সাউদি ৫-০-২৭-১, স্যান্টনার ৫-০-৩৫-০, ফিলিপস ৫-১-৪২-০, সোধি ৪-০-৪৪-০, মিচেল ০.৩-০-১-০)
ফল: ডাকওয়ার্থ লুইস স্টার্ন পদ্ধতিতে পাকিস্তান ২১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফাখার জামান