মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর পারফরম্যান্সও মনে ধরেছে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের।
Published : 09 Oct 2023, 07:05 PM
বাংলাদেশ দলের নেট সেশন চলছিল তখন। মূল মাঠ পেরিয়ে নেটে যাওয়ার যে পথ, সেখানেই এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়েন মর্গ্যান। পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই হাসলেন, হাত নাড়লেন। গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক খেলোয়াড়ী জীবনকে বিদায় বলে দিয়েছেন বেশ আগেই। তবু এবারের বিশ্বকাপে আছেন তিনি। তবে এখন তার হাতে আর ব্যাট নেই, আছে মাইক্রোফোন।
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক এবারের বিশ্বকাপে আছেন ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায়। এছাড়াও আইসিসির জন্য কলাম লিখছেন, বিশ্লেষণ করছেন। ধারামশালায় সোমবার খেলা না থাকলেও তিনি মাঠে এসেছিলেন আইসিসির সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবেই। তাকে নিয়ে এ দিন বিশেষ মিডিয়া সেশন আয়োজন করেছিল আইসিসি। সেখানে নানা কথার ভীড়ে থাকল বাংলাদেশকে নিয়ে নানা কথাও। আর বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উঠলে তো সাকিব আল হাসানের নাম আসা অবধারিতই।
ক্রিকেটের পথ ধরে মর্গ্যান ও সাকিবের এগিয়ে চলা ছিল প্রায় একই সময়ে। দুজনই খেলেছেন ২০০৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। মর্গ্যান তখন ছিলেন আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক। পরে ওই বছরই ক্রিকেট দুনিয়ার দুই প্রান্তে দুজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন পরপর দুই দিনে। ৫ অগাস্ট আয়ারল্যান্ডের হয়ে মর্গ্যানের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় স্কটল্যান্ডে, পরদিন বাংলাদেশের হয়ে সাকিবের অভিষেক জিম্বাবুয়েতে।
এরপর আয়ারল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়ে অনেক পথ পেরিয়ে ইংলিশদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণের নায়ক হয়েছেন মর্গ্যান। সাকিব বাংলাদেশের সেরা হয়ে ক্রমে নিজেকে তুলে নিয়েছেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডারের উচ্চতায়।
কখনও মুখোমুখি লড়াইয়ে, কখনও দূর থেকে সাকিবের পারফরম্যান্স অনুসরণ করেছেন মর্গ্যান। আইপিএলে একসঙ্গে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলেছেন দুজন। সাকিব কেন গ্রেট অলরাউন্ডার, সেটি নিজের মতো করেই ব্যাখ্যা করলেন বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক।
“পারফরম্যান্সের কথা বললে সে অবিশ্বাস্য একজন। সবসময়ই তাকে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন মনে করা হয়েছে এবং পারফরম্যান্স দিয়েই তা সে প্রমাণ করেছে। ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে গেছে। এটা তার পঞ্চম বিশ্বকাপ। খুব বেশি বর্তমান ক্রিকেটার নেই, যারা পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছে। কাজেই পারফরম্যান্সের পাশাপাশি তার এই যে দীর্ঘস্থায়িত্ব, এটাই তাকে গ্রেট অলরাউন্ডারদের একজন করে তুলেছে।”
বছরের পর বছর ধরে সাকিব ও দলের অন্য অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ওপরই বাংলাদেশের নির্ভরতা ছিল বেশি। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রজন্মের পরিবর্তনটা ভালোভাবেই চোখে পড়েছে মর্গ্যানের।
“অতীতে তাকিয়ে যদি দেখেন, যখনই বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে, মূলত তাদের বড় নামগুলোর ওপরই নির্ভর করেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টাতে ইতিবাচক দিক হলো, শান্ত-মিরাজের মতো তরুণরা চাপটাকে সরিয়ে দিতে পেরেছে। সাধারণত যে কাজটা আগে তাদের অভিজ্ঞরা করত।”
“গতকালের ম্যাচে যদি দেখেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের অভিজ্ঞরা সব চাপ সয়ে দলকে এগিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তরুণরা যা করেছে, তা যদি করে যেতে পারে, তাহলে তা সাকিবের পারফরম্যান্স ও নেতৃত্বের জন্য সহায়ক হবে।”
মর্গ্যানের হাত ধরে ২০১৯ সালে যে ট্রফি পেয়েছে ইংল্যান্ড, এবার তা ধরে রাখার অভিযানে প্রথম ম্যাচেই বাজেভাবে হেরে গেছে জস বাটলারের দল। মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিপক্ষেও লড়াইটা কঠিন হবে বলেই মনে করেন মর্গ্যান। তবে কন্ডিশনকে তিনি মনে করছেন ইংল্যান্ডের সহায়ক।
“বাংলাদেশ খুবই ‘ট্রিকি’ প্রতিপক্ষ, খেলা যেখানেই হোক না কেন। এখানে অবশ্য কন্ডিশন বাংলাদেশের চেয়ে ইংল্যান্ডের জন্যই সহায়ক হবে। আগের ম্যাচে দেখেছি, কিছুটা বাউন্স ছিল এখানে। গতিময় বাউন্স নয়, তবে বাড়তি বাউন্স ছিল। ইংল্যান্ডের সিমাররা এখানে বাংলাদেশকে লড়াইয়ের বাইরে ছিটকে দিতে পারে।”
বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড ওয়ানডেতে মুখোমুখি হলেই বারবার ঘুরেফিরে আসে ২০১৫ বিশ্বকাপের অ্যাডিলেইডের সেই ম্যাচ। সেই ধাক্কাকে পেছনে ফেলে ইংলিশ ক্রিকেট পৌঁছে গেছে শিখরে। ওই ম্যাচের হাহাকার এখন বদলে গেছে হাসিতে। সেই পরাজয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে এখন মজাও করতে পারছেন মর্গ্যান।
“আমি কখনোই হাইলাইটস দেখিনি। কিন্তু সবসময়ই প্রসঙ্গটি উঠে আসে। বিশেষ করে, নাসের হুসেইন (সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার) সবসময়ই এটি মনে করিয়ে দেয়। নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন তাই পড়ে না আমার! তবে হ্যাঁ, ওরা কঠিন প্রতিপক্ষ। ওদের সঙ্গে খেলা সহজ নয়।”
“২০১৫ সালে সম্ভবত ওদের পেস বোলিংয়ে অভিজ্ঞতা একটু বেশি ছিল। এবার তা নেই, তবে প্রতিভা দিয়ে অভিজ্ঞতার ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া যায়। ওরা ভালো দল। অ্যাডিলেইডে ওই ম্যাচে ওরা আমাদের চেয়ে ভালো দল ছিল।”
বাংলাদেশের কাছে হারার পর নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে ইংল্যান্ড নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেলেও বাংলাদেশ এখনও পারেনি বিশ্ব ক্রিকেটে বড় শক্তি হয়ে উঠতে। পারেনি উল্লেখযোগ্য কোনো ট্রফি জিততে। ধ্বংসস্তুপ থেকে শীর্ষে ওঠার পথটা মর্গ্যানের চেয়ে ভালো আর কে জানে! বাংলাদেশও কীভাবে চূড়ায় উঠতে পারে, তা বাতলে দিলেন ইংল্যান্ডের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক।
“এটা অবশ্যই বড় এক চ্যালেঞ্জ। প্রতিভা ওদের যথেষ্টই আছে। তবে সেই প্রতিভা কীভাবে ব্যবহার করা যায় ও শাণিত করা যায়, এটির ওপরই নির্ভর করে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে কতটা লড়াই করতে পারবে।”
“ভবিষ্যতে তারা কোন পথে এগোবে, সেটিকে শনাক্ত করে, ভবিষ্যতে দলের চেহারা কেমন হবে, সেটায় প্রাধান্য ও গুরুত্ব দিয়ে, সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। এটা হয়তো তাদের জন্য উপযুক্ত হতে পারে এবং তাদের পক্ষে কাজ করতে পারে।”