শুধু বিশ্বকাপ ফাইনাল নয়, যত দিন সম্ভব নিজস্ব ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলে যেতে চান ভারত অধিনায়ক।
Published : 18 Nov 2023, 11:28 PM
চলতি বিশ্বকাপে ভারতের জয়যাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোহিত শার্মা। উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার কাজটি তিনি করছেন দারুণ ধারাবাহিকতায়। যার সুফল পাচ্ছে দল, সহজ হচ্ছে পরের ব্যাটসম্যানদের কাজ। ফাইনাল ম্যাচ তো বটেই, যত দিন সম্ভব ব্যাটিংয়ের এই ধরন অব্যাহত রাখতে চান ভারতের অধিনায়ক।
বৈশ্বিক এই আসরে এখন পর্যন্ত ৪০০ বা তার বেশি রান করেছেন ১১ জন ব্যাটসম্যান। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট রোহিতের। ১০ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে ৫৫০ রান তিনি করেছেন ১২৪.১৫ স্ট্রাইক রেটে। চারশ করা বাকি সব ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ১১৫’র নিচে।
অধিনায়কের এমন ব্যাটিংয়ে প্রায় প্রতি ম্যাচেই দারুণ শুরু পেয়েছে ভারত। ১০ ম্যাচে আট বার ২০ পেরিয়েছে তাদের উদ্বোধনী জুটি। প্রতিটিতেই রান তোলার হার ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি। রোহিতের সঙ্গে শুবমান গিলের জুটিতে ৮ ম্যাচে ভারত রান তুলেছে ওভারপ্রতি ৭.৮০ গড়ে।
এমন শুরুর পথ ধরে পরের ব্যাটসম্যানরা চালিয়েছেন তাণ্ডব। আগে ব্যাট করা পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই ভারত পেয়েছে তিনশ ছাড়ানো স্কোর। পরে ব্যাট করে জেতা পাঁচ ম্যাচেও খুব একটা পরীক্ষায় পড়তে হয়নি তাদের।
উড়তে থাকা এই দলের সামনে এখন শেষ বাধা অস্ট্রেলিয়া। আহমেদাবাদে রোববার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মাঠে নামবে স্বাগতিকরা। স্বপ্নের শিরোপা জয়ের অভিযানে এই ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এমন ব্যাটিংয়ের পেছনে নিজের ভাবনার কথা জানালেন রোহিত।
“সত্যি বলতে, বিশ্বকাপ শুরুর আগে, আমি একটা নির্দিষ্ট ধরনে খেলতে চেয়েছি। আমি জানতাম না, এতে সফল হব কি হব না। দুটির জন্যই আমার পরিকল্পনা ছিল যে সফল হলে পরের ম্যাচে কীভাবে খেলব অথবা সফল না হলে পরের ম্যাচে কীভাবে খেলব।”
“আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, যেহেতু আমি ইনিংস সূচনা করি, আমাদের একটা স্বাধীনতা থাকে, উইকেটে গিয়ে নিজেকে মেলে ধরার। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি হয়তো দেখেছেন। শুরুতে উইকেট হারানোয় আমাকে খেলার ধরন কিছুটা বদলাতে হয়েছে। আমি এটির জন্যও প্রস্তুত।”
চলতি বিশ্বকাপে ১০ ম্যাচের মধ্যে রানের খাতা খোলা ৯ ইনিংসের আটটিতেই একশর বেশি ছিল রোহিতের স্ট্রাইক রেট। শুধুমাত্র ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৭ রানের ইনিংস খেলেন ৮৬.১৩ স্ট্রাইক রেটে।
লক্ষ্ণৌর বোলিং সহায়ক উইকেটে পঞ্চাশের আগে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলায় সেদিন নিজের সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের বদলে দায়িত্ব নিয়ে দলকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেন ভারতের অধিনায়ক।
ফাইনালের আগের দিন, নিজের ধরন ধরে রাখার যে বার্তা দিয়েছেন, সেটিতে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার কথাও মনে করিয়ে দিলেন রোহিত।
“অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের এটিই করা উচিত। শুধু একভাবেই খেলার চিন্তা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। আপনার সামনে থাকা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। তো আমি এখন দলের জন্য যে দায়িত্ব সঠিক মনে হয়, সেটি করার জন্য প্রস্তুত। একে ঘিরেই আমি আমার প্রস্তুতি, কৌশল সাজিয়েছি।”
“ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি কী করতে চাই, তা সম্পর্কে আমার স্বচ্ছ ধারণা আছে। ভালো পিচে খেলা হলে আপনি কখনও কখনও বুঝতে পারেন, পিচটি ভালো এবং বোলারদের বিপক্ষে সুযোগ নেওয়া যাবে। আবার কখনও কখনও বুঝতে পারেন, পিচে বলের কিছুটা মুভমেন্ট আছে, তখন সেই অনুযায়ী নিজের ভাবনা বুঝতে হবে। তো আমি এসব ভাবনা ম্যাচে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।”
ক্রিকেট বা যে কোনো খেলায় সফল দলগুলোর খেলার ধরন তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে ওঠে। এবারের বিশ্বকাপে ভারতীয় দলও ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং; তিন বিভাগেই করেছে আগ্রাসী ব্র্যান্ডের ক্রিকেটের প্রদর্শনী।
ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষকে তুলাধুন করছেন রোহিত, গিল, ভিরাট কোহলিরা। বল হাতে আগুন ঝরাচ্ছেন মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহরা। ব্যাটিং-বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও রবীন্দ্র জাদেজা, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুলরা।
ফাইনাল ম্যাচেও ফলের দিকে অধিক জোর না দিয়ে নিজেদের এই ব্র্যান্ড ধরে রাখতে চান রোহিত।
“না! (শুধু জয়ের কথা না ভেবে) ব্র্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি কিছু করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন যে আমাদের এটি বাস্তবায়ন করবেন এবং আমার মনে হয়, আগে ব্যাটিংয়ের সময় বা রান তাড়ার সময় স্কোরের দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন, ছেলেরা এটি বাস্তবায়ন করেছে। অবশ্যই সাত জনের সবাই ক্রিজে গিয়েই ওই ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলে তেড়েফুঁড়ে মারতে পারবে না। অবশ্যই দলের যেভাবে ভালো হবে সে অনুযায়ী সবাইকে যার যার ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে।”
“আমার মতে আমরা ৯৯.৯ শতাংশ ওই ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলেছি। ০.১ শতাংশের কথা বলছি, কারণ আপনি সবসময় নিখুঁত হতে পারবেন না। এ কারণে আমি ০.১ শতাংশ বাইরে রেখেছি। তবে আমি ও রাহুল (দ্রাবিড়) যে বার্তা ছেলেদের দিয়েছি এবং দলে নিজেদের জায়গার কথা চিন্তা না করে, নিজের স্কোরের কথা চিন্তা না করে, বাইরে কী হচ্ছে তা চিন্তা না করে তারা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, আমি খুব খুশি।
শুধু বিশ্বকাপ নয়, যত দিন সম্ভব এই ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলে যাওয়ার ইচ্ছা রোহিতের।
“আমরা যে আবহ তৈরি করেছি, খুব স্পেশাল। যত দিন সম্ভব, আমরা এটি ধরে রাখতে চাই এবং বাইরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। কারও ব্যাট থেকে যদি রান নাও আসে, আমরা চাই না সে বিশ্বকাপ শুরুর আগে যেমন ছিল, সেই চিন্তার ধরন বদলে ফেলুক। তো এই বিষয়গুলো সবার সঙ্গে পরিষ্কার। আমার মনে হয়, যে দশ ম্যাচ আমরা খেলেছি, এই ভাবনায় সোজাসাপটা ছিলাম।”