দীর্ঘসময় দলের বাইরে থাকা নিয়ে সরাসরি না বললেও নিজের ভাবনা বুঝিয়ে দিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
Published : 25 Oct 2023, 01:15 AM
মাহমুদউল্লাহর সংবাদ সম্মেলন শেষে ওয়াংখেড়ের প্রেসবক্সে একটা প্রশ্ন উঠল। কেউ একজন বললেন, “আজকের আগে মাহমুদউল্লাহ সবশেষ কবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন?” বাংলাদেশের সংবাদকর্মীদের একজনও তা মনে করতে পারলেন না। মানে এতটাই আগে শেষবার তিনি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন!
অবশ্য, দীর্ঘদিন তিনি দলেও ছিলেন না। তার সেই দলে না থাকা নিয়েও ছিল নানা প্রশ্নের ভিড়- বিশ্রাম নাকি বাদ? তাকে দলের বাইরে রাখার সময় বিশ্রামের কথাই বলা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্রাম কতদিন চলতে পারে? প্রশ্নগুলো যে অমূলক ছিল না, তা এবার বললেন স্বয়ং মাহমুদউল্লাহও। তিনিও বললেন, এত দীর্ঘ ‘বিশ্রাম’ তার কাঙ্ক্ষিত ছিল না।
গত মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দলে রাখা হয়নি মাহমুদউল্লাহকে। তখন নির্বাচকরা বলেছিলেন, অন্যদেরকে পরখ করতে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে। ওই সিরিজের ঠিক আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তিনি ভালো করতে পারেননি।
দেশের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর ইংল্যান্ডেও আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজে তাকে রাখা হয়নি। পরে জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন হজ করার কারণে। এরপর অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপেও তিনি সুযোগ পাননি।
‘বিশ্রাম’ যখন এত লম্বা হয়, তখন তো সেটিকে ‘বাদ’ বলেই ধরে নিতে হয়। যদিও নির্বাচকরা বা টিম ম্যানেজমেন্ট তা এড়িয়ে গেছে বারবার।
তখন বিশ্বকাপ দলে জায়গা তো নয়ই, তার ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। কিন্তু তার বদলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটাররা পারেননি নিজেদের মেলে ধরতে। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তার সুযোগ হয়। খুব ভালো করতে না পারলেও এক ইনিংসে ৪৯ রান করেন। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলেও ঠাঁই হয় তার।
বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে একাদশে থাকলেও ব্যাটিং পাননি। পরের ম্যাচে ছিটকে পড়েন একাদশের বাইরে। চেন্নাইয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ফিরে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর পুনেতে ভারতের বিপক্ষে ৩৬ বলে ৪৬ রানের ইনিংসের পথে সেরা সময়ের কিছু ঝলক দেখান। মুম্বাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তো সেরা ফর্মেই ফিরলেন। বিপর্যয়ের মধ্যে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে বিব্রতকর অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও উদ্ধার করলেন দলকে।
এই সেঞ্চুরি তার মুখের হাসি যেমন ফিরিয়ে দিল, তেমনি বহুদিন পর তাকে আবার নিয়ে এলো সংবাদ সম্মেলনে। দীর্ঘ বিরতির পর সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা উঠতেই চওড়া হাসি খেলে গেল তার মুখে, “সুযোগ পাইনি তো…।”
সুযোগ না পাওয়ার প্রসঙ্গেই এলো তার সেই আলোচিত বিশ্রামের কথা। মাহমুদউল্লাহ সরাসরি কিছু না বললেও ঠিকই বুঝিয়ে দিলেন তার ভাবনা।
“নাহ… রেস্ট মনে হয় একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। (হাসি)…এটা তো আমার কন্ট্রোলে কিছু নেই। তাদের সিদ্ধান্ত। দলের সিদ্ধান্ত। টিম ম্যানেজমেন্ট যেটা দলের জন্য ভালো মনে করেছে, সেটা করেছেন। আমার যে কাজটা সততা দিয়ে করতে পারি, দ্যাট ইজ গুড এনাফ ফর মি। দলের জন্যও। এটাই সব সময় চেষ্টা ছিল ও থাকবে।”
বাইরে থাকার সময়টায় মাহমুদউল্লাহ নিজের মতো পরিশ্রম করে গেছেন। সুযোগের অপেক্ষা করে গেছেন। শেষ পর্যন্ত সুযোগ লুফে নিয়েছেন। বিশ্বকাপে তিনটি সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান এখন তিনি। একাধিক আসরে সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটসম্যানও।
সুসময়ের দেখা পেয়ে মাহমুদউল্লাহ পেছনে ফিরে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা জানালেন দুঃসময়ে পাশে থাকাদের প্রতি।
“আমার কাছে মনে হয় এটা বেশ ভালো সুযোগ…যারা ওই সময়টায় আপনাদের মধ্য থেকে সাপোর্ট করেছেন তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। যারা সাপোর্ট করেননি, তাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ।”
“এই জিনিসগুলো ‘ট্রিকি’। দিনশেষে আপনি বাংলাদেশের জন্য খেলতে চাইবেন, এটাই সবাইকে প্রেরণা জোগায়। এর চেয়ে বড় প্রেরণা আর কিছু হতে পারে না। অনুপ্রেরণার বিষয় যদি বলেন…. শুধু বলব আলহামদুলিল্লাহ।”