সিকান্দার রাজার ব্যাটিং তাণ্ডব গড়ে দিল ব্যবধান, হেরে গেল বাংলাদেশ।
Published : 30 Jul 2022, 09:35 PM
১০ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের রান ৭৪, বাংলাদেশের রান ৮৬। ১৪ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ে ১১৪, বাংলাদেশ ১২৪। কিন্তু ব্যবধান গড়ে দিল শেষ ৬ ওভার। জিম্বাবুয়ে ইনিংসের শেষ ৬ ওভারে এমন তাণ্ডব চালালেন সিকান্দার রাজা, বাংলাদেশ না পারল বল হাতে তাকে থামাতে, না পারল ব্যাটিংয়ে জবাব দিতে। শেষ পর্যন্ত তাই হার দিয়ে শুরু হলো সিরিজ। বিফলে গেল নেতৃত্বের অভিষেকে নুরুল হাসান সোহানের দারুণ এক ক্যামিও।
হারারেতে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৭ রানে হারিয়ে এগিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসানদের ছাড়া নতুন এই অভিযানের শুরুটায় লড়াই খারাপ করেনি বাংলাদেশ। তবে পার্থক্য গড়ে দেয় রাজার ইনিংস।
কদিন আগে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুর্দান্ত ফর্ম এই ম্যাচেও বয়ে আনেন রাজা। ইনিংসের ১৪ ওভার শেষে তার রান ছিল ৫ বলে ৭। ইনিংস শেষে তিনি অপরাজিত থাকেন ২৬ বলে ৬৫ রান করে!
তার টর্নেডোতেই শেষ ৬ ওভারে ৯১ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। রাজার ওই ইনিংসের পাশে তরুণ ওয়েসলি মাধেভেরে করেন ৪৬ বলে ৬৭। ২০ ওভারে জিম্বাবুয়ে তোলে ২০৫ রান।
রান তাড়ায় লিটন কুমার দাসের ছোট্ট ঝড়ের পর শেষ দিকে সোহানের ইনিংসের সৌজন্যে বাংলাদেশ করতে পারে ১৮৮ রান।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৩৩ ম্যাচে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৩০ রানের, সেই সোহান নেতৃত্বের প্রথম ম্যাচে করেন ৪ ছক্কায় ২৬ বলে অপরাজিত ৪১।
এই সংস্করণে বাংলাদেশের মূল শক্তি মনে করা হয় বোলিং। কিন্তু চার বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে নামা দল এ দিন বোলিংয়েই খেই হারায় শেষ ভাগে। প্রথম ১০ ওভারে ৭৪ রান তোলা জিম্বাবুয়ে শেষ ১০ ওভারে তোলে ১৩১।
ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে ওই রান তাড়ার তাড়না দেখা গেছে বেশ কজনের ব্যাটিংয়ে। তবে অন্য কজন আবার পেছনে টেনেছেন দলকে।
দুই ছক্কার পরও এনামুল হক ২৬ রান করতে খেলেন ২৭ বল। শেষ দিকে সোহানের ম্যাটে যখন ঝড়, আরেকপ্রান্তে তাল মেলাতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন (১০ বলে ১৩)।
ওপেনিংয়ে মুনিম শাহরিয়ার ব্যর্থ আবারও (৮ বলে ৪)। লিটন শুরুতে অল্পের জন্য বেঁচে যান দুই দফায়। পরে তার দারুণ কিছু শটেই দল পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তোলে ৬০ রান। তিনি নিজে ছাড়িয়ে যান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হাজার রান।
তবে সম্ভাবনাময় ইনিংসটি থামে ১৯ বলে ৩২ রান করে। সহজ ক্যাচ দিয়েও তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন ফিল্ডার রিচার্ড এনগারাভা বল মুঠোয় নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগেই ফেলে দেওয়ায়। কিন্তু ক্যাচ থেকে বাঁচলেও তিনি হয়ে যান রান আউট।
এরপর এনামুল, আফিফ হোসেনরা পারেননি সময়ের দাবি মেটাতে। নাজমুল হোসেন শান্ত চেষ্টা করলেও আউট হয়ে যান ২৫ বলে ৩৭ করে। পরে সোহান খেলা জমিয়ে তোলেন কিছুটা, কিন্তু পেরে ওঠেননি একার চেষ্টায়।
ম্যাচের প্রথম ভাগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শুরুটায় মোটেও আভাস ছিল না দুইশ ছোঁয়ার। প্রথম দুই ওভারে স্রেফ ১২ রান তোলার পর তৃতীয় ওভারে তারা হারায় ওপেনার রেজিস চাকাভাকে। পাওয়ার প্লেতে রান আসে ৪৩।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের বলে মোসাদ্দেক হোসেনের জোরের ওপর করা বলে বোল্ড হয়ে যান অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন (১৮ বলে ২১)।
ওয়েসলি মাধেভেরে ও শন উইলিয়ামস সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নেন। দুজন শুরুতে একটু সময় নিয়ে ইনিংসটাকে থিতু করে পরে বাড়ান রানের গতি। দ্বাদশ ওভারে নাসুম আহমেদের চার বলের মধ্যে এক ছক্কা ও দুই চার মারেন উইলিয়ামস।
১৯ বলে ৩৩ রান করে অভিজ্ঞ উইলিয়ামস আউট হন মুস্তাফিজের স্লোয়ারে। ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া জুটি গড়ে তোলে জিম্বাবুয়ে এরপরই। মাধেভেরে ও রাজার স্ট্রোকের ফোয়ারা থামানোর পথ খুঁজে পায়নি বাংলাদেশের কোনো বোলার।
মুস্তাফিজের বলে ৩ রানেই একটি সুযোগ দিয়েছিলেন রাজা। কিন্তু ফাইন লেগে ক্যাচ নিতে গিয়ে উল্টো চার বানিয়ে দেন তাসকিন আহমেদ। রাজার ব্যাট এরপর শাসন করতে থাকে বাংলাদেশের বোলিং। তাসকিনকে দুর্দান্ত পুল শটে ছক্কা, শরিফুল ইসলামের এক ওভারে টানা দুই চার, আরেকটি টানা দুই ছক্কা মিলিয়ে ফিফটি করে ফেলেন তিনি স্রেফ ২৩ বলেই।
আরেক পাশে মাধেভেরের ব্যাটও তখন উত্তাল। ৩৭ বলে ফিফটি ছুঁয়ে তরুণ এই অলরাউন্ডার শেষ ওভারে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ৪৬ বলে ৬৭ করে। রাজা ইনিংসের শেষটা করেন দুর্দান্ত। শেষ তিন বলে তিনি মুস্তাফিজের বলে মারেন চার, ছক্কা, চার। জিম্বাবুয়ের রান তাতে ছাড়িয়ে যায় দুইশ।
টি-টোয়েন্টিতে তাদের তৃতীয় দুইশ রানের স্কোর এটি, বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম। সেই স্কোরই পরে তাদের এনে দিল জয়ের আনন্দ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ২০৫/৩ (চাকাভা ৮, আরভিন ২১, মাধেভেরে ৬৭ (আহত অবসর), উইলিয়ামস ৩৩, রাজা ৬৫*, বার্ল ০*; তাসকিন ৪-০-৪২-০, নাসুম ৪-০-৩৮-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৫০-২, মোসাদ্দেক ৩-০-২১-১, শরিফুল ৪-০-৪৫-০, আফিফ ১-০-৬-০)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮৮/৬ (মুনিম ৪, লিটন ৩২, এনামুল ২৬, শান্ত ৩৭, আফিফ ১০, সোহান , মোসাদ্দেক ১৩, নাসুম ; এনগারাভা ৪-০-৪৩-১, মাসাকাদজা ৩-০-২৩-১, চিভাঙ্গা ৩-০-২৮-০, উইলিয়ামস ২-০-৭-০, রাজা ৩-০-৩০-১, জঙ্গুয়ে ৪-০-৩৪-২, মাধেভেরে ১-০-১২-০)
ফল: জিম্বাবুয়ে ১৭ রানে জয়ী
সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে জিম্বাবুয়ে ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ : সিকান্দার রাজা