তৃতীয় দিনে উইকেট নাটকীয়ভাবে আগের দিনের চেয়ে বেশি ব্যাটিং সহায়ক হয়ে উঠেছে, সম্ভাব্য লক্ষ্য নিয়ে তাই ধন্দে আছেন ক্রিকেটাররাই।
Published : 30 Nov 2023, 08:01 PM
সিলেট টেস্ট এখন কৌতূহল জাগানিয়া এক মোড়ে অবস্থান করছে। আগের সব ভাবনা কিংবা অনুমান, সবই বদলে গেছে তৃতীয় দিনে। সেটি বাংলাদেশের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের কারণে যতটা, তেমনি উইকেটের অদ্ভুত আচরণের কারণেও।
দ্বিতীয় দিন শেষে মনে হচ্ছিল, কোনোভাবেই পঞ্চম দিনের চেহারা দেখবে না এই টেস্ট। এখন মনে হচ্ছে, পঞ্চম দিনে না যাওয়াটাই হবে বিস্ময়কর। দ্বিতীয় দিনের পর সম্ভাব্য ধারণা ছিল, শেষ ইনিংসে ২২০-২৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করাই হবে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ম্যাচ জিততে হলে সাড়ে তিনশ রানের লিড লাগবেই। মুমিনুল হক তো বললেন যে, এমনকি চারশ রানের লিডও লাগতে পারে জিততে হলে।
উইকেটের আচরণের নাটকীয় বদলের কারণেই ওলট-পালট হয়ে গেছে আগের সব হিসাব-নিকাশ। দ্বিতীয় দিনে উইকেট বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য। স্পিনাররা বেশ টার্ন পেয়েছিলেন। উইকেটের চিড় প্রকাশ্য হতে শুরু করেছিল। তৃতীয় দিনে এসব আরও বেশি হওয়ারই কথা। নিউ জিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত কোচ লুক রনকি তো দ্বিতীয় দিন শেষে বলেই গিয়েছিলেন, উইকেট আরও খারাপ হতে থাকবে।
কিন্তু তৃতীয় দিন সকাল থেকেই দেখা গেল উল্টো চিত্র। দিনের প্রথম ঘণ্টায় নিউ জিল্যান্ডের দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান টিম সাউদি ও কাইল জেমিসন অনায়াসেই ব্যাট করে গেলেন। পরে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েও একই চিত্র। আগের দিনের চেয়ে যেখানে বেশি টার্ন করার কথা, উল্টো তিন দিনের মধ্যে কম টার্ন হলো এ দিনই। যতটুকু টার্ন হলো, তাও তীক্ষ্ন নয়। ধীরগতির টার্ন খেলতে ব্যাটসম্যানদের খুব একটা সমস্যাই হলো না।
অসমান বাউন্সও তেমন একটা দেখা যায়নি। উইকেটের চিড় আরও বড় হওয়ার নমুনাও ফুটে ওঠেনি। সবকিছু মিলিয়ে উইকেট যেন আগের দিনের চেয়েও আরও ব্যাটিং সহায়ক হয়ে ওঠে এ দিন।
এই দিনের উইকেটে ব্যাটিং-বোলিং দুটিই করেছেন কাইল জেমিসন। নিউ জিল্যান্ডের এই পেসার তো বলেই দিলেন, তিন দিনের মধ্যে এ দিনই উইকেট সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং সহায়ক ছিল।
“ব্যাটিংয়ের জন্য সম্ভবত আজকেই সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল উইকেট। প্রথম দুই দিনে যে বাউন্স ছিল, আজকে ততটা ছিল না এবং অনেকটাই নিষ্প্রাণ হয়ে উঠেছে। টার্নও আজকে খুব একটা ছিল না, অসমান বাউন্সও নয়। এই টেস্টে খেলা যতটা হয়েছে, নিশ্চিতভাবেই আজকে ব্যাটিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো ছিল।”
চতুর্থ দিনে উইকেটে স্পিন কতটা ধরবে বা টার্ন কতটা মিলবে নাকি ব্যাটিং সহায়কই থাকবে, এসবের ওপর নির্ভর করছে ম্যাচের সম্ভাব্য গতিবিধি। উইকেটের আচরণ নিয়ে সবাই ধন্দে আছেন বলেই নিশ্চিত করে কোনো লক্ষ্যও কেউ নির্ধারণ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা মুমিনুল হকের কণ্ঠেও সেই অনিশ্চয়তার সুর।
“(কত রানের লক্ষ্য দিতে চাই) এটা বলাটা খুব কঠিন। আমার কাছে এখনও মনে হচ্ছে উইকেট ভালো। কত রান নিরাপদ, এটা বলা অনেক কঠিন। চারশও হতে পারে, সাড়ে তিনশও হতে পারে। কালকের উপর নির্ভর করে। কাল চতুর্থ দিন, অন্যরকম আচরণ করতে পারে। চারশ হলে ঠিক আছে…।”
মুমিনুল তো তবু সম্ভাব্য সংখ্যার কথা বলেছেন। জেমিসন তেমন কোনো সংখ্যাই মুখে আনলেন না।
“(কত রানে বাংলাদেশকে আটকানো প্রয়োজন) আমার কোনো ধারণাই নেই। কালকে সকালে দ্রুত গোটা দুয়েক উইকেট নিতে হবে আমাদের। প্রথম ইনিংসে আমরা দেখিয়েছি যে পিঠেপিঠি কিছু উইকেট নিতে পারলে লোয়ার অর্ডারও সহজেই ভেঙে দিতে পারি। কালকে এটিই লক্ষ্য থাকবে। তার পর দেখা যাক, রান তাড়ায় মোটামুটি মানের লক্ষ্য যেন ছেলেদের আমরা দিতে পারি।”