টুর্নামেন্টে শুরুর দিকে হুট করেই ছন্দ হারিয়ে আলোচনায় ছিলেন লোকেশ রাহুল। ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও এই ওপেনার করলেন ফিফটি। পরে ঝড় তুলে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিলেন সূর্যকুমার যাদব। রান তাড়ায় ভারতের বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারল না জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
মেলবোর্নে রোববার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বের শেষ ম্যাচে ৭১ রানে জিতেছে ভারত। ১৮৬ রানের পুঁজি গড়ে জিম্বাবুয়েকে তারা থামিয়ে দিয়েছে ১১৫ রানে।
নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার পরাজয়ে আগেই সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের। জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বর গ্রুপের শীর্ষ দল তারা।
শেষ চারে রোহিত শর্মারা আগামী বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হবে এক নম্বর গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল ইংল্যান্ডের। আগের দিন প্রথম সেমি-ফাইনালে লড়বে এক নম্বর গ্রুপের শীর্ষ দল নিউ জিল্যান্ড ও দুই নম্বর গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল পাকিস্তান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে প্রথম দেখায় ভারতকে ভালো শুরু এনে দেন রাহুল। আসরে নিজের প্রথম তিন ম্যাচে দুই অঙ্কে যেতে না পারা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান করেন তিনটি করে ছক্কা-চারে ৩৫ বলে ৫১ রান।
ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকা সূর্যকুমার খেলেন ৬১ রানের অপরাজিত ইনিংস। ২৫ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি ৪ ছক্কা ও ৬ চারে। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনিই।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ ওভারেই রোহিত শর্মাকে হারায় ভারত। ব্লেসিং মুজারাবানিকে পুল করে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন দলটির অধিনায়ক।
মুখোমুখি প্রথম বলেই চার মেরে রানের খাতা খোলেন বিরাট কোহলি। আরেক প্রান্তে দেখেশুনে শুরু করা রাহুল রানের গতিতে দেন দম। জমে ওঠে দুইজনের জুটি।
৪৮ বল স্থায়ী ৬০ রানের জুটি ভাঙে কোহলির বিদায়ে। শন উইলিয়ামসকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় লং-অফে ধরা পড়েন ২ চারে ২৬ রান করে।
পরের ওভারে সিকান্দার রাজাকে ছক্কায় উড়িয়ে টানা দ্বিতীয় পঞ্চাশে পা রাখেন বিশ্বকাপের শুরুর দিকে ছন্দের খোঁজে থাকা রাহুল। পরের বলেই অবশ্য বিদায় নেন তিনি আবারও ছক্কার চেষ্টায়।
টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে মেরে কিছুই করতে পারেননি রিশাভ পান্ত। বাউন্ডারিতে অসাধারণ এক ক্যাচে তাকে ফেরান বার্ল। ১৫ ওভার শেষে ভারতের রান ছিল ৪ উইকেটে ১০৭।
এরপর রীতিমত ঝড় তোলেন সূর্যকুমার। মুজারাবানিকে টানা দুই চার, রিচার্ড এনগারাভা ও টেন্ডাই চাটারাকে একটি করে ছক্কা-চার হাঁকান তিনি।
সূর্যকুমারের ঝড়ের বড় ঝাপটা যায় ইনিংসের শেষ ওভারে এনগারাভার ওপর দিয়ে। এই পেসারকে শেষ ওভারে দুটি ছক্কার সঙ্গে এক চার মারেন তিনি। ওই ওভারেই ২৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান।
শেষ ৫ ওভারে ৭৯ রান তোলে ভারত।
জবাব দিতে নেমে প্রথম বলেই ওয়েসলি মাধেভেরেকে হারায় জিম্বাবুয়ে। সামনে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন শর্ট কাভারে থাকা কোহলি। পরের ওভারে আর্শদিপ সিংয়ের ইনসুইঙ্গারে বোল্ড রেজিস চাকাভা।
ক্রেইগ আরভিন, শন উইলিয়ামস, টনি মুনিয়াঙ্গো ফেরেন দ্রুত। ৩৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় জিম্বাবুয়ে। এরপর দারুণ এক জুটি গড়েন রাজা ও বার্ল। ৩৫ বলে দুইজনে গড়েন ৬০ রানের ইনিংস।
১ ছক্কা ও ৫ চারে ২২ বলে ৩৫ বলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে বোল্ড হন বার্ল। এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেনি তারা। ৩ চারে ২৪ বলে ৩৪ রান করে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন রাজা। চাটারার ফিরতি ক্যাচ নিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস গুটিয়ে দেন আকসার প্যাটেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৮৬/৫ (রাহুল ৫১, রোহিত ১৫, কোহলি ২৬, সূর্যকুমার ৬১*, পান্ত ৩, পান্ডিয়া ১৮, আকসার ০*; এনগারাভা ৪-১-৪৪-১, চাটারা ৪-০-৩৪-০, মুজারাবানি ৪-০-৫০-১, মাসাকাদজা ২-০-১২-০, বার্ল ১-০-১৪-০, রাজা ৩-০-১৮-১, উইলিয়ামস ২-০-৯-২)
জিম্বাবুয়ে: ১৭.২ ওভারে ১১৫ (রাহুল ৫১, রোহিত ১৫, কোহলি ২৬, সূর্যকুমার ৬১*, পান্ত ৩, পান্ডিয়া ১৮, আকসার ০*; এনগারাভা ৪-১-৪৪-১, চাটারা ৪-০-৩৪-০, মুজারাবানি ৪-০-৫০-১, মাসাকাদজা ২-০-১২-০, বার্ল ১-০-১৪-০, রাজা ৩-০-১৮-১, উইলিয়ামস ২-০-৯-২)
ফল: ভারত ৭১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সূর্যকুমার যাদব