বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আয়ারল্যান্ডের জর্জ ডকরেল শোনালেন তার অবিশ্বাস্য রূপান্তরসহ ১৩ বছরের পথচলার নানা মোড়ের গল্প।
Published : 21 Mar 2023, 01:39 PM
কিছুদিন আগ পর্যন্তও ইনস্টাগ্রামে জর্জ ডকরেলের পরিচয় লেখা ছিল, “আমি ডানহাতি হলে হয়তো আমার কোনো কাজ থাকত না।” তিনি বাঁহাতি স্পিনার, আইরিশ ক্রিকেটের বিস্ময় বালক থেকে দেশের ইতিহাসের সফলতম বোলার হয়ে ওঠা নায়ক। পরিচয়টা তাই উপযুক্তই ছিল। কিন্তু সেই লেখা এখন আর নেই, তার পরিচয়ই যে বদলে গেছে! এখন তিনি ডানহাতি বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান, যিনি মাঝেমধ্যে টুকটাক বোলিং করেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সেই বদলে যাওয়ার গল্প শোনালেন তিনি।
ক্রিকেটার বাবার হাত ধরে ক্রিকেটে আসা, ১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলে খেলা, ১৮ বছর বয়সে বিশ্বকাপ খেলে শচিন টেন্ডুলকারের উইকেট শিকার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক যুগের বেশি পথচলায় বিশ্ব ক্রিকেট ও আইরিশ ক্রিকেটের পরিবর্তন, টেস্ট খেলার অপার্থিব অনুভূতি, কথা বললেন তিনি এই সবকিছু নিয়েই।
আপনার বয়স স্রেফ ৩০। তবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বয়স ১৩ বছর হয়ে গেছে। আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের বিস্ময় বালক থেকে এই পর্যন্ত আসা, পেছন ফিরে তাকালে ক্যারিয়ারটাকে কীভাবে দেখেন?
জর্জ ডকরেল: নিজের ক্যারিয়ার আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লাগে। অনেক মোড় এসেছে ক্যারিয়ারে। অনেক কিছুর ভেতর দিয়ে গিয়েছি। দারুণ উপভোগ করেছি।
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথম খেলার কথা মনে আছে আমার, সেই ম্যাচটি আমরা জিতেছিলাম (২০১০ সালে বেলফাস্টে)। পরে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশে এলাম। ১৮ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপে খেললাম, একের পর এক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ… সবই উপভোগ করেছি।
এই ১৩ বছরে ক্রিকেট খেলাটার অনেক বদলের স্বাক্ষী হয়েছি। আইরিশ ক্রিকেটও বদলে গেছে অনেক। ভালো লাগে সবই। বিশেষ করে, গত ১-২ বছরে এই দলের অংশ হওয়াটা দারুণ। আমার ভূমিকাও এখন বদলে গেছে। তো যেটা বললাম, ১৩ বছর ধরে দেশের ক্রিকেট ও বিশ্ব ক্রিকেটের এত পরিবর্তনের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়াটা দারুণ। আইরিশ ক্রিকেটের আজকের অবস্থানে উঠে আসার ব্যাপারটিও দারুণ উপভোগ করি।
আপনার ভূমিকা বদলে যাওয়ার প্রসঙ্গে আসা হবে পরে। আপনার ক্যারিয়ারের কথা বললে, যখন শুরু করেছিলেন, তখন কি ভাবতে পেরেছিলেন যে ১৩ বছর পরও আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলবেন! আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের ভিত তখনও খুব শক্ত ছিল না…
ডকরেল: নাহ, তখন এতটা ভাবতে পারার কোনো কারণ নেই। আর সত্যি বলতে, এত দূর ভবিষ্যতে কী হবে, সেটাও ভাবিনি খুব একটা। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। তখন ভেবেছি যে, শুরু করলাম, এরপর দেখা যাক…।
আইরিশ ক্রিকেট আজকের অবস্থানে আসবে, এটাও ভাবতে পারিনি। অনেক অনেক পরিশ্রম, চেষ্টা আর উদ্যোগের ফলে একটু একটু করে আমরা আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি। আমি জানি, বিশ্ব ক্রিকেটের ক্ষেত্রে আমাদের জায়গা এমন কিছু নয়। কিন্তু আইরিশ ক্রিকেটে আমরা জানি, এই অবস্থায় আসতে কতটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, কত কী করতে হয়েছে। আমি গর্বিত যে, এই পুরো প্রক্রিয়া দেখেছি এবং এর অংশ হয়েছি।
টেস্ট খেলাটা কি তখন আপনার স্বপ্নের সীমানায় ছিল? এখন টেস্ট খেলছেন, এই অনুভূতি কেমন?
ডকরেল: টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার খবরটি যখন শুনলাম, সেই অনুভূতিই ছিল অবিশ্বাস্য। টেস্ট ক্রিকেট হলো খেলাটার চূড়া, যে কোনো ক্রিকেটারের স্বপ্ন।
আমি যখন শুরু করেছিলাম, তখন আয়ারল্যান্ড মাত্র একটি বিশ্বকাপ খেলেছে (ওয়ানডে)… কোনো একদিন টেস্ট খেলার স্বপ্ন আমরা দেখতাম, তবে সেটা কবে, কোনো ধারণা ছিল না। পরে যখন টেস্ট মর্যাদা পেলাম, টেস্ট খেলতে নামলাম, অতিপ্রাকৃত ব্যাপার ছিল যেন।
টেস্ট ক্যাপ যখন স্পর্শ করলেন প্রথমবার, ঠিক ওই মুহূর্তটি কেমন ছিল?
ডকরেল: আয়ারল্যান্ডের হয়ে ততদিনে দুইশর মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছি। ৯ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি তখন। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার অনুভূতি তাই জানতাম ভালোভাবেই। কিন্তু টেস্ট খেলতে নামার অনুভূতির কোনো তুলনা হয় না। অবিশ্বাস্য রকমের স্পেশাল ছিল তা। শুধু আমার জন্য নয়, আমি নিশ্চিত, আমাদের সবার জন্যই।
দুঃখজনক যে খুব বেশি টেস্ট আমরা এখনও পর্যন্ত খেলতে পারিনি (৬ বছরে আয়ারল্যান্ড খেলেছে স্রেফ ৩ টেস্ট)। আরও খেলতে পারলে ভালো লাগত। তবে এই বছর কিছু টেস্ট আছে। এখানে একটি টেস্ট আছে। চার বছর পর টেস্ট খেলব আমরা। এরপর শ্রীলঙ্কায় দুটি, এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে। দারুণ রোমাঞ্চকর সময় আমাদের অপেক্ষায়। আগামী বছরও কিছু আছে টেস্ট।
ম্যাচগুলি মোটেও সহজ হবে না। কঠিন পরীক্ষা হবে আমাদের। তবে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এরকম চ্যালেঞ্জই তো সবাই চায়!
সেই ১৯ বছর বয়স থেকে আপনি সমারসেটের হয়ে খেলেছেন ইংলিশ কাউন্টিতে। কখনও কি মনে উঁকি দিয়েছে, টেস্ট খেলার জন্য হলেও ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার চেষ্টা করতে? ওয়েন মর্গ্যান, বয়েড র্যানকিনরা তো বদলে ফেলেছিলেন দল…
ডকরেল: দেখুন, মর্গ্যান যখন চলে গিয়েছিল, আইরিশ ক্রিকেটের অবস্থা তখন আজকের মতো ছিল না। অনেকটাই নড়বড়ে ও নাজুক ছিল। কেন্দ্রীয় চুক্তি বলে কিছু ছিল না, খুব বেশি সমর্থন-সহায়তা ছিল না, এখনকার মতো এত খেলা তো ছিলই না। তখন কেউ জানত না পরের ম্যাচটি কবে।
এখন অনেক কিছুই বদলে গেছে। হ্যাঁ, আমিসহ আমাদের দলের আরও অনেকে অনেক বছর কাউন্টি খেলেছি। ইংল্যান্ডে খেলে অনেক শিখেছি আমি। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের খেলা যখনই ছিল, আমি কখনোই মিস করতে চাইনি।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার ব্যাপারে আমি অবিশ্বাস্যরকমের প্যাশনেট, সবসময় আয়ারল্যান্ডের হয়েই খেলতে চেয়েছি পুরো ক্যারিয়ারে। আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটের আজকের অবস্থানে তাই আরও বেশি ভালো লাগে। দেশে এখন নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট হচ্ছে, বছরজুড়ে ট্রেনিং হয়, অনেক দূর এসেছি আমরা। অসাধারণ ব্যাপার এসব।
কাউন্টি ক্রিকেট আমি উপভোগ করেছি। আমার ও আয়ারল্যান্ডের আরও অনেক ক্রিকেটারের এগিয়ে চলায় বড় ভূমিকা আছে কাউন্টি ক্রিকেটের। কিন্তু আমি আয়ারল্যান্ডের হয়েই খেলতে চেয়েছি এবং চাই।
আপনার ছেলেবেলায় ফিরে তাকালে, ক্রিকেট শুরু করলেন কখন? আপনার বাবা ডেরেক ডকরেল তো ক্রিকেটার ছিলেন, তার হাত ধরেই শুরু?
ডকরেল: হ্যাঁ, বাবা যেখানে খেলতে যেতেন, আমাকে সঙ্গে নিতেন। তার মাধ্যমেই শুরু। পরিবারে আমরা নিজেরা, কখনও আশেপাশের অনেকে মিলে ক্রিকেট খেলতাম। ছেলেবেলায় অনেক খেলাই খেলেছি, তবে ক্রিকেটই বেশি ভালো লাগত ছোট থেকে। ১৩-১৪ বছর বয়স থেকে সম্ভবত সিরিয়াসলি ভাবা শুরু করলাম ক্রিকেট নিয়ে।
এরপর স্কুলে, আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের বয়সভিত্তিক নানা দলে খেলতে শুরু করলাম। অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে বারবাডোজে গেলাম। এরকম কয়েকটি সফরের পর এই পথই আমার ঠিকানা হয়ে গেল।
১৭ বছর বয়সেই জাতীয় দলে জায়গা পেয়ে গেলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক দেশের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাস্তবতা নিয়ে কতটা ধারণা ছিল তখন?
ডকরেল: খুব বেশি না। সেটাই আসলে ভালো হয়েছে। জটিল করে ভাবিনি কিছু। তখন স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে সফরে যেতে হতো।
বয়স কম হওয়ায় চাপ অনুভব করতাম না। ওই সময় দলটাও দারুণ ছিল আমাদের। সবাই আমার খেয়াল রাখত, পাশে থাকত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে শিখেই বরং বেশি চাপ অনুভব করেছি।
১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলে ঢোকা ছিল স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। তখনও আমি স্কুলের শেষ বছরে। সেখান থেকে কদিন পর বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া, বিশ্বের সেরা সব দলের বিপক্ষে খেলা, এসব তো আসলে কল্পনারও বাইরে ছিল ওই বয়সে।
আমার পরিবারও দারুণ সহায়তা করেছে। স্কুলে যাব নাকি ম্যাচ খেলতে, সফরে যাব নাকি স্কুলের পরীক্ষা দেব, এসব টানাপোড়েনে পরিবারের সবাই পাশে থেকেছে। সবসময় তারা বলেছেন, “পরীক্ষা তুমি পরেও দিতে পারবে, কিন্তু জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পরে নাও আসতে পারে।”
সব মিলিয়ে খুবই সৌভাগ্যবান ছিলাম, বলতেই হবে।
বিশ্ব ক্রিকেটে আপনি প্রথম সাড়া ফেলেন সম্ভবত ২০১১ বিশ্বকাপে শচিন টেন্ডুলকারকে আউট করে। ১৮ বছর বয়সে কিংবদন্তিকে আউট করার সেই অনুভূতি মনে পড়ে?
ডকরেল: এটা কি কখনও ভোলা যায়! ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই জীবনের সেরা উইকেটটি পেয়েছিলাম। খুব দারুণ কোনো ডেলিভারি ছিল না, কিন্তু টেন্ডুলকারকে আউট করা ডেলিভারি সবসময়ই সেরা ডেলিভারি!
মনে আছে, এক মুহূর্ত আগ পর্যন্তও যে স্টেডিয়ামে গগণবিদারী চিৎকার ছিল, হুট করে সেখানে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। এখনও পর্যন্ত আমার সবচেয়ে স্মরণীয় উইকেট এটি, ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্তও সম্ভবত তা-ই থাকবে।
অথচ এখন আপনি আর নিয়মিত বোলার নন! অনেকেরই কৌতূহল এটা নিয়ে। এত অল্প বয়সে শুরু করলেন, এত এত সাফল্য ধরা দিল। এখন তো স্পিনার হিসেবে আরও সমৃদ্ধ, আরও পরিণত হওয়ার কথা। বোলিংয়ে কি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন?
ডকরেল: নাহ, তা নয়। আসলে খেলাটাই বদলে গেছে অনেক। বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমারও নিজেকে বদলাতে হতোই।
একসময় যে ধরনের বোলিংয়ে সাফল্য পেতাম… প্রথাগত ঘরানার বাঁহাতি স্পিনার ছিলাম আমি, এমনকি যে ম্যাচের কথা বললেন, ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচের ভিডিও যখন দেখি বা ওই সময়ের অন্যান্য ম্যাচের, তখন অনেক ধীরগতিতে বল করতাম, অনেক ফ্লাইট দিতাম। ব্যাটসম্যানরা মারার চেষ্টাও করত না। পরে খেলাটা বদলে গেল অনেক। এখন ওই গতিতে বল করলে ব্যাটসম্যানরা আমাকে বলে বলে চার-ছক্কা মারবে, গ্যালারিতে ফেলবে।
আমার তাই নিজেকে ভাঙা-গড়ার মধ্যে নিতে হয়েছে। বোলিং নিয়ে কাজ করেছি, অ্যাকশন বদলেছে, অনেক কোচের পরামর্শ নিয়ে আরও ভালো হয়ে উঠতে চেয়েছি। সময়ের দাবি মেটানোর চেষ্টা করেছি। এসব করতে গিয়েই হয়তো ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলেছি। টার্ন তো কমেছেই, ধারও কমে গেছে। যেভাবে চেষ্টা করছিলাম, সেটা শেষ পর্যন্ত কাজে দেয়নি। তারপর আর আমার সহজাত বোলিংটা ফিরে পাইনি।
যেটা বললাম, খেলাটা এখন অনেক বদলে গেছে। ফিঙ্গার স্পিনারদের জন্য কাজটা খুবই কঠিন। লড়াইয়ে টিকতে হলে বোলিং নিয়ে অনেক কিছু করতে হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার তা হয়ে ওঠেনি। এখনও বোলিং করি প্রয়োজনে। মূল বোলারদের বিকল্প হিসেবে অধিনায়ক ধরে রাখেন আমাকে। তবে ব্যাটসম্যান হিসেবে বা ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে ভূমিকা আমি পুরোপুরি উপভোগ করছি। এই অধ্যায়টাও দারুণ রোমাঞ্চকর আমার কাছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত বছর খেলার পর বোলার থেকে পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠা তো কঠিন! স্টিভেন স্মিথের উদাহরণ আছে বটে, তবে সেটা তো তার ক্যারিয়ারের শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই। আপনি বোলার হিসেবে এত বছর খেলার পর ব্যাটসম্যান হয়ে উঠলেন কিভাবে?
ডকরেল: ব্যাটিংয়ের কিছু ব্যাপার আমার ভেতরে ছিলই। অনূর্ধ্ব-১৩ দলে খেলার সময় তো ওপেনার ছিলাম। পরেও ব্যাটিং মোটামুটি পারতাম। বোলার হিসেবে জাতীয় দলে ঢোকার পর ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেওয়া কমে যায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে কার্যকর ইনিংস খেলেছি। একটু একটু করে ব্যাটিংয়ে মন দিয়েছি। ১০-১১ নম্বরে ব্যাটিং করলেও কোচদের সঙ্গে কাজ করেছি।
পরে কাউন্টি ক্রিকেট খেলেও ব্যাটিংয়ে উন্নতি করেছি। সমারসেটের একাদশে জায়গা পেতে বাড়তি কিছু করার তাগিদ অনুভব করছিলাম। তখনই ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছি । বোলার হিসেবে খেলার সময়ও কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টুকটাক রান করেছি।
ঘরোয়া ক্রিকেটেও রান করেছি। ২০১৭ সালের পর ঘরোয়া ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আমার ব্যাটিং গড় একশর মতো ছিল।
বোলিংটা আসলে প্রত্যাশিত গতিতে এগোয়নি আমার। দলে জায়গা নড়বড়ে হয়ে পড়ে, বাদও পড়তে হয়। এক পর্যায়ে বেশ কিছুদিন বাইরে থাকতে হয়েছে। কোচ তখন বলেছিলেন, ব্যাটিংয়েই যেন আমি বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখি এখন। তখনও ব্যাটিং নিয়ে অনেক খেটেছি। বিশেষ করে পিটের সঙ্গে (আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের কোচ পিট জনস্টন) অনেক কাজ করেছি ব্যাটিং নিয়ে।
এরপর নতুনভাবে ফিরেছি নতুন পরিচয়ে। এখন জাতীয় দলে আমার ভূমিকা অনেকটা ফিনিশারের মতো। কখনও দল আমার কাছে ৫ বলে ১০ রান চায়। কখনও আরও বেশি। নানা পরিস্থিতির যে চ্যালেঞ্জ, এটা খুবই উপভোগ করছি।
টেস্টে অবশ্য আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। এই সফরে টেস্ট স্কোয়াডে আছি আমি। এখনও পর্যন্ত ক্যারিয়ারে ১টি টেস্টই খেলতে পেরেছি। এবার যদি টেস্ট ম্যাচটা খেলতে পারি, চেষ্টা করব বড় কিছু করতে। যদি আমরা লড়াই করতে পারি, টেস্ট জয়ের প্রথম স্বাদটা পেতে পারি এবং আমি অবদান রাখতে পারি, দারুণ হবে।
প্রয়োজনে বোলিংয়ের জন্য তো সবসময়ই প্রস্তুত আছি। অনুশীলনও করি। ব্যাটিং-বোলিং দুটিই যেহেতু আছে, এখন আমি আগের চেয়ে আরও বেশি নির্ভার হয়ে খেলতে পারি।
বাংলাদেশের সঙ্গে গত এক যুগে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছেন। বিশেষ কোনো স্মৃতি আছে?
ডকরেল: প্রথমবার বাংলাদেশে আসার স্মৃতি! বিশ্বকাপে আমার প্রথম ম্যাচ ছিল সেটি (২০১১)। মিরপুরে সেদিন অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা হয়েছিল, এত দর্শকের সামনে তো আগে কখনও খেলিনি!
মনে আছে, খেলার আগে আমি গা গরম করছিলাম। হঠাৎ ভয়ঙ্কর চিৎকার শুনে গ্যালারির দিকে চমকে তাকালাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছে!’ কেউ একজন পাশ থেকে বলল, ‘আমরা টস হেরেছি, বাংলাদেশ জিতেছে।’
উইকেট বেশ মন্থর ছিল সেদিন। এই কন্ডিশনে বোলিং করে ভালো লেগেছিল, ভালো বোলিংও করেছিলাম সেদিন (১০-২-২৩-২)। তবে আমরা ম্যাচ জিততে পারিনি। তারপরও ১৮ বছর বয়সে ওইরকম উৎসবের আবহের মধ্যে বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে পারা, স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের ভবিষ্যৎ কিভাবে দেখেন? ৫ বছর পর কোথায় দেখতে চান নিজেকে?
ডকরেল: অতদূর আমার ভাবনায়ও নেই! আমি এখন এক বছর ধরে ভাবছি। প্রতিবছরই দেখব, কোথায় আছি, কেমন করছি, কতটা ভালো লাগছে। আগে যেটা বললাম, এখনও পর্যন্ত দারুণ উপভোগ করছি। সামনে বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে হবে হয়তো। ভারতের বিশ্বকাপে খেলতে পারলে অসাধারণ হবে। আপাতত এসবই ভাবছি। আগামী বছর আবার নতুন করে ভাবব।