চার শিরোপা জেতার পর প্রথমবার ফাইনাল হারলেও বিশেষ এক প্রাপ্তিতে বড় তৃপ্তির উপকরণ পাচ্ছেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
Published : 02 Mar 2024, 09:00 AM
টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ খেলে শেষে ছন্দপতন। শিরোপার হ্যাটট্রিক করার অভিযানে নেমে উল্টো প্রথমবার রানার্স-আপ হওয়ার বেদনায় পুড়ল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তবে শেষের হতাশাকে ছাপিয়ে বড় এক প্রাপ্তিতে তৃপ্তি খুঁজে নিচ্ছেন দলের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
গত কয়েক বছরে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়াকে একরকম অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছিল কুমিল্লা। এবারের আগে চার আসরের তিনটিতে অংশ নেয় তারা। প্রতিবারই টুর্নামেন্ট শেষ করে ট্রফি উঁচিয়ে ধরে। এর আগে ২০১৫ সালে তারা জেতে নিজেদের প্রথম শিরোপা। প্রতিবার দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন সালাউদ্দিন।
টানা শিরোপা জেতার মধ্যে থাকলেও দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে বরাবরই হতাশার কথা বলতে শোনা গেছে সালাউদ্দিনকে। গত আসরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাণ্ডজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় এই কোচ। স্থানীয় ক্রিকেটারদের ম্যাচ পরিস্থিতি পড়তে পারার সামর্থ্য নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
তবে এবার অনেকটা বদলেছে সেই চিত্র। টুর্নামেন্টের মাঝপথে সংবাদ সম্মেলনে কয়েকবার তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলি, আলিস আল ইসলামদের প্রশংসা করেন সালাউদ্দিন। দেশি ক্রিকেটারদের গ্রাফ উর্ধ্বমুখী বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ।
সেটিরই ধারাবাহিকতায় টুর্নামেন্ট শেষে আরও একবার নিজ দলের দেশি ক্রিকেটারদের কথা মনে করিয়ে দিলেন সালাউদ্দিন। ফাইনাল হারের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সই এবারের আসরের ইতিবাচক দিক।
“আমি মনে করি যে, এই বছর আমি আরও বেশি খুশি। বিশেষ করে স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য। কারণ পুরো টুর্নামেন্টেই স্থানীয় ছেলেরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। তাদের পারফরম্যান্স অনেক ভালো ছিল। আমাদের অন্যবারের তুলনায় (দেশিরা) এবার অনেক ভালো পারফরম্যান্স করেছে। যেটা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক।”
বিপিএলের প্রতি আসরে বিদেশি নামি তারকা দলে নেয় কুমিল্লা। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। শুরুর দিকে না পেলেও শেষ অংশে এসে আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারাইন, জনসন চার্লস, মইন আলিরা যোগ দেন দলে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রত্যাশামতো পারফর্ম করতে পারেননি কুমিল্লার বিদেশিরা।
বিশেষ করে ফাইনালে নিজেদের ছায়া হয়েই ছিলেন নারাইন, চার্লস, মইনরা। শেষ দিকে ৪ ছক্কায় রাসেলের ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংসে দেড়শ পেরোয় চারবারের চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু বল হাতে খরুচে ছিলেন ক্যারিবিয়ান তারকা।
সব মিলিয়ে বিদেশিদের কাছ থেকে প্রত্যাশা অপূর্ণ থাকার কথাই বললেন সালাউদ্দিন।
“আমাদের বিদেশিরা সেভাবে পারফর্ম করতে পারেনি, যেমনটা আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম... সবসময় যা হয়। তবে এমন হতেই পারে। এই টুর্নামেন্ট থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতেও পারব। সঠিক জায়গায় যথাযথ ক্রিকেটার ভালো খেললে হয়তো আরও ভালো ফল পেতাম।”
কুমিল্লার দেশিদের মধ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন হৃদয়। গত আসরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবার ১৪ ম্যাচে তিনি করেছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬২ রান। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির আসরে ১৪৯.৫১ স্ট্রাইক রেটে এই রান করেছেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
এছাড়া কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের ১৪১.১৩ স্ট্রাইক রেটে ১৯৯ রান করেছেন। ফাইনালে ব্যর্থ হলেও আগের ম্যাচগুলোতে দলের প্রয়োজনের সময় দ্রুত রান তোলার চাহিদা ভালোভাবেই মিটিয়েছেন তিনি। আসরের বাজে শুরুর পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক লিটন কুমার দাস করেছেন ৩৯১ রান।
বোলিংয়ে ১৩টি করে উইকেট নেন তানভির ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান। অল্প কিছু ম্যাচে সুযোগ পেয়ে সামর্থ্যের ছাপ রাখেন মুশফিক হাসান। এছাড়া নজর কাড়েন রহস্য স্পিনার আলিস আল ইসলাম। বিপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলেও জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। সীমিত সুযোগ ভালো করেছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনও।
দেশি ক্রিকেটারদের ওপর সন্তুষ্টির কথা তাই বেশ জোর দিয়েই বলেন কুমিল্লার কোচ।
“এই টুর্নামেন্টে আমার দলের দেশি ক্রিকেটারদের ওপর খুবই খুশি। তাদের পারফরম্যান্স, আগ্রাসন, জেতার মন-মানসিকতা যেটা ছিল, সেটার জন্য আমি মনে করি যে ঠিক আছে। এখান থেকে এই ইতিবাচক জিনিসটা নেওয়া যায়।”