বিশ্বকাপে কুইন্টন ডি ককের আরেকটি শতকে ওলটপালট হলো রেকর্ড বইয়ের আরও কিছু পাতা।
Published : 01 Nov 2023, 06:20 PM
জেমস নিশামের লেংথ বল উড়িয়ে মারলেন কুইন্টন ডি কক। লং লেগ দিয়ে বল আছড়ে পড়ল গ্যালারিতে। ৯৪ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার ছুঁয়ে ফেললেন কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্ক। উইকেটে সঙ্গীকে আলিঙ্গনে বাঁধার পর উঁচিয়ে ধরলেন ব্যাট ও হেলমেট। চলতি বিশ্বকাপের খুব পরিচিত এক দৃশ্য- ডি ককের আরেকটি শতক উদযাপন।
এবারের শতকটি এলো নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বুধবার ১১৬ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৪ রানের আলো ঝলমলে ইনিংস খেললেন ডি কক।
আসরে ৭ ইনিংসে তার চতুর্থ সেঞ্চুরি এটি। বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি শতকের তালিকায় তিনি ছুঁয়ে ফেললেন কুমার সাঙ্গাকারাকে। ২০১৫ আসরে চার শতক করেছিলেন শ্রীলঙ্কান গ্রেট। এক আসরে তাদের চেয়ে বেশি শতক আছে কেবল রোহিত শার্মার, ২০১৯ আসরে পাঁচটি।
এই সেই ডি কক, বিশ্বকাপে একটি শতকের জন্য যাকে হাপিত্যেশ করতে হয়েছে গত দুটি আসরে। ২০১৫ ও ২০১৯ আসর মিলিয়ে ১৭ ইনিংসে চারবার পঞ্চাশ ছুঁলেও তিন অঙ্কে যেতে পারেননি তিনি একবারও। সর্বোচ্চ ৭৮ রানের অপরাজিত ইনিংস ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৫ সালে।
ওই আসর জুড়েই ব্যাট হাতে নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। ৮ ইনিংসে ২০.৭১ গড়ে করতে পারেন কেবল ১৪৫ রান। ২০১৯ আসর তার তুলনামূলক ভালো কাটে। সেবার ৯ ইনিংসে ৩৮.১২ গড়ে রান ৩০৫। ফিফটি তিনটি।
দুই আসর মিলিয়ে রান ছিল মোটে ৪৫০। সেখানে এবার ৭ ইনিংসেই হয়ে গেছে ৫৪৫ রান। চারবার পঞ্চাশ ছুঁয়ে প্রতিটিকে রূপান্তর করেছেন শতকে।
বিশ্বকাপের এক আসরে পাঁচশ রান করতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার আর কেউ। ২০০৭ আসরে ৯ ইনিংসে জ্যাক ক্যালিসের ৪৮৫ রান ছিল আগের রেকর্ড।
আরেকটি রেকর্ডও হয়ে গেছে ডি ককের। কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রান ছিল এতদিন সাঙ্গাকারার, ২০১৫ আসরের ৫৪১।
এক আসরে ভারতীয় কিংবদন্তি সাচিন টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ ৬৭৩ রানের রেকর্ডও এখন হুমকির মুখে। ২০০৩ বিশ্বকাপে রেকর্ডটি গড়েছিলেন টেন্ডুলকার।
এই বিশ্বকাপ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ঘোষণা আগেই দিয়েছেন ডি কক। যেন শেষটা রাঙানোর মিশনে নেমেছেন তিনি।
৩০ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আসরে প্রথম ম্যাচেই শতক উপহার দেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ওয়ানডেতে ১৭ শতকের পর বিশ্বকাপে পান প্রথমটি। বিশ্ব মঞ্চে প্রথম শতকের আগে বেশি ওয়ানডে শতক করতে পারেননি আর কেউ।
ওই ম্যাচে তিনি খেলেন ৮৪ বলে ১০০ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার শতক, এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৬ বলে ১০৯।
পরের দুই ম্যাচে অবশ্য ভালো করতে পারেননি তিনি। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২০ রানের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আউট হয়ে যান ৪ রানে। এরপরই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেন ১৪০ বলে ১৭৪ বিধ্বংসী ইনিংস।
পরের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে থমকে যান তিনি ২৪ রানেই। আর এবার নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এই ইনিংস। এ দিন শুরুটা যদিও তার ছিল খুব মন্থর। প্রথম বাউন্ডারির দেখা পেতে লেগে যায় ১৯ বল। প্রথম ৩৯ বলে রান ছিল স্রেফ ২২। এরপর বাড়ে গতি।
পঞ্চাশ স্পর্শ করেন তিনি ৬২ বলে। ১০৩ বলে ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্ক। এই সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে বেশি শতকের তালিকায় তিনি বসলেন হার্শেল গিবসের পাশে, দুজনেরই ২১টি করে। ওপরে আছেন কেবল এবি ডি ভিলিয়ার্স (২৫) ও হাশিম আমলা (২৭)।
তিন বিশ্বকাপ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ডি ককের ছক্কা হয়ে গেছে ২২টি। এটিও বিশ্বকাপে কোনো কিপার-ব্যাটসম্যানের রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ১৯টি।
যেভাবে ডি কক ছুটছেন, সামনে আরও কত রেকর্ড-কীর্তি তিনি গড়বেন, তা সময়ই বলে দেবে!