টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদের মতে, কিছু একটা ঠিকঠাক হচ্ছে না মুস্তাফিজুর রহমানের।
Published : 31 Aug 2022, 09:20 PM
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে আশার গান গেয়েছিলেন শ্রীধরন শ্রীরাম। কিন্তু প্রথম ম্যাচে বাঁহাতি এই পেসারের বোলিংয়ে আবারও সেই বেসুরো ছন্দ। দলের মূল স্ট্রাইক বোলারের বেহাল দশায় মাঠে নিয়মিতই দুর্দশায় পড়তে হচ্ছে দলকে। বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বললেন, মুস্তাফিজের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভাবাচ্ছে তাদের।
শারজাহতে মঙ্গলবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরে যাওয়া ম্যাচে ৩ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন মুস্তাফিজ। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার ওভারে ১৭ রান নিয়েই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয় আফগানিস্তান।
গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪ ম্যাচে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। ওভার প্রতি দিয়েছিলেন ১০ রান করে। এবারও বের হতে পারেননি আমিরাতে বাজে বোলিংয়ের ধারা থেকে।
বিশ্বকাপের পর থেকে এখনও পর্যন্ত তার পারফরম্যান্সে নেই আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু। বরং উদ্বেগের জায়গা আছে ঢের। বিশেষ করে ডেথ ওভারে তার ওপরই নির্ভর করে দল। কিন্তু এখানে তিনি আশাহত করছেন বারবার।
গত এক বছরে ম্যাচের পর ম্যাচে বিবর্ণ থাকা এই মুস্তাফিজকে দেখেননি শ্রীরাম। বাংলাদেশ দলে যোগ দেওয়ার পর নেটে তিনি কাছ থেকে দেখেন এই বাঁহাতি পেসারের বোলিং। সেই দেখা থেকে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচের আগের দিন।
“নেটে যেমন বোলিং করছে, নতুন বল যেভাবে সুইং করাচ্ছে, ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে আনছে, আমি মনে করি, সে খুব বিপজ্জনক একজন। যখন সে নতুন বল ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য ভেতরে আনতে পারবে, তখনই তার সেরাটা পাওয়া যাবে। আমরা বিশ্বাস করি, এখন সে সেরা পর্যায়ে আছে।”
বাস্তবে তিনি কোন পর্যায়ে আছেন, এটা তো আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচেই ফুটে উঠেছে। ম্যাচের পরদিন দুবাইয়ে সংবাদ সম্মেলনে খালেদ মাহমুদ বললেন, তাদের কপালেও পড়েছে দুর্ভাবনার ভাঁজ।
“আমরাও এটা নিয়ে একটু উদ্বিগ্ন। আমরাও যে জানি না, তা নয়। প্রশ্নটা একদম নতুন না আমাদের কাছে। আমরা যে এটা নিয়ে ভাবছি না, তা নয়।”
“তবে আমি বিশ্বাস করি, সে এখনও সেরাদের একজন। ওর যে বৈচিত্র্য আছে বোলিংয়ে, সেটা হয়তো আমাদের অনেক পেসারের নেই। হয়তো ওই বৈচিত্র্য কাজে লাগছে না বা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। কিছু একটা হচ্ছে।”
পারফরম্যান্স ভালো না হলেও একাদশ গড়ার সময় এখনও বোলিং আক্রমণে সবার আগে বসানো হয় মুস্তাফিজের নামই। সেটির কারণও ব্যাখ্যা করলেন টিম ডিরেক্টর।
“এটা খুব উদ্বেগজনক যে গত ১৫-১৬ ম্যাচে মুস্তাফিজ সেভাবে উইকেট পাচ্ছে না, ইকোনমি রেটও ভালো না। তবে অটো চয়েজ বলে কিছু নেই। তারপরও এই ফরম্যাটে আমরা সবসময় ওকে এগিয়ে রাখি, ওর অভিজ্ঞতা, আইপিএলে খেলে, সব কিছু মিলিয়ে এই সংস্করণে আমাদের ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে মুস্তাফিজই। ওই হিসেবে তাকে এগিয়ে রাখা হয়।”
টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ ১৫টি বোলিং ইনিংসে তার উইকেট স্রেফ ৯টি। সবশেষ ১২ টি-টোয়েন্টির পাঁচটিতে তিনি রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি দশের বেশি। সবশেষ জিম্বাবুয়ে সফরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫০ রান! এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুটি টি-টোয়েন্টিতে তিনি উইকেটশূন্য ছিলেন খরুচে বোলিং করে।
এশিয়া কাপেও শুরু হলো খরুচে বোলিং করে উইকেটশূন্য থেকে। তবে উদ্বেগের কথা বললেও এখনই তার উপর আস্থা হারাচ্ছেন না খালেদ মাহমুদ।
“মুস্তাফিজ ভালো করেনি, তা নয়। তবে গত ২ বছর সে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছে না, এটা আমাদের সবার জন্য উদ্বেগের ব্যাপার। তবে আমি বিশ্বাস করি, ‘ফর্ম ইজ টেম্পরারি, ক্লাস ইজ পারমানেন্ট।’ আমি এখনও বিশ্বাস করি, মুস্তাফিজ এখান থেকে বের হয়ে আসবে, দলকে আবার ম্যাচ জেতাবে। এই বিশ্বাসটা আমাদের সবারই আছে।”
মাঠের পারফরম্যান্স হয়তো ভালো যাচ্ছে না। তবে অনুশীলনে কিংবা ম্যাচে মুস্তাফিজের নিবেদনে কোনো ঘাটতি দেখছেন না মাহমুদ।
“(জাতীয় দলের প্রতি ওর নিবেদন নেই) এটা আমি মনে করি না। আমি যখন লাল সবুজের জন্য খেলব, আমার দেশের জন্য খেলব, তখন আমি মনে করি না, কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে সেই ঘাটতিটা থাকবে। অনুশীলনেও সে খুব সিরিয়াস। হচ্ছে না, কোনো একটা বাধা হয়তো আছে। এখান থেকে মুস্তাফিজ যত তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসবে, আমাদের ক্রিকেটের জন্য ততই মঙ্গল।”
বের হয়ে আসার আরেকটি সুযোগ বৃহস্পতিবার পেতে পারেন ২৬ বছর বয়সী এই পেসার। দুবাইয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।