উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা পূরণে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন তিনি।
Published : 05 May 2024, 10:04 PM
বৈশ্বিক চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ‘রোল মডেল’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘নেভিগেটিং ডেভেলপমেন্ট পাথওয়েজ ইন ইভলভিং গ্লোবাল অর্ডার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ও বণিক বার্তা যৌথভাবে প্রথমবারের মতো দুই দিনের ‘ফার্স্ট ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ঢাকা’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে স্পিকার বলেন, “বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমরা দেখছি, সেখানে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, দারিদ্রতা, যুদ্ধের কারণে মাইগ্রেশন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈরিতা, ব্যাংকিং দেউলিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
“বর্তমান এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা পূরণে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।”
বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে । এটা এখন বিশ্বের দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে বেরিয়ে এসেছে, ২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হবে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে।
এ পরিবর্তনের খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশকে প্রস্তুত হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসেকা আয়েশা খান বলেন, বৈশ্বিক অনিশ্চিত সময়ের মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে। অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অনেক এশিয়ান দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্য, শিক্ষায় বড় বিনিয়োগ রয়েছে। সেই বিনিয়োগের ফলও মিলছে এখন।
সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাক খান বলেন, বিশ্বের কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রগুলো সুশাসনের অভাবে সংকটের মধ্যে পড়েছে। গত ২০ বছর ধরে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ, তার বিপরীতে ইচ্ছেমত ব্যয়, অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে কর্তৃত্বপরায়ণ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
“গত দুই দশকে পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে সুশাসনকে সংজ্ঞায়িত করেছিল তা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাস্তবায়নযোগ্য ছিল না। এটা ব্যর্থ কৌশল ছিল, যা কোনো উন্নয়নশীল দেশেই সম্ভব হয়নি। পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে সুশাসনের আওতায় আনতে চেয়েছিল তা ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ থেকে বিশেষ করে চীন থেকে যে অর্থ এসেছিল, যার পূর্বশর্ত সুশাসন ছিল না, এটা বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে।”
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণ এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ’ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া’ সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সামাজিক ও আঞ্চলিক সংঘাতসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ সম্মেলন বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের জন্য এক্ষেত্রে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান রাশেদ আল তিতুমীরের সঞ্চালনায় উদ্বোধন অধিবেশনে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্যোসাল স্টাডিজের রেক্টর আর আর গানজেভোর্ট, চীনের তিয়ানজিন ইউনিভার্সিটির ডিন অধ্যাপক জেং জং শিয়ান, যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর জো ডেভিন, বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, সিটি ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন বক্তব্য দেন।