রাজশাহীর কাছে ঋণী রাজা

রাজশাহীর স্থানীয় এক টুর্নামেন্টে খেলে ক্রিকেটের আনন্দ আবার খুঁজে পেয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2023, 05:13 PM
Updated : 4 Jan 2023, 05:13 PM

অফ ফর্ম বা বাইরের কোনো ঘটনায় ক্রিকেটারদের খেলা থেকে মন উঠে যাওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ফর্মে থেকে নিয়মিত ভালো খেলেও বিস্বাদের বৃত্তে ঢুকে গিয়েছিলেন সিকান্দার রাজা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জিম্বাবুয়ের অভিজ্ঞ তারকার জন্য বটিকা হিসেবে কাজ করেছে রাজশাহীর স্থানীয় এক টুর্নামেন্ট!

রংপুর রাইডার্সের হয়ে বিপিএল খেলতে বুধবার বাংলাদেশে এসেছেন রাজা। বিমানবন্দর থেকে সোজা বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে গিয়ে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেন অফস্পিনিং এই অলরাউন্ডার। তবু তার চেহারায় ছিল না কোনো ক্লান্তির ছাপ। পুরোটা সময় চনমনে দেখা যায় তাকে। 

অথচ ছয় মাস আগেও কি না ক্রিকেটে কোনো আনন্দই খুঁজে পাচ্ছিলেন না রাজা। গত জুনে আফগানিস্তান সফরে গিয়ে ওয়ানডেতে একটি ফিফটি ও টি-টোয়েন্টিতে দুই ম্যাচে চল্লিশের বেশি রান করলেও নিজের খেলা উপভোগ করতে পারছিলেন না তিনি।

ওই সময় 'রাজশাহী টি-টোয়েন্টি কাপ' খেলতে আসেন রাজা। সেখানে রাইমা রেঞ্জার্স দলে শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা ছিলেন তার সতীর্থ। ওই টুর্নামেন্টে রাজার দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে চ্যাম্পিয়ন হয় রাইমা। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অসাধারণ সব পারফরম্যান্স দেখিয়ে আসছেন তিনি।

এবার বিপিএলে এসে রংপুর ও খুলনার প্রস্তুতি ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাজা ফিরে গেলেন সেই সময়টায়, যখন খেলার আনন্দটুকু হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।

“আমার মনে আছে, যখন রাজশাহীতে খেলতে গেলাম, তখন ক্রিকেট তেমন উপভোগ করতে পারছিলাম না। ক্রিকেট খেলাটা কঠিন মনে হচ্ছিল আমার কাছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ভালো করেছিলাম, তবু সত্যি বলতে উপভোগ করতে পারছিলাম না।”

“এরপর ডেভ হাটনকে (জিম্বাবুয়ের প্রধান কোচ) নিয়োগ দেওয়া হলো। আমি রাজশাহীতে এলাম। আমার মনে হয়, রাজশাহীর ওই টুর্নামেন্ট আমার মনকে সতেজ করে তুলেছে। সবকিছু পেছনে ফেলে আমি ক্রিকেটে আনন্দ খুঁজছিলাম। রাজশাহীর ওই সুযোগটা তখন এসেছিল।”

রাজশাহী থেকে খেলে যাওয়ার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রাজাকে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে উদ্ভাসিত পারফরম্যান্সের সৌজন্যে ২০২২ সালে আইসিসির বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মনোনয়ন পেয়েছেন রাজা। 

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে পুরো বছরে ৩৮ ইনিংসে ৭ ফিফটির সঙ্গে করেছেন ৩টি সেঞ্চুরি, ৪০.৫৮ গড়ে তার সংগ্রহ ১৩৮০ রান। পাশাপাশি বল হাতেও শিকার করেছেন ৩৩ উইকেট। 

ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব দিয়ে শুরু তার সোনালি সময়ের। পাঁচ ম্যাচে ১৭৬.৭৪ স্ট্রাইক রেট ও ৫৭ গড়ে ২২৮ রানের সঙ্গে ৫ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে চ্যাম্পিয়ন করেন রাজা। 

পরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশকে হারানোর মূল নায়কও ছিলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে দলকে জেতাতে না পারলেও দারুণ এক সেঞ্চুরিতে অনেকের স্তুতি আদায় করেন নেন ৩৬ বছর বয়সী ক্রিকেটার।  

সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। জিম্বাবুয়েকে সুপার টুয়েলভে তুলে ৮ ম্যাচে ১৪৭.৯৭ স্ট্রাইক রেটে করেন ২১৯ রান। বোলিংয়ে নেন ১০টি উইকেট। 

বিশ্বকাপের পর আবু ধাবি টি-টেন লিগ, শ্রীলঙ্কার লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ ও নেপালের নেপাল টি-টোয়েন্টিতে ব্যস্ত সময় কাটান রাজা। এর মাঝেই পান প্রথমবার আইপিএলে দল পাওয়ার খবর। গত মাসে হওয়া নিলামে তাকে দলে নেয় পাঞ্জাব কিংস।

সাফল্যে ভরা এই রোমাঞ্চকর পথচলার অনুভূতি প্রকাশের ভাষাই যেন জানা নেই তার।

“রাজশাহী থেকে (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে) বাছাইপর্ব খেলতে গেলাম। জিম্বাবুয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে নাম লেখাল, আমিও ভালো খেললাম। এরপর বাকিটা আপনারা জানেন। তিন মাসের মধ্যে আইপিএল... কী বলব... এটি রোমাঞ্চকর।”

অবশ্য রাজার দাবি, আইপিএল বহু দূরে, বিপিএলেও দল পাওয়ার আশা ছিল না তার।

“আমি বিপিএলেও দল পাওয়ার আশা করিনি। আমি সাধারণত প্লেয়ার্স ড্রাফট দেখি না। তবে এবার আইপিএল ও পিএসএলের ড্রাফট দেখেছি। (আইপিএল নিলামে) আমি দেখছিলাম নেপালে, হোটেলে এক কক্ষ থেকে আরেকটিতে যেতে হচ্ছিল আমাকে। হুট করে আমার নেটওয়ার্ক চলে যায়।”

“নেটওয়ার্ক আসার আগেই একটির পর একটি ফোন কল আসতে থাকে ভরত থেকে, পাকিস্তান থেকে, পরিবার-পরিজন সবার। আমার ফোনের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। আমি ফোনে ওদেরকে বললাম, ‘আমি আইপিএল নিলাম দেখছি।’ ওরা বলল, ‘আর দেখতে হবে না, পাঞ্জাব তোমাকে দলে নিয়েছে।”

গত ৬ মাসের ব্যস্ততা আগামী তিন মাসেও কমছে না জিম্বাবুয়ের এই তারকার। রংপুরের হয়ে বিপিএলে প্রথম ২ ম্যাচ খেলে তিনি চলে যাবেন দুবাই ক্যাপিট্যালসের জার্সিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএলটি২০ (ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি) লিগ খেলতে। সেটি শেষ করে বিপিএলের শেষ ভাগের জন্য ফিরবেন বাংলাদেশে। 

বিপিএল শেষ হলে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলবেন পাকিস্তান সুপার লিগে। এরপর যাবেন আইপিএলে। তবে এত দূরের কথা না ভেবে এখন শুধুই বিপিএলে ভালো খেলার চিন্তা রাজার।

“আমি আগে বিপিএলের শুরুর ম্যাচগুলো নিয়ে ভাবছি। খুব বেশি দূরে তাকাচ্ছি না। এরপর আইএলটি২০তে শতভাগ দিতে চাই। সেটি শেষে পিএসএলে পুরোটা দিয়ে তারপর আইপিএলে খেলতে যাব।”