ভারতের সাড়ে চারশর কাছাকাছি রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনে ওভারপ্রতি প্রায় ৬ করে রান তুলেছে ইংল্যান্ড।
Published : 16 Feb 2024, 05:34 PM
সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে ভালো শুরুর পর ইনিংস বড় করতে পারেননি। সেই আক্ষেপ এবার মেটালেন বেন ডাকেট। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরে রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি উপহার দিলেন বাঁহাতি ওপেনার। ভারতের বড় সংগ্রহের জবাবে ইংল্যান্ড পেল শক্ত ভিত।
রাজকোটে তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ভারতের প্রথম ইনিংস থামে ৪৪৫ রানে। দিন শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ২ উইকেটে ২০৭ রান। ওভারপ্রতি রান তুলেছে তারা ৫.৯১ করে। এখনও ২৩৮ রানে পিছিয়ে আছে সফরকারীরা।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে সুইপ, রিভার্স সুইপ, সুইচ হিট, প্যাডল- দারুণ সব শটের পসরা মেলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিতে ১৩৩ রানে অপরাজিত আছেন ডাকেট। তার ১১৮ বলের ইনিংসে ২১টি চারের পাশে ছক্কা ২টি।
সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি ৮৮ বলে। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্রুততম সেঞ্চুরি এটিই। ডাকেট ভেঙে দিয়েছেন গ্রাহাম গুচের প্রায় ২৪ বছরের রেকর্ড। ১৯৯০ সালে লর্ডসে ৩৩৩ রানের ইনিংস খেলার পথে ৯৫ বলে শতক ছুঁয়েছিলেন তখনকার ইংলিশ অধিনায়ক গুচ।
ভারতের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ডাকেটের চেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন কেবল দুজন। ১৯৭৪ সালে বেঙ্গালুরুতে ৮৫ বলে সেঞ্চুরি করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড। ২০০১ সালে মুম্বাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট শতরানে পৌঁছান ৮৪ বলে।
ডাকেটের ১৩৩ রানের ১১৪ আসে দিনের শেষ সেশনে। ভারতে এই প্রথম কোনো সফরকারী ব্যাটসম্যান এক সেশনে একশ বা এর বেশি রান করলেন।
দ্বিতীয় দিনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৫০০ উইকেট। দ্বিতীয় ভারতীয় এবং বিশ্বের নবম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন ৩৭ বছর বয়সী অফ স্পিনার। তার আগে ব্যাট হাতে ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম দুই সেশনে ৪৫ ওভার ব্যাটিং করে ভারত। প্রথম দিনের ৫ উইকেটে ৩২৬ রানের সঙ্গে আরও ১১৯ রান যোগ করে তারা। অভিষেকে সামর্থ্যের ঝলক দেখিয়ে ১০৪ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৪৬ রান করেন ধ্রুব জুরেল।
দিনের শুরুতে পরপর দুই ওভারে ২ উইকেট হারায় ভারত। কুলদিপ ইয়াদাভকে ফিরিয়ে দেন জেমস অ্যান্ডারসন। বোলার জো রুটকে ফিরতি ক্যাচ দেন রবীন্দ্র জাদেজা। প্রথম দিনের ১১০ রানের সঙ্গে আর দুই রান যোগ করতে পারেন তিনি। তার ২২৫ বলের ইনিংস গড়া ৯ চার ও ২ ছক্কায়।
এরপর ইংলিশ বোলারদের ভোগায় অশ্বিন ও জুরেলের জুটি। অষ্টম উইকেটে ১৭৫ বলে ৭৭ রানের জুটি গড়েন দুজন।
জুরেল প্রথম রানের দেখার পান একাদশ বলে। এরপর উডকে র্যাম্প শটে ছক্কা মারেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।
অশ্বিনকে ফিরিয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার রেহান আহমেদ। খানিক পর রেহানকে ছক্কা মেরে ফিফটির কাছে চলে যান জুরেল। ওই ওভারেই কাট করার চেষ্টায় কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি পঞ্চাশ থেকে ৪ রান দূরে থাকতে।
শেষ জুটিতে দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজ যোগ করেন ৩০ রান। ২৮ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৩৬ রান করেন বুমরাহ।
১১৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার মার্ক উড।
প্রথম দিন জাদেজা ও দ্বিতীয় দিন অশ্বিন ব্যাটিংয়ের সময় পিচের সুরক্ষিত অঞ্চলে দৌড়ানোয় ভারতকে ৫ রান পেনাল্টি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ইংল্যান্ড ব্যাটিং শুরু করে তাই ৫-০ স্কোর নিয়ে।
এক প্রান্তে জ্যাক ক্রলি খেলেন রয়েসয়ে। অপর প্রান্তে শুরু থেকে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পথ বেছে নেন ডাকেট। প্রথম দুই টেস্টের চার ইনিংসে প্রতিবার ২০ পেরিয়েও কোনোবার পঞ্চাশে যেতে পারেননি তিনি। এবার ১১টি চারের সাহায্যে ফিফটি করেন স্রেফ ৩৯ বলে।
ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ওভারে ক্রলিকে ফিরিয়ে ৮০ বলে ৮৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন অশ্বিন। একই সঙ্গে তিনি স্পর্শ করেন ৫০০ উইকেটের মাইলফলক। সুইপ করার চেষ্টায় ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় উইকেটে অলিভার পোপের সঙ্গে আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ জুটি গড়ে তোলেন ডাকেট। ৯৮ থেকে সিরাজকে চার মেরে সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি। পরের বলে বাউন্ডারি মারেন আরেকটি।
শেষ বেলায় পোপকে (৫৫ বলে ৩৯) এলবিডব্লিউ করে ১০২ বলে ৯৩ রানের জুটি ভাঙেন সিরাজ। ভারত এই সাফল্য পায় রিভিউ নিয়ে। জো রুটকে দিনের দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন ডাকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩২৬/৫) ১৩০.৫ ওভারে ৪৪৫ (জাদেজা ১১২, কুলদিপ ৪, জুরেল ৪৬, অশ্বিন ৩৭, বুমরাহ ২৬, সিরাজ ৩*; অ্যান্ডারসন ২৫-৭-৬১-১, উড ২৭.৫-২-১১৪-৪, হার্টলি ৪০-৭-১০৯-১, রুট ১৬-৩-৭০-১, রেহান ২২-২-৮৫-২)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৫ ওভারে ২০৭/২ (ক্রলি ১৫, ডাকেট ১৩৩*, পোপ ৩৯, রুট ৯*; বুমরাহ ৮-০-৩৪-০, সিরাজ ১০-১-৫৪-১, কুলদিপ ৬-১-৪২-০, অশ্বিন ৭-০-৩৭-১, জাদেজা ৪-০-৩৩-০)