ভারতের পেস ত্রয়ীর সামনে দাঁড়াতেই পারল না শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা।
Published : 02 Nov 2023, 08:16 PM
ম্যাচের দ্বিতীয় বলে উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে রানের পাহাড় গড়ল ভারত। পরে বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম বলে উইকেট পতনের পর আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিল শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। রেকর্ড গড়া জয়ে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করল স্বাগতিকরা।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের জয় ৩০২ রানে।
বিশ্বকাপে রানের হিসাবে এটি দ্বিতীয় বড় জয়, ভারতের সবচেয়ে বড় জয়। ভারতের আগের বড় জয় ছিল ২৫৭ রানে, ২০০৭ আসরে বারমুডার বিপক্ষে।
ভারতের ৩৫৭ রানের জবাবে বৃহস্পতিবার স্রেফ ৫৫ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোনো দলের চতুর্থ সর্বনিম্ন এবং বিশ্ব মঞ্চে শ্রীলঙ্কার সর্বনিম্ন স্কোর এটি।
১৯৭৫ বিশ্বকাপে ম্যানচেস্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮৬ রান ছিল শ্রীলঙ্কার আগের সর্বনিম্ন।
গত সেপ্টেম্বরের এশিয়া কাপ ফাইনালের পুনরাবৃত্তি হলো যেন মুম্বাইয়ে। কলম্বোয় ওই ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা।
এই বছরে সব মিলিয়ে তিনবার ভারতের বিপক্ষে একশর নিচে অল আউট হলো লঙ্কানরা। গত জানুয়ারিতে ভারতের মাটিতে করেছিল ৭৩।
এবার শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন মোহাম্মদ শামি। পাঁচ ওভারের বিধ্বংসী এক স্পেলে ১৮ রানে তার শিকার ৫ উইকেট। ম্যাচের সেরাও তিনিই।
আসরে স্রেফ তিন ম্যাচ খেলেই ১৪ উইকেট নিলেন ৩৩ বছর বয়সী এই পেসার। এর মধ্যে দুই ম্যাচে পেলেন পাঁচটি করে। বিশ্ব মঞ্চে সব মিলিয়ে এই স্বাদ তিনি পেলেন তিনবার, মিচেল স্টার্কের সঙ্গে যা সর্বোচ্চ।
শ্রীলঙ্কার ১০ উইকেটের ৯টিই নেন ভারতের তিন পেসার মিলে। কলম্বোয় ৬ উইকেট নেওয়া মোহাম্মদ সিরাজ এবার ধরেন ৩ শিকার। জাসপ্রিত বুমরাহর প্রাপ্তি একটি।
ভারতের বড় সংগ্রহে এ দিন তিন জন খেলেন আশি ছাড়ানো ইনিংস। শতক যদিও পাননি কেউ।
শুবমান গিল ৯২ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৯২ রান। ভিরাট কোহলি ৯৪ বলে ৮৮ রান করেন ১১ চারের সাহায্যে। ৬ ছক্কা ও ৩ চারে ৫৬ বলে ৮২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন শ্রেয়াস আইয়ার।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। ম্যাচের প্রথম বলে চার মেরে পরের বলে বোল্ড হয়ে যান অধিনায়ক রোহিত শার্মা।
সেই ধাক্কা সামলে ১৮৯ রানের বড় জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন গিল ও কোহলি। দুজনই মেলে ধরেন দারুণ সব শটের পসরা।
এ দিন ৩৪ রানে পৌঁছে সাচিন টেন্ডুলকারের একটি রেকর্ড ভেঙে দেন কোহলি। ওয়ানডেতে এক পঞ্জিকাবর্ষে এক হাজার রানের মাইলফলক ভিন্ন আট বছরে স্পর্শ করেন তিনি। টেন্ডুলকারের এই নজির ছিল সাতবার।
বিশ্বকাপে প্রথম শতকের সম্ভাবনা জাগিয়ে ৮ রান দূরে থাকতে দিলশান মাদুশানকার অফ কাটারে কট বিহাইন্ড হন গিল। মাদুশানকার পরের ওভারে আরেকটি অফ কাটারে বিদায় নেন কোহলিও।
তিন ম্যাচের মধ্যে দুবার শতকের সুযোগ হাতছাড়া করলেন তিনি। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ৪৯ শতকের রেকর্ড টেন্ডুলকারের একার রইল আরও কিছুদিন।
লোকেশ রাহুল ও সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ এ দিন ভালো করতে পারেননি। তবে শ্রেয়াস ঝড় বইয়ে দেন শ্রীলঙ্কার বোলারদের ওপর। ৪ ছক্কা ও ২ চারে ফিফটি করেন তিনি ৩৬ বলে।
শ্রেয়াসকেও শতক-বঞ্চিত করেন মাদুশানকা। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে তিনি পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। রবীন্দ্র জাদেজার ২৪ বলে ৩৫ রানের ক্যামিওতে সাড়ে তিনশ ছাড়ায় ভারতের সংগ্রহ।
বড় লক্ষ্যে ভারতের পেসারদের সুইং আর গতির সামনে দাঁড়াতেই পারেনি শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। প্রথম বলে পাথুম নিসানকাকে এলবিডব্লিউ করে সুর বেঁধে দেন বুমরাহ।
সিরাজ পরের ওভারে কোনো রান না দিয়েই ধরেন জোড়া শিকার। দিমুথ কারুনারাত্নে ও সাদিরা সামারাউইক্রামাকে বিদায় করে পরের ওভারে তিনি ড্রেসিংরুমের পথ দেখান কুসাল মেন্ডিসকে।
শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্রেফ ৩ রানে, যার মধ্যে ব্যাট থেকে আসে কেবল ১ রান।
এরপর শুরু হয় শামি-ম্যাজিক। দশম ওভারে আক্রমণে এসেই তিনি ধরেন জোড়া শিকার। নিজের পরের দুই ওভারে উইকেট নেন আরও দুটি।
তখন ২৯ রানে ৮ উইকেট নেই শ্রীলঙ্কার। ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের সর্বনিম্ন ৩৫ ও বিশ্বকাপে কানাডার সর্বনিম্ন ৩৬ রানের রেকর্ড নতুন করে লেখার চোখ রাঙানি লঙ্কানদের সামনে। ওই দুটি রেকর্ডে প্রতিপক্ষ দলে ছিল আবার শ্রীলঙ্কাই!
মাহিশ থিকশানা ও কাসুন রাজিথার ব্যাটে বিব্রতকর রেকর্ড দুটি থেকে রক্ষা পায় শ্রীলঙ্কা। ১০ নম্বরে নামা রাজিথার ১৪ রানই ইনিংসের সর্বোচ্চ। পাঁচ জন ফেরেন শূন্য রানে।
আসরে সাত ম্যাচে শ্রীলঙ্কার এটি পঞ্চম পরাজয়, বলা ভালো সবচেয়ে বিব্রতকর পরাজয়!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩৫৭/৮ (রোহিত ৪, গিল ৯২, কোহলি ৮৮, শ্রেয়াস ৮২, রাহুল ২১, সুরিয়াকুমার ১২, জাদেজা ২৫, শামি ২, বুমরাহ ১*; মাদুশানকা ১০-০-৮০-৫, চামিরা ১০-২-৭১-১, রাজিথা ৯-০-৬৫-০, ম্যাথিউস ৩-০-১১-০, থিকশানা ১০-০-৬৭-০, হেমান্থা ৮-০-৫২-০)
শ্রীলঙ্কা: ১৯.৪ ওভারে ৫৫ (নিসানকা ০, কারুনারাত্নে ০, মেন্ডিস ১, সামারাউইক্রামা ০, আসালাঙ্কা ১, ম্যাথিউস ১২, হেমান্থা ০, চামিরা ০, থিকশানা ১২*, রাজিথা ১৪, মাদুশানকা ৫; বুমরাহ ৫-১-৮-১, সিরাজ ৭-২-১৬-৩, শামি ৫-১-১৮-৫, কুলদিপ ২-০-৩-০, জাদেজা ০.৪-০-৪-১)
ফল: ভারত ৩০২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ শামি