২৪ বছর পর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।
Published : 27 Oct 2023, 11:12 PM
৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৮০ বলে দরকার ৩৬ রান। শতকের দুয়ারে দাঁড়িয়ে এক ব্যাটসম্যান। এমন সহজ সমীকরণ থেকেও হারের শঙ্কায় পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। নাটকীয়তায় ঠাসা লড়াইয়ে শেষ জুটির নৈপুণ্যে পাকিস্তানকে হারিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা ঘোচাল প্রোটিয়ারা।
নখ কামড়ানো উত্তেজনার এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১ উইকেটে। চেন্নাইয়ে শুক্রবার ২৭১ রানের লক্ষ্য ১৬ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে তারা।
২৪ বছর পর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। সবশেষ জিতেছিল ১৯৯৯ সালের আসরে। মাঝে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে দুই দলের ছয় ম্যাচের সবগুলি জিতেছিল পাকিস্তান।
লুঙ্গি এনগিডি নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন বিদায় নেন, তখনও দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ১১ রান। সেই পথটুকু পাড়ি দেন কেশব মহারাজ ও তাবরেজ শামসি।
বল হাতে ৬০ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে মূল্যবান ৪ রান করে ম্যাচের সেরা বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার শামসি।
আসরে ছয় ম্যাচের পাঁচটি জিতে ভারতকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের পর টানা চারটি হেরে সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন আরও ফিকে হয়ে গেল পাকিস্তানের।
৯৩ বলে ৯১ রানের ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের ভিত গড়ে দেন এইডেন মার্করাম। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় গড়া তার ইনিংসটি।
আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭৪ রানের ইনিংস খেলা কুইন্টন ডি কক এবার রান তাড়ায় আগ্রাসী শুরু করেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। তার ১৪ বলে ২৪ রানের ইনিংস থামান শাহিন শাহ আফ্রিদি।
অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাও বড় করতে পারেননি ইনিংস (২৭ বলে ২৮)। রাসি ফন ডার ডাসেনের ৩৯ বলে ২১ রানের মন্থর ইনিংস থামান লেগ স্পিনার উসামা মির।
উসামা অবশ্য এই ম্যাচের একাদশেই ছিলেন না! ফিল্ডিংয়ের সময় মাথায় আঘাত পাওয়া শাদাব খানের ‘কনকাশন বদলি’ হিসেবে তিনি সুযোগ পান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ‘কনকাশন বদলি’ তিনি।
হাইনরিখ ক্লসেনকে দ্রুত বিদায় করে দেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। ১৩৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন চাপে দক্ষিণ আফ্রিকা।
সেই চাপ দূরে সরে যায় মার্করাম ও ডেভিড মিলারের ব্যাটে। ৬৯ বলে ৭০ রানের জুটিতে দলের স্কোর দুইশ পার করেন তারা। দারুণ এক ডেলিভারিতে মিলারকে (৩৩ বলে ২৯) ফিরিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন আফ্রিদি।
মার্কো ইয়ানসেন পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন হারিস রউফকে। পরের বলেই আউট হয়ে যান তিনি। চিত্র বদলের শুরুও সেখান থেকে।
আক্রমণে ফিরে মার্করামকে বিদায় করে দেন উসামা। পরের ওভারে আফ্রিদির শিকার জেরল্ড কুটসিয়া। এরপর রউফের অবিশ্বাস্য ফিরতি ক্যাচে যখন বিদায় নিলেন এনগিডি, দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে পরাজয়ের চোখ রাঙানি।
সেখান থেকে শামসি ও মহারাজের নৈপুণ্যে প্রোটিয়াদের জয়োল্লাস। ৪ রানের সমীকরণে মোহাম্মদ নাওয়াজকে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে উল্লাসে ফেটে পড়েন মহারাজ। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের চোখে-মুখে তখন রাজ্যের হতাশা।
এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে শেষের মতো পাকিস্তানের শুরুটাও ভালো ছিল না। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ ওভারে বিদায় নেন আবদুল্লাহ শাফিক। তাকে ফিরিয়ে নিজের পরের ওভারে আরেক ওপেনার ইমাম-উল-হাককেও ড্রেসিং রুমের পথে পাঠান ইয়ানসেন।
৩৮ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর ৪৮ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ভালো শুরু পেয়ে রিজওয়ান ইনিংস টেনে নিতে পারেননি। ইফতিখার আহমেদও ফেরেন অল্পেই। বাবর আজম ফিফটি ছুঁয়েই আউট হয়ে যান শামসিকে স্কুপ করার চেষ্টায়।
তখন ১৪১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পাকিস্তান। সেখান থেকে ৭১ বলে ৮৪ রানের দারুণ এক জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন সাউদ শাকিল ও শাদাব।
একটা পর্যায়ে পাকিস্তানের তিনশ রানও মনে হচ্ছিল খুব সম্ভব। তবে ১১ রানের মধ্যে শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে ২০ বল বাকি থাকতে অল আউট হয়ে যায় তারা।
পরে বোলিংয়ে আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত হারের বৃত্ত ভাঙতে পারল না ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ীরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৪৬.৪ ওভারে ২৭০ (শাফিক ৯, ইমাম ১২, বাবর ৫০, রিজওয়ান ৩১, ইফতিখার ২১, শাকিল ৫২, শাদাব ৪৩, নাওয়াজ ২৪, আফ্রিদি ২, ওয়াসিম ৭, রউফ ০*; ইয়ানসেন ৯-১-৪৩-৩, এনগিডি ৭.৪-০-৪৫-১, মার্করাম ৪-০-২০-০, মহারাজ ৯-০-৫৬-০, কুটসিয়া ৭-০-৪২-২, শামসি ১০-০-৬০-২)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৭.২ ওভারে ২৭১/৯ (বাভুমা ২৮, ডি কক ২৪, ফন ডাসেন ২১, মার্করাম ৯১, ক্লসেন ১২, মিলার ২৯, ইয়ানসেন ২০, কুটসিয়া ১০, মহারাজ ৭*, এনগিডি ৪, শামসি ৪*; ইফতিখার ৩-০-২৩-০, আফ্রিদি ১০-০-৪৫-৩, নাওয়াজ ৬.২-০-৪০-০, রউফ ১০-০-৬২-২, ওয়াসিম ১০-১-৫০-২, উসামা ৮-০-৪৫-২)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাবরেজ শামসি