টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
Published : 26 Jun 2024, 10:39 AM
সেমি-ফাইনাল ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে কিছুটা চমকেই গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ রব ওয়াল্টার। গোটা সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সংবাদকর্মী মোটে একজন! ওয়াল্টার মজা করে বললেন, “এই কক্ষ তো পুরোপুরিই ফাঁকা, এটা একটা ভালো লক্ষণ, আমার মনে হয়…!”
প্রোটিয়া কোচ কেন এমনটি বলেছেন, বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সংবাদকর্মী কম থাকা মানে আগ্রহ-কৌতূহল কম, তার মানে চাপও কম। এই পর্যায়ে এসে তো প্রতিপক্ষ দল যতটা, দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ততটাই বড় প্রতিপক্ষ এই চাপ। নক-আউট ম্যাচে চাপের সময়ে বারবার ভেঙে পড়ে বলেই তো ‘চোকার’ তকমা গায়ে লেগে গেছে তাদের।
এবারের বিশ্বকাপেও উঁকি দিচ্ছে সেই শঙ্কা। একের পর এক ম্যাচ জিতে সেমি-ফাইনালে পা রেখেছে তারা। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়েও ফেভারিট হয়েই নামবে তারা আফগানিস্তানের বিপক্ষে। মানে, ‘চোক’ করার আদর্শ মঞ্চ প্রস্তুত!
এমন চাপের ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে অন্তত ‘চাপ’ পেলেন না দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ! আসলে সূচির ব্যস্ততা, অনেক দূরের মাঠে অনুশীলন, এসব মিলিয়েই সংবাদ সম্মেলনে লোক বেশি ছিল না। তাতে তো সেমি-ফাইনাল ম্যাচের ওজন বা চাপ কমে যায় না। ওয়াল্টারও তা জানেন। মজাটুকু শেষে তিনি বাস্তবতা তুলেই ধরলেন, “আসলে ব্যাপারটা সংবাদমাধ্যমের নয়, উপলক্ষটাই আসল, তাই না?”
আসলেই তা-ই। সংবাদ সম্মেলন বা সংবাদকর্মীদের সংখ্যা তো নয়, বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোর ইতিহাস বলে, দক্ষিণ আফ্রিকা বারবার ভেঙে পড়েছে উপলক্ষ আর প্রত্যাশার চাপে। সেসব এবারও আছে। তাই আছে শঙ্কাও।
ওয়াল্টার তা অস্বীকার করছেন না। এড়িয়েও যাচ্ছেন না। বরং কঠিন সেই বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করে নিচ্ছেন। তার মতে, চ্যালেঞ্জটাকে সাদরে গ্রহণ করে নিলেই সমাধান বের করা সম্ভব।
“সেমি-ফাইনালের মতো ম্যাচের ক্ষেত্রে এক ধরনের বাড়তি উত্তেজনা সবসময়ই সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে। উদ্বেগ ও রোমাঞ্চের মিশ্র একটা অনুভূতি কাজ করে এবং এই পর্যায় পর্যন্ত আসতে পারলে সবার মধ্যেই এরকম অনুভূতি কাজ করেই।
“ব্যাপারটি হলো, এটিকে স্রেফ আলিঙ্গন করা এবং এরপর উপলব্ধি করা যে, এটা কীভাবে সামলানো যাবে। আমাদের চাওয়া, এসব সামলেই আগামীকাল ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোয় সেরা ক্রিকেট খেলা।”
এখনও পর্যন্ত এই কাজটি দারুণভাবেই করে এসেছে ওয়াল্টারের দক্ষিণ আফ্রিকা দল। এই বিশ্বকাপে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোয় সেরা ক্রিকেট খেলার কাজ তাদের চেয়ে ভালো আর কেউ করেনি। টানা সাত জয়ে তারা পা রেখেছে সেমি-ফাইনালে। এর মধ্যে পাঁচটি ম্যাচই ছিল দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ। শেষ সময়ের প্রবল চাপ সামলে প্রতিপক্ষের মুঠো থেকে জয় বের করে এনেছে তারা। চাপে ভেঙে পড়ার পরিবর্তে উল্টো আরও বেশি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটি নক-আউটই ছিল, কার্যত কোয়ার্টার-ফাইনালে রূপ নিয়েছিল তা। সেখানেও শেষ সময়ে দারুণ খেলে জিতে যায় তারা।
ওয়াল্টার তাই আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠেই জানিয়ে দিলেন, অতীতের ভূত এই দলে নেই। দুঃসহ অতীতের ছায়া থেকে বেরিয়ে এই আসরের স্বস্তির আবেশ মেখেই এগিয়ে যেতে চান তিনি।
“আগে যারা কাছাকাছি এসেও পারেনি, সেটার দায় ওই মানুষগুলোরই। সত্যি বলতে, এই দক্ষিণ আফ্রিকা তো আলাদা দল। আমাদের যা কিছু আছে, সেসবই শুধু আমাদের। আমরা তাকাব আমাদের নিকট অতীতের পারফরম্যান্সে, যেখানে আমরা বারবার উতরে যেতে পেরেছি। সেমিতেও আমরা সেরকমই ভাবছি।”
ওয়ানডে-টি-টোয়োন্টি মিলিয়েই এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের ফাইনালের মুখ কখনও দেখতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার তাদের সামনে বাধা এই আসরে সাড়া জাগানো দল আফগানিস্তান। ত্রিনিদাদে ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায়।