Published : 03 May 2025, 09:53 AM
প্রথম ওভারে দুই ছক্কায় ১৫ রান। পরের ওভারে একটি ছক্কা ও চারে ১৪ রান। নিজের প্রথম দুই ওভারে রাশিদ খান দিলেন ২৯ রান। আবার যখন তিনি বোলিং পেলেন, ততক্ষণে ম্যাচের ভাগ্য গড়া হয়েই গেছে। কিন্তু রাশিদের ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা শেষ হয়নি। ওই ওভারে তিনি হজম করলেন আরও তিন ছক্কা। ওভারে রান দিলেন মোট ২১। সব মিলিয়ে তিন ওভারে যা হলো, ৪৭২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এমন তেতো স্বাদ আগে পাননি আফগান লেগ স্পিন তারকা।
এবারের আইপিএলে শুরু থেকেই ঠিক চেনা রূপে নেই রাশিদ। দুই-তিনটি ম্যাচ ছাড়া কোনো ম্যাচে খুব সুবিধে করতে পারেননি। কিন্তু গুজরাট টাইটান্সের হয়ে শুক্রবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে ছাড়িয়ে গেলেন তিনি আগের সবকিছুকে। গোটা ক্যারিয়ারে এতটা খরুচে বোলিং আর নেই তার।
এ দিন তিন ওভার বোলিং করেই ৫০ রান দেন রাশিদ। ওভারপ্রতি রান ১৬.৬৬। ম্যাচে অন্তত এক ওভার বোলিং করে ওভারপ্রতি এত বেশি রান দেওয়ার নজির তার ১০ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার আর নেই।
গত আইপিএলে গুজরাটের হয়েই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ১.৪ ওভারে রান দিয়েছিলেন ২৫। ওভারপ্রতি রান ছিল ১৫। তার আগের সবচেয়ে খরুচে অভিজ্ঞতা ছিল সেটি।
গোটা টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এক ম্যাচে রান দেওয়ার ফিফটির ঘটনা আগে স্রেফ সাতবার ছিল তার। প্রতিবারই পুরো চার ওভার বোলিং করেছেন। এবারই প্রথম তিন ওভারেই ফিফটি গুনলেন।
অন্তত তিন ওভার বোলিংয়ে তার আগের খরুচে বোলিং ছিল ২০২৩ আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ৪৪ রান দেওয়া।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে শুক্রবারের ম্যাচে ছয়টি ছক্কা হয়েছে রাশিদের বোলিংয়ে। এর চেয়ে বেশি ছক্কা অবশ্য দুটি ম্যাচে তিনি দিয়েছেন। ২০১৮ আইপিএলে সানরাইজার্সের হয়ে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৫৫ রান দেওয়ার ম্যাচে এবং ২০২৩ এসএ টোয়েন্টিতে এমআই কেপ টাউনের হয়ে সানরাইজার্স ইস্টার্ন কেপের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৫৩ রান দেওয়ার ম্যাচে তিনি হজম করেছিলেন সাতটি করে ছক্কা।
এই ২৬ বছর বয়সেই টি-টোয়েন্টির কিংবদন্তি হয়ে গেছেন রাশিদ খান। অসংখ্য রেকর্ড তিনি গড়েছেন। হাজার উইকেটের লক্ষ্যের কথাও বলেছেন, যেখানে পৌঁছানো খুবই সম্ভব তার পক্ষে। তবে তার বোলিংয়ে আগের জাদুকরি প্রভাব যে কিছুটা মিইয়ে এসেছে, সেটির প্রমাণ একটি পরিসংখ্যানে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে যে আটবার এক ম্যাচে রান দেওয়ার ফিফটি করলেন রাশিদ, এর পাঁচটিই গত দুই বছরে!
২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আইপিএলের ছয়টি আসরে টুর্নামেন্ট শেষে প্রতিভারই তার ওভারপ্রতি রান ছিল সাতের কম। কিন্তু ২০২৩ ও ২০২৪ আসরে রান দিয়েছেন তিনি ওভারপ্রতি ৮.২৩ ও ৮.৪০। এবার তো এখনো পর্যন্ত ১০ ম্যাচ খেলে রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি ৯.৫১!
শুধু আইপিএল নয়, তার গোটা ক্যারিয়ারেই কোনো টুর্নামেন্টের দুটির বেশি ম্যাচ খেলে ওভারপ্রতি ৯ রানের বেশি এই প্রথম।
পিঠের অস্ত্রোপচারের পর থেকেই রাশিদ খান যেন ঠিক আগের মতো ততটা ক্ষুরধার নন। কিছু ম্যাচে ঠিকই উজ্জ্বল ছিলেন বটে, তবে ম্যাচের পর ম্যাচ বিরামহীন সেই কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। খেই হারাচ্ছেন প্রায়ই। এবারের আইপিএলেও শুরু থেকেই বেশ ধারহীন ছিলেন। সানরাইজার্সের বিপক্ষে এই ম্যাচের আগের দুটি ম্যাচে অবশ্য বেশ ভালো বোলিং করেছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে কলকাতায় ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন, পরের ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ১ উইকেট। কিন্তু ঘরের মাঠ আহমেদবাবাদে আবার তিনি খরুচে হয়ে গেলেন।
সব মিলিয়ে এবার ১০ ম্যাচের পাঁচটিতেই তিনি রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি ৯-এর বেশি।
তার দল যদিও দুর্দান্ত খেলছে, কিন্তু রাশিদ এবার এখনও পর্যন্ত ভীষণ বিবর্ণ। যদিও চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে শেষ কথা বলে কিছু নেই। কে জানে, আসরের আসল সময়েই হতো তিনি জ্বলে উঠবেন!