“গ্রামের মানুষ যারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত তারা কিন্তু শহরের মানুষের চেয়ে ভালো আছে”, বলেন তিনি।
Published : 26 Jun 2024, 08:10 PM
সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য ট্রাকের বদলে স্থায়ী দোকান গড়ার কথা চিন্তা করছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক আয়োজনে তিনি এই পরিকল্পনার কথা জানান।
সচিবালয় নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন বিএসআরএফ এর উদ্যোগে এই সংলাপে সরকারে পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন কালে তার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটাই। সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। দ্রব্যমূল্য বাড়লে যারা শহরের নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ, তাদের জন্য কষ্ট হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী এক কোটি পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহের একটা কর্মসূচি নিয়েছেন। সেটাকে কীভাবে আরও গতিশীল করা যায় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
“ট্রাক সেলের মাধ্যমে শুরু হলেও এখন স্থায়ী দোকানে এটা চালু করার চেষ্টা করছি, যাতে মানুষ অফিস করে বাড়ি যাওয়ার সময় পণ্য নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে।”
“টিসিবির ৮ হাজার পরিবেশককে স্থায়ী অবকাঠামোতে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ট্যারিফ কমিশনকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি”, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন।”
টিসিবির মাধ্যমে আমদানি
টিসিবি এতদিন দেশের ভেতর থেকে পণ্য কিনে বিক্রি করত জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, তারা এখন নিজেরাই আমদানি শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের যেসব টুলস আছে সেটা হচ্ছে টিসিবির মাধ্যমে আমদানি করে বাজারে প্রভাব ফেলতে পারি। এতদিন এটা করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেটা সীমিত আকারে শুরু করা হচ্ছে।
“ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ হওয়া স্বত্বেও আমরা রোজার সময় নাসিক (ভারতের একটি বাজার) থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে পেরেছিলাম।”
কয়েকটি নিত্যপণ্য যেন ভারত থেকে নিয়মিত আমদানির জন্য সরকার দেশটির সঙ্গে পৃথক একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে বলেও জানান টিটু। বলেন, “মিয়ানমারের সঙ্গে নৌপরিবহন যোগাযোগ এবং বাণিজ্য নিয়ে একটি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করে রেখেছি।”
‘গ্রামের মানুষ তুলনায় ভালো আছে’
কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেলে শহরের নির্দিষ্ট আয়ের বাসিন্দারা কষ্টে পড়লেও গ্রামের মানুষজন তুলনামূলক ভালো জীবন যাপন করছে বলেও মূল্যায়ন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের কাছে টাকা আছে। গত দুই মাস ধরে ২ বিলিয়ন ডলার হরে রেমিটেন্স আসছে, এই টাকা সরাসরি চলে যাচ্ছে গ্রামে।
“গ্রামের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। গ্রামের মানুষ যারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত তারা কিন্তু শহরের মানুষের চেয়ে ভালো আছে। যারা অটো চালায় তারা কিন্তু দুয়েকটা গরু বা ছাগলও পালে। খুব বেশি চাপে আছে শহরের নির্দিষ্ট আয়ের মানুষগুলো।”
দ্রব্যমূল্য নিয়ে কৃষি, খাদ্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করতে হয় জানিয়ে টিটু বলেন, “আমরা চেষ্টা করি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে যেন বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে না যায়। বাজারের স্বাভাবিক গতি যেন ঠিক থাকে।
“পাশাপাশি একটা আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি রয়েছে। এই কমিটি করার পর চালের বাজারে প্রভাব ফেলতে আমরা সক্ষম হয়েছি। মিল গেইট থেকে যেহেতু সব তথ্যসহ সিল মারা থাকবে তাই চাল নিয়ে আর কারসাজি হবে না। এটা একটা সুফল বলে মনে করি।”
এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বাণিজ্য সুবিধা
স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পরও যেন বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত থাকে, সেজন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নানা চুক্তি হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “৩৯টি দেশ ও ১১টি জোটের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাই। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরেও যেন এই সুবিধা অব্যাহত থাকে সেজন্য কাজ করছি।
“ডব্লিউটিওসহ ২৬টি দেশের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করার কাজ চলছে। জাপানের সঙ্গে সমীক্ষা শেষ হয়েছে। ভারত অচিরেই বাংলাদেশের সঙ্গে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ করবে। চীনের সঙ্গেও একটা এফটিএ নিয়ে কাজ চলছে। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে।”