প্রথমবার দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলছেন ২৪ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার।
Published : 12 Jan 2023, 04:39 PM
লাল বলে জাদুকরি প্রদর্শনীতে আপাতত বিরতি। এবার সাদা বলের ঝলক দেখানোর অপেক্ষা। মঞ্চ এখানে বিপিএল। রেকর্ড গড়া বোলিং পারফরম্যান্সে টেস্ট অভিষেকের পর আবরার আহমেদ ছুটে চলেছেন সামনে। সেই পথ তাকে বয়ে এনেছে বাংলাদেশে। পাকিস্তানের ২৪ বছর বয়সী লেগ স্পিনার খেলবেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। প্রথমবার দেশের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে আসার রোমাঞ্চ দারুণভাবেই স্পর্শ করছে তাকে।
আবরারের জগতটা বদলে গেছে গত এক মাসে। গত মাসের প্রথম সপ্তাহেও ক্রিকেট বিশ্বে তার নাম সেভাবে জানত না কেউ। টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখলেন ৯ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুলতান টেস্ট দিয়ে। ব্যস, এরপর কেবল তার মুগ্ধতা ছড়ানোর পালা।
পাকিস্তানের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে প্রথম স্পিনার হিসেবে অভিষেক ইনিংসে ৭ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন। অভিষেক টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১ উইকেট শিকারি পাকিস্তানের প্রথম স্পিনারও তিনি।
পরের ম্যাচগুলোয় প্রমাণ করলেন, অভিষেকের সাফল্য কোনো ফ্লুক ছিল না। প্রথম ম্যাচের মতো অতটা বিধ্বংসী অবশ্য নন। তবে অমন পারফরম্যান্স তো সবদিন হয়ও না। দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই নিলেন ৬ উইকেট। এরপর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেট, পরেরটিতে ৫টি। মাত্র ৪ টেস্টেই তার উইকেট হয়ে গেছে ২৮টি।
কিউইদের বিপক্ষে লাল বলের লড়াই শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর ভিন্ন দেশে তিনি নামছেন সাদা বলের অভিযানে।
টেস্ট অভিষেকের আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন আবরার। তবে এখন লাল বলে দারুণ কার্যকর হলেও পাকিস্তানের ক্রিকেটে প্রথম নজর কাড়েন তিনি সাদা বলেই। করাচির আঞ্চলিক ক্রিকেটে খেলার পর সাবেক অধিনায়ক রশিদ খানের একাডেমিতে নিজেকে শাণিত করেন তিনি। পরে ২০১৭ পাকিস্তান সুপার লিগে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয় করাচি কিংসের হয়ে।
উইকেট না পেলেও সেদিন তিনি ৪ ওভারে রান দেন মাত্র ২২। প্রতিপক্ষ দলে ওয়েন মর্গ্যান সেদিন ৫৭ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেললেও ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে শান্ত রাখেন আবরার। মর্গ্যানকে করা ১৬ বলের ৭টিতেই তিনি রান দেননি সেদিন। তখন তিনি মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারার মতো কিংবদন্তিদের ভূয়সি প্রশংসা আদায় করে নেন।
সেবার পিএসএলে দুটি ম্যাচ খেলেই আবরার ছিটকে পড়েন চোট নিয়ে। শুধু পিএসএল থেকেই নয়, ভয়ঙ্কর স্ট্রেস ফ্র্যাকচার তাকে ক্রিকেটের মূল স্রোত থেকে দূরে রাখে দীর্ঘদিন। একরকম হারিয়েই যান তিনি। অনেক লড়াই করে আবার নিয়মিত ক্রিকেটে ফেরেন ২০২০ সালে।
এরপর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ঈর্ষনীয় পারফরম্যান্স তার। তবে টি-টোয়েন্টিতেও খারাপ করেননি। গত সেপ্টেম্বরে ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে ৮ ম্যাচে ১০ উইকেট নেন ওভারপ্রতি ৭.৩৫ রান দিয়ে।
এখন তার চ্যালেঞ্জ দেশের বাইরের লিগে ভালো করার। বিপিএলে চট্টগ্রাম পর্ব থেকে শুরু হবে তার পথচলা। মাঠের ক্রিকেটে নামার আগেই অবশ্য ভালো লাগায় ডুবে আছেন তিনি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানালেন, বিপিএলে তাকে খেলতে দেখার অপেক্ষায় আছে তার পরিবার-পরিজনও।
“বিপিএলে এসে খুব ভালো লাগছে। বাংলাদেশের অনেক লোকের অনেক বেশি ভালোবাসা পাচ্ছি। বিদেশি ক্রিকেটার আছে অনেক, তাদের সঙ্গে মজা লাগবে আশা করি। চেষ্টা থাকবে যতটা সম্ভব ভালো করার এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স যেন জেতে।”
“বিপিএল তো পুরো বিশ্বেই দেখা যায়। আমার পরিবারও খুব খুশি যে ক্রিকেট খেলতে বাংলাদেশে এসেছি। তারা রোমাঞ্চিত যে বিপিএল দেখবে ও আমার খেলা দেখবে।”