জহুরুল ইসলাম, জুনায়েদ সিদ্দিকের পর রাজশাহীর হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন প্রীতম কুমারও।
Published : 01 Nov 2022, 07:13 PM
জাতীয় লিগের চতুর্থ রাউন্ডের দ্বিতীয় দিন শেষে তিন সেঞ্চুরিতে বরিশালের বিপক্ষে রান পাহাড় গড়েছে রাজশাহী বিভাগ। চট্টগ্রামের সঙ্গে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন সিলেটের জাকির হাসান। ঢাকা বিভাগকে গুঁড়িয়ে ৮ উইকেট নিয়েছেন রংপুরের মুশফিক হাসান।
খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম দিন সেঞ্চুরি করেছিলেন রাজশাহীর দুই ওপেনার জহুরুল ইসলাম ও জুনায়েদ সিদ্দিক। দ্বিতীয় দিন তিন অঙ্কে পা রেখে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান প্রীতম কুমার।
৮ উইকেটে ৫০৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছে রাজশাহী। জবাবে ২ উইকেট হারিয়ে ৭৯ রান করে মঙ্গলবার দিন শেষ করেছে বরিশাল। এখনও ৪২৯ রানে পিছিয়ে রয়েছে তারা। ফলো-অন এড়াতে করতে হবে আরও ২৭৯ রান।
প্রথম দিন বিনা উইকেটে করা ২৪২ রানের সঙ্গে আরও ৯১ রান যোগ করেন জহুরুল ও জুনায়েদ। মোহাম্মদ আশরাফুলের এক ওভারে সাজঘরে ফেরেন দুজনই।
ডাবল সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও ১ ছক্কা ও ১৭ চারে ১৭৭ রানে থামেন জহুরুল। জুনায়েদের ব্যাট থেকে আসে ১ ছক্কা ও ১৫ চারে ১৪৯ রান।
দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে রাজশাহী পেয়েছে ৩৩৩ রান। দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি।
মুশফিকুর রহিম ভালো শুরু করেও ৩২ রান করে আউট হন। সাব্বির রহমান করেন স্রেফ ১১। ফরহাদ রেজা (২৭) পায়ের পেশিতে টান লাগায় মাঠ ছাড়েন।
অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের যাওয়া-আসার মাঝে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ২০ বছর বয়সী প্রীতম। শেষ পর্যন্ত ৫ চার ও ৪ ছয়ে ৮৯ বলে ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
পরে ব্যাট করতে নেমে ৭ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারায় বরিশাল। আবু সায়েম চৌধুরী ও সালমান হোসেন ইমন তৃতীয় উইকেটে ৭২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ধাক্কা সামাল দেন। আবু সায়েম ৩০ ও সালমান ৪৪ রানে খেলছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী ১ম ইনিংস: ১৪৮.৩ ওভারে ৫০৮/৮ (ডিক্লে.) (আগের দিন ২৪২/০) (জহুরুল ১৭৭, জুনায়েদ ১৪৯, মুশফিক ৩২, ফরহাদ হোসেন ০, সাব্বির ১১, প্রীতম ১০১*, ফরহাদ রেজা ২৭ আহত অবসর, সানজামুল ২, শফিকুল ২, পায়েল ০; রাব্বি ২০-২-৬৬-০, রুয়েল ২৫-৬-৭৫-২, তানভির ৫০-১-১৯৫-২, সোহাগ ২১.৩-৭-৫৭-১, মইন ১৬-৩-৫৬-১, আশরাফুল ১৬-০-৫৪-২)
বরিশাল ১ম ইনিংস: ২১ ওভারে ৭৯/২ (আবু সায়েম ৩০*, আশরাফুল ০, ফজলে রাব্বি ৪, সালমান ৪৪; নাহিদ ৬-১-২২-১, শফিকুল ৫-১-১৮-০, পায়েল ৪-০-১৯-০, সানজামুল ৬-২-১৯-০)
জাকিরের ডাবল সেঞ্চুরি, মুরাদের ৫ উইকেট
ঘরের মাঠে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন সিলেট বিভাগের অধিনায়ক জাকির। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে চট্টগ্রাম বিভাগও জবাব দিচ্ছে সমানে সমান।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৯ উইকেট হারিয়ে ৪৮১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে সিলেট। পরে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রাম ১ উইকেটে ৯৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে। এখনও তারা পিছিয়ে ৩৮৩ রানে।
১৩২ রান নিয়ে মঙ্গলবার খেলা শুরু করেন জাকির। আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান গালিব পৌঁছান পঞ্চাশে। ৬৭ রান করে গালিব ফিরলে ভাঙে ১৬৬ রানের জুটি।
এরপর শাহানুর রহমান (৩) ও আবু বকর (২) দ্রুত ফিরে গেলে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে এগিয়ে যান জাকির। তুলে নেন প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি।
নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১৮ চার ও ২ ছয়ের মারে ২১৩ রান করেন জাকির। যা এই কিপার-ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ইনিংস। আগের সেরা ছিল ২১১।
চট্টগ্রামের পক্ষে ১৮৭ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ। চলতি লিগে এটি তার তৃতীয় পাঁচ উইকেট।
ব্যাট করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন চট্টগ্রামের ওপেনার জসিমউদ্দিন। তবে আর বিপদ ঘটতে দেননি পিনাক ঘোষ ও পারভেজ হোসেন ইমন। ফিফটির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দুইজন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট ১ম ইনিংস: ১৩২ ওভারে ৪৮১/৯ (ডিক্লে) (জাকির ২১৩, গালিব ৬৭, শাহানুর ৩, আবু বকর ২, তানজিম ২১, আবু জায়েদ ২*, নাবিল ০*; মিশু ১৯-৫-৬৫-০, নোমান ১৪-২-৬৮-১, সৈকত ৭-২-২০-১, মুরাদ ৪৭-৩-১৮৭-৫, রনি ৪২-৫-১১১-২, তাসামুল ২-০-৬-০, জসিমউদ্দিন ১-০-৫-০)
চট্টগ্রাম ১ম ইনিংস: ৪৬ ওভারে ৯৮/১ (পিনাক ৪৯*, জসিমউদ্দিন ০, পারভেজ ৪৫*; আবু জায়েদ ৭-১-১৭-১, তানজিম ৮-১-২১-০, শাহানুর ১৫-৪-২৬-০, নাবিল ১০-০-২২-০, আল আমিন ৫-১-১০-০, গালিব ১-১-০-০)
মুশফিক হাসানের ৮ উইকেট, জয়ের পথে রংপুর
বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ঢাকার বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডে হারের বদলা নেওয়ার অভিযানে অনেকটাই এগিয়ে গেছে রংপুর বিভাগ। দ্বিতীয় দিন শেষে ২১১ রানের লক্ষ্যে তাদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৩৫ রান। জয়ের জন্য চাই আর কেবল ৭৬ রান।
ঢাকাকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৯ রানে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কারিগর মুশফিক। প্রতিপক্ষের ব্যাটিং অর্ডারে ভীতি ছড়িয়ে ৭৩ রান খরচায় ৮ উইকেট নেন ২০ বছর বয়সী এই পেসার। রংপুরের বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে নিজের অভিষেকে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
প্রথম দিন শেষ বিকেলে দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে ১৬ ওভারেই ৮৮ রান তুলে ফেলা ঢাকার দুই ওপেনার আব্দুল মজিদ ও মাহিদুল ইসলামের জুটি মঙ্গলবার দিন প্রথম ওভারেই ভেঙে দেন মুশফিক। এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ৩৩ রান করেন মজিদ।
এরপর আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রনি তালুকদারকে নিয়ে ৩৬ রান যোগ করেন মাহিদুল। দলীয় ১২৪ রানের মাথায় রবিউল হকের বলে আউট হন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তার ব্যাট থেকে আসে ১০ চার ও ১ ছয়ের ৭৪ রানের ইনিংস।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর মুশফিকের আগুনে বোলিংয়ের সামনে আর দাঁড়াতেই পারেননি ঢাকার কেউ। ৭৫ রানের মধ্যে শেষ ৯ উইকেট হারায় তারা। প্রথম ইনিংসের ১১ রানের লিডের সুবাদে রংপুরকে ২১১ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় তারা।
রান তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান আগের রাউন্ডের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪)। শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে ৪৯ রানের জুটি গড়েন আরেক ওপেনার মাইশুকুর রহমান ও অভিজ্ঞ সোহরাওয়ার্দী শুভ।
দারুণ খেলতে খেলতে হঠাৎ ছন্দপতন। সালাউদ্দিন শাকিলের বলে এলবিডব্লিউ হন ৩১ রান করা মাইশুকুর। তিন ওভার পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরে যান তানবীর হায়দার (২)। স্রেফ ৫ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে খানিক চাপে পড়ে যায় রংপুর।
পরে আর বিপদ ঘটতে দেননি সোহরাওয়ার্দী ও নাসির হোসেন। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৬৭ রান যোগ করে দিন শেষ করেন তারা। শুভ ৬৪ ও নাসির ২৬ রানে অপরাজিত আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ১ম ইনিংস: ৮৪
রংপুর ১ম ইনিংস: ৭৩
ঢাকা ২য় ইনিংস: ৫৪.৫ ওভারে ১৯৯ (আগের দিন ৮৮/০) (মজিদ ৩৩, মাহিদুল ৭৪, রনি ২১, রকিবুল ১৮, তাইবুর ১৪, শুভাগত ৬, নাদিফ ০, সুমন ৬, নাজমুল ৮*, শাকিল ১৫, হোসেন ০; সোহেল ৭-০-২০-০, মুশফিক ১৭.৫-২-৭৩-৮, রবিউল ১৪-১-৫৩-২, শুভ ৪-০-১৪-০, মামুন ৬-০-২১-০, আরিফুল ৬-০-১৪-০)
রংপুর ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২১১) ৩৯ ওভারে ১৩৫/৩ (মাইশুকুর ৩১, মামুন ৪, শুভ ৬৪*, তানবীর ২, নাসির ২৬*; সুমন ১০-২-৩৬-২, শাকিল ১৩-১-৩৯-২, তাইবুর ৩-০-৯-০, শুভাগত ২-০-৮-০, হোসেন ৬-১-২০-১, নাজমুল ৫-১-১৫-০)
বিকেএসপিতে রোমাঞ্চকর সমাপ্তির আভাস
সাভারের বিকেএসপিতে সাম্যাবস্থায় রয়েছে ঢাকা মেট্রো ও খুলনা। ব্যাটিং ধস সামলে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৩ রান করেছে খুলনা। ঢাকা মেট্রোর সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ২০০ রানের।
জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ঢাকা মেট্রোর সংগ্রহ ২ উইকেটে ৪৮ রান। বুধবার ৮ উইকেট হাতে নিয়ে আরও ১৫২ রান করতে হবে তাদের। এ অবস্থা থেকে ম্যাচের ফল যেতে পারে যেকোনো দিকে।
প্রথম ইনিংস খুলনাকে ৬৪ রানের গুটিয়ে দিয়ে ১১৮ রান করে মেট্রো।
৩ উইকেটে ৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা টিপু সুলতান ও ইমরানউজ্জামান। প্রথম ঘণ্টা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন তারা।
টানা দুই বলে ১৭ রান করা টিপু ও নাহিদুল ইসলামকে বিদায় করে দেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
ষষ্ঠ উইকেটে ৬১ রানের জুটি গড়েন জিয়াউর রহমান ও ইমরানউজ্জামান। জিয়া ৩৭ রান করে ফিরলে ভাঙে এই জুটি। ইতিবাচক শুরু করে শেখ মেহেদি হাসান ২২ রানে থামেন।
এরপর ইমরানউজ্জামান ও জাওয়াদ রোয়েন দলকে টানেন। দুজনই পেয়েছেন ফিফটি। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি ইমরান। এ দুজনের ৮১ রানের জুটিতে মেট্রোর সামনে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিতে পেরেছে খুলনা।
ফিফটি ছুঁয়েই আউট হন জাওয়াদ। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নের পথ ধরার আগে ৯ চারের মারে ৯২ রান করেন ইমরানজ্জামান। এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসসহ টানা তিন ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোর পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন দুই স্পিনার শরিফউল্লাহ ও আমিনুল।
২০০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দিন শেষ করার আগে জাহিদুজ্জামান (১৩) ও আইচ মোল্লার (১) উইকেট হারায় ঢাকা মেট্রো। নাইটওয়াচম্যান কাজী অনিককে (৭) নিয়ে শেষের ৩.৩ ওভার কাটিয়ে দেন আজমির আহমেদ (২৫)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা ১ম ইনিংস: ৬৪
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ১১৮
খুলনা ২য় ইনিংস: ৮০ ওভারে ২৫৩ (আগের দিন ৮/৩) (টিপু ১৭, ইমরানউজ্জামান ৯২, নাহিদুল ০, জিয়াউর ৩৭, শেখ মেহেদি ২২, জাওয়াদ ৫০, আশিকুর ২১, হালিম ০*; রনি ১০-০-২৮-২, শরিফউল্লাহ ২৫-৯-৬৭-৩, রাকিবুল ১৭-৩-৪৭-২, কাজী অনিক ১০-৩-১৭-০, স্বাধীন ৭-০-৩১-০, আমিনুল ১১-০-৫৬-৩)
ঢাকা মেট্রো ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২০০) ১৭ ওভারে ৪৮/২ (আজমির ২৫*, জাহিদুজ্জামান ১৩, আইচ ১, কাজী অনিক ৭*; আশিকুর ৫-২-১৭-০, জিয়াউর ২-০-১০-০, শেখ মেহেদি ৬-২-১৫-২, টিপু ৪-১-৫-০)