মাশরাফি বিন মুর্তজার রূপগঞ্জকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে আবাহনী।
Published : 07 Apr 2023, 07:53 PM
চিরাগ জানির ফিফটি, সাব্বির রহমানের কার্যকর ইনিংস ও শেষ দিকে সোহাগ গাজির বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে লড়ার মতো সংগ্রহ গড়ল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। কিন্তু বোলাররা পারলেন না নিজেদের মেলে ধরতে। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও আফিফ হোসেনের পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংসে সুপার লিগ নিশ্চিত করল আবাহনী লিমিটেড।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শুক্রবার আরেক ম্যাচে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে হারিয়ে সুপার লিগের টিকেট পেয়েছে শিরোপাধারী শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবও।
ফতুল্লায় মাশরাফি বিন মুর্তজাদের বিপক্ষে ৫ উইকেটে জিতেছে আবাহনী। প্রতিপক্ষের ২৮৬ রান তারা পেরিয়ে যায় ৪ বল বাকি থাকতে।
চলতি আসরে ৮ ম্যাচের সবকটিই জিতল আবাহনী। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে মোসাদ্দেক হোসেনের দল। সমান ম্যাচ খেলা শেখ জামাল ১৪ পয়েন্ট নিয়ে আছে দুইয়ে।
আবাহনীর দারুণ জয়
আবাহনীর জয়ের নায়ক আফিফ। অপরাজিত ৮০ রান করে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ৬২ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি ৪ ছক্কা ও ৬ চারে। ইনিংস শুরু করতে নেমে ১ ছক্কা ও ৬ চারে ৭৬ রান করেন নাঈম শেখ।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে মুনিম শাহরিয়ারকে হারানো রূপগঞ্জ শক্ত ভিত পায় পারভেজ হোসেন ও সাব্বিরের ব্যাটে। ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৯ রান করা পারভেজকে ফিরিয়ে ৮৩ রানের জুটি ভাঙেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার দানিশ আজিজ।
৩ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৮ রান করে কয়েক ওভার পর রকিবুল ইসলামের বলে কটবিহাইন্ড হন সাব্বির। ইরফান শুক্কুরকে ইনিংস বড় করতে দেননি আজিজ। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫ চারে ৫৪ রান করা চিরাগ তানভীর ইসলামের শিকার।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৩ ছক্কায় ২৮ রান করেন মাশরাফি। শেষ দিকে সোহাগের ৫ ছক্কা ও ১ চারে ২০ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংসে তিনশর কাছে যায় রূপগঞ্জের পুঁজি।
আবাহনীর হয়ে বাঁহাতি স্পিনে ৪৩ রানে ৪ উইকেট নেন আজিজ।
এনামুল হক ও নাঈম শেখের ব্যাটে রান তাড়ায় শুরুটা বেশ ভালো হয় আবাহনীর। তাদের ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে এনামুলের (২৮) বিদায়ে। মাশরাফি দ্রুত ফিরিয়ে দেন আজিজকে।
জাকের আলিকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন নাঈম শেখ। ৫১ বলে ফিফটি করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু থেমে যান তিনি সত্তর পেরিয়ে।
জাকেরের (২ চারে ৩১) বিদায়ের পর মোসাদ্দেক কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন আফিফকে। আব্দুল হালিমের বলে ২৮ রান করে বোল্ড হয়ে যান আবাহনী অধিনায়ক।
সাইফ উদ্দিনকে নিয়ে বাকি পথ পাড়ি দেন ৩৯ বলে ফিফটি করা আফিফ। দুইজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৫৫ রানের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ২৮৬/৯ (মুনিম ১৪, পারভেজ ৩৯, সাব্বির ৪৮, ইরফান ২১, চিরাগ ৫৪, তানবির ১৮, মাশরাফি ২৮, মুক্তার ৬, সোহাগ ৩৮, রাজিবুল ৫*; সাইফ ৫-০-৪৩-২, মোসাদ্দেক ৭-০-৫০-০, তানভীর ৮-০-৩৯-১, তানজিম ৫-০-৩১-১, রকিবুল ১০-০-৪৪-১, আজিজ ১০-০-৪৩-৪, রিপন ৫-০-৩৬-০)
আবাহনী লিমিটেড: ৪৯.২ ওভারে ২৮৯/৫ (এনামুল ২৮, নাঈম শেখ ৭৬, আজিজ ৯, জাকের ৩১, আফিফ ৮০*, মোসাদ্দেক ২৮, সাইফ ২৬*; চিরাগ ৯-০-৪৫-০, সোহাগ ১০-১-৫২-০, রাজিবুল ১০-০-৫১-২, মাশরাফি ৮.২-০-৫৮-১, হালিম ৮-০-৫০-২, মুক্তার ৩-০-২০-০, তানবির ১-০-৭-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আফিফ হোসেন
রসুলের বোলিং দ্যুতিতে শেখ জামালের জয়
বল হাতে আলো ছড়ালেন পারভেজ রসুল ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। তাদের নৈপুণ্যে রূপগঞ্জ টাইগার্সকে দুইশর আগে থামিয়ে দিল শেখ জামাল। পরে ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত অবদানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়াল গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে রূপগঞ্জ টাইগার্সকে ২ উইকেটে হারায় শেখ জামাল। ২০০ রানের লক্ষ্যে তারা পৌঁছে যায় ৮১ বল বাকি থাকতে।
রূপগঞ্জ টাইগার্সকে অল্পতে গুটিয়ে দেওয়ার পথে ৩৫ রানে ৪ উইকেট নেওয়া ভারতীয় অলরাউন্ডার রসুল হন ম্যাচ সেরা। ৩৩ রানে ৩ উইকেট নেন মৃত্যুঞ্জয়।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রূপগঞ্জ টাইগার্স শিবিরে শুরুতেই ছোবল দেন রসুল। সেই ধাক্কা সামাল দেয় তারা ইমরানুজ্জামান ও সালমান হোসেনের ব্যাটে।
ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ইমরানুজ্জামানকে (৩৫) বিদায় করেন মৃত্যুঞ্জয়। রসুলের শিকার ৬ চারে ৪৫ রান করা সালমান। দলটির হয়ে ত্রিশ ছাড়াতে পারেন আর কেবল সানজামুল ইসলাম (৬ চারে ৪৪)।
রান তাড়ায় ১৫ রানে সৈকত আলি ও ফজলে মাহমুদকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় শেখ জামাল। দুইজনই নাসুম আহমেদের শিকার।
৮ চারে ৩৯ রান করে ফেরেন সাইফ হাসান। তাইবুর রহমানের ৩১, তাওহিদ হৃদয়ের ৪৩ ও নুরুল হাসান সোহানের ৪৯ রানে জয়ের ভিত পেয়ে যায় শেখ জামাল। তাদের বিদায়ের পর নিরাপদেই দলকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দেন মৃত্যুঞ্জয় ও আরিফ আহমেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৪৬.৩ ওভারে ১৯৯ (ইমতিয়াজ ৭, ইমরানুজ্জামান ৩৫, সালমান ৪৫, অঙ্কিত ০, নাঈম ১, সানজামুল ৪৪, শামীম ৭, আলাউদ্দিন ১৭, নাসুম ১৪, হাসান ১২, মুকিদুল ০*; শফিকুল ৬.৩-০-৩২-১, রসুল ১০-২-৩৫-৪, মৃত্যুঞ্জয় ৮-১-৩৩-৩, আরিফ ৭-০-৩৫-০, জিয়াউর ৫-০-১৬-০, সৈকত ৪-০-২০-০, সাইফ ৬-১-২১-১)
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৩৬.৩ ওভারে ২০০/৮ (সাইফ ৩৯, সৈকত ৫, ফজলে মাহমুদ ১, তাইবুর ৩১, হৃদয় ৪৩, সোহান ৪৯, রসুল ১, জিয়াউর ১৫, মৃত্যুঞ্জয় ১০*, আরিফ ২*; নাসুম ১০-০-৫৯-২, সানজামুল ৭-১-৩৪-১, হাসান ৮.৩-০-৪৯-১, নাঈম ১-০-৪-০, মুকিদুল ৫-০-২৮-১, আলাউদ্দিন ৫-১-২৬-২)
ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ২ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: পারভেজ রসুল
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল আল আমিন জুনিয়র
বোলারদের সম্মিলিত চেষ্টায় ঢাকা লেপার্ডসকে দেড়শর আগে গুটিয়ে দিল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। পরে বাকি কাজ অনায়াসে সারলেন দলটির ব্যাটসম্যানরা। এক ম্যাচ পর আবারও জয়ের দেখা পেল প্রাইম ব্যাংক।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে প্রাইম ব্যাংকের জয় ৬ উইকেটে। প্রতিপক্ষকে ১৪৮ রানে থামিয়ে ১০৯ বল আগে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তারা।
উজ্জ্বল অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরা হন আল আমিন জুনিয়র। অফ স্পিনে ১০ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে তিনি করেন ৩০ রান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা লেপার্ডসের শুরুটা ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। ২৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। এই চারজনের কেউই ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক।
কিছুটা লড়াই করে ৪ চারে ৩২ রান করে সাজঘরে ফেরেন রকিবুল হাসান। পরে দলকে একাই টানেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। পায়ে অস্বস্তিবোধ করায় ৩ চারে ৫৩ রান করে মাঠ ছাড়েন তিনি। দলটির হয়ে দুই অঙ্কে আর যেতে পারেন কেবল দেলোয়ার হোসেন (২৭)।
লক্ষ্য তাড়ায় শাহাদাত দিপু ও বিশাল চৌধুরির উদ্বোধনী জুটিতে ৫২ রান পায় প্রাইম ব্যাংক। ২ চারে ১৯ রান করে ফেরেন বিশাল। ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে শাহাদাত বিদায় নেন ৩ চারে ৪৩ রান করে।
এরপর দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেন আল আমিন জুনিয়র ও মোহাম্মদ মিঠুন। আল আমিনের পর নাসির হোসেন বিদায় নিলেও দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক মিঠুন। করেন ৪ চারে ৩৮ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা লেপার্ডস: ৪২.১ ওভারে ১৪৮/৯ (পিনাক ১, জুনায়েদ ৪, সাব্বির ৯, জেম ৯, রকিবুল ৩২, সোহরাওয়ার্দী ৫৩ আহত অবসর, মইন ০, জনি ৫, দেলোয়ার ২৭, শাকিল ০, সোহেল রানা ০*; নাসির ১০-০-৪২-১, আল আমিন জুনি. ৫-১-১০-২, আতিক ৯-০-৩৫-২, শফিউল ২-০-১৫-০, আলিস ৮-০-২০-৩, জানাত ৪.১-১-১৯-১, কাপালী ৪-০-৭-০)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৩১.৫ ওভারে ১৫১/৪ (শাহাদাত ৪৩, বিশাল ১৯, আল আমিন জুনি. ৩০, মিঠুন ৩৮*, নাসির ৮, ইয়াসির ১০*; শাকিল ৬-০-৩৩-০, সোহেল রানা ৮-০-৩৬-১, জনি ১০-১-২৭-২, দেলোয়ার ৩-০-২৩-০, মইন ৪.৫-০-৩২-০)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আল আমিন জুনিয়র