Published : 05 Apr 2023, 09:08 PM
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দারুণ সেঞ্চুরি উপহার দিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সম্ভাবনা জাগিয়ে তা করতে পারলেন না সাকিব আল হাসান। কিপারের ব্যর্থতায় বেঁচে গিয়েও লিটন কুমার দাস আউট হলেন আলগা শটে। আর সঙ্গী না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়লেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দিন শেষে জেমি সিডন্সের কণ্ঠে এই তিন ব্যাটসম্যানের বড় স্কোর না পাওয়ার হতাশা।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে টপ-অর্ডারের ব্যর্থতার পর মিডল অর্ডারে দারুণ ব্যাটিং করেছেন মুশফিক-সাকিব-লিটনরা। শেষ দিকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন মিরাজও। তবু স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের সেঞ্চুরিয়ান স্রেফ একজন। টেস্ট ক্যারিয়ারে দশম সেঞ্চুরিতে মুশফিক করেছেন ১২৬ রান।
প্রায় ছয় বছর পর তিন অঙ্কের আশা জাগিয়েও সাকিব থামেন ৯৪ বলে ৮৭ রান করে। অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল সুইপ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ক্যারিয়ারে ১৩তম বার থামেন ৮০ পেরিয়েও সেঞ্চুরি ছুঁতে না পারার হতাশা নিয়ে।
লিটন ও মিরাজ অবশ্য সেঞ্চুরির ধারেকাছেও যেতে পারেননি। লিটন তো ছুঁতে পারেননি পঞ্চাশও। তবে সাকিবের মতোই তিনি ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে এগোচ্ছিলেন।
উইকেটে গিয়ে প্রথম ওভারেই তিন চার মেরে নিজের অভিপ্রায় পরিষ্কার করা লিটন আউট হন আগ্রাসী শট খেলেই। বেন হোয়াইটের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ ডেলিভারি মিড অনের ওপর দিয়ে খেলার চেষ্টায় হ্যারি টেক্টরের হাতে ধরা পড়েন কিপার-ব্যাটসম্যান। ৪১ বলে ৮ চারে করেন ৪৩ রান।
দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের মতো অতো আগ্রাসী ছিলেন না মুশফিক ও মিরাজ। তবে আলগা বল পেয়ে দুজনই দিয়েছেন যথাযথ শাস্তি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি করতে মুশফিক খেলেন ১৩৫ বল। শেষ দিকে নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে খেলে ৫৫ রানের ইনিংসে ৬ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন মিরাজ।
মূলত এই চার ব্যাটসম্যানের কল্যাণেই আয়ারল্যান্ডের ২১৪ রান ছাড়িয়ে ১৫৫ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাদের ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে সিডন্সে কণ্ঠে তৃপ্তির ছোঁয়া।
“হ্যাঁ (দলের ব্যাটিংয়ে খুশি)। কিছুটা আগ্রাসী ব্যাটিং, আমার মনে হয়। আমরা কিছু বাজে বল পেয়েছি। ভালো বিষয় হলো, ছেলেরা সেগুলো কাজে লাগাতে প্রস্তুত ছিল। তাই দ্রুত রান উঠেছে, যা খুব দ্রুত ম্যাচটাকে এগিয়ে নিয়েছে। আমরা যেভাবে ব্যাটিং করেছি, তাতে খুশি।”
“চার জনের (সেঞ্চুরি করা উচিত ছিল), একজন করেছে। শেষ দিকে সঙ্গী পেলে মিরাজও করতে পারত। শেষ সেশনে ৫০ রানে (আসলে ৩৮ রানে) ৫ উইকেট হারাই আমরা। দিনের একমাত্র নেতিবাচক দিক ছিল এটি। লিটন-সাকিবও সেঞ্চুরি করতে পারত।”
মুশফিকের সেঞ্চুরি, সাকিব-মিরাজের ফিফটির সঙ্গে লিটনের চল্লিশ ছাড়ানো ইনিংসে বাংলাদেশ থামে ৩৬৯ রানে। স্কোর আরও বড় না হওয়ায় কিছুটা অসন্তুষ্ট সিডন্স।
“হ্যাঁ! শতভাগ সত্য (দলীয় স্কোর ৪০০র বেশি হওয়া উচিত ছিল)। আমার মতে, আরও তিন জন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করতে পারত। অন্তত দুজন। সাকিব ও লিটনের উচিত ছিল খেলা প্রতিপক্ষের ধরাছোয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়া। তবে (দিনের শেষ দিকে) ৪ উইকেট পাওয়ায় ভালো লাগছে।”
দিন শেষে দলীয় স্কোর নিয়ে হতাশার জায়গা থাকলেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ধরনে স্পষ্ট ছিল দ্রুত রান তোলার তাড়না। দ্বিতীয় দিন স্রেফ ৭০.৩ ওভারেই ৩৩৫ রান করে স্বাগতিকরা। সাকিব-মুশফিক বা মুশফিক-লিটনের জুটিতে রান আসে ওভারপ্রতি প্রায় ৬ করে।
সিডন্স জানালেন, দলীয় পরিকল্পনাতেই ছিল দ্রুত রান তোলার বিষয়টি।
“আমরা বেশ কিছু দিন ধরেই এই মানসিকতা রপ্তের চেষ্টা করছি। অবশ্যই আমরা এখন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলছি। তাই আগ্রাসী খেলার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। বড় স্কোর করা শিখতে হবে আমাদের এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জটা ছিল আমরা যেন দ্রুত রান তুলতে পারি।”
টেস্টের আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ছিল এমন ছাপ। ওয়ানডেতে পরপর দুই ম্যাচে সাড়ে তিনশ ছুঁইছুঁই স্কোর করে তারা। টি-টোয়েন্টিতে দুই ম্যাচে ছাড়ায় ২০০ রান। এটি আরও ধারাবাহিকভাবে করার তাগিদ দিলেন সিডন্স।
“বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে, আমরা বিশ্বকাপে ২৪০-২৫০ রানে খুশি হতে পারি না। আমাদের ৩০০ বা তার বেশি করতে হবে। তো এখন ভালো সময়, আমরা সত্যিই ভালো ব্যাটিং করেছি। টি-টোয়েন্টিতে বড় দলগুলোর বিপক্ষেও এমনটা করতে হবে। আমাদের জন্য এটি দারুণ চ্যালেঞ্জ ছিল। বেশ কয়েকজন নতুন ক্রিকেটার যারা আগ্রাসী ছিল এবং আমরা দারুণ সিরিজ কাটিয়েছি। এসব প্রতিভা আসতে দেখা আনন্দের।”