বেশ কয়েকটি ম্যাচে থিতু হয়েও আউট হওয়ার পর অবশেষে দলের আশা পূরণ করে বড় রান করে স্বস্তির ছোঁয়া পাচ্ছেন বরিশাল অধিনায়ক।
Published : 14 Feb 2024, 07:06 PM
প্রায় চার মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরে প্রথম ম্যাচে তামিম ইকবাল খেলেছেন ৩৫ রানের ইনিংস। পরের সাত ম্যাচে ত্রিশ ছুঁয়েছেন আরও তিনবার। কিন্তু কোনোটিকেই পারেননি পঞ্চাশে রূপ দিতে। অবশেষে নিজ শহরের মাঠে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে তিনি ঘুচিয়েছেন সেই আক্ষেপ। ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক এখন স্বস্তির ছোঁয়া পাচ্ছেন দলের চাওয়া মেটাতে পারায়।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে তামিম করেছেন ৭১ রান। ৪৫ বলের ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন ৭ চার ও ৪ ছক্কায়। চলতি আসরে ৯ ম্যাচে এটিই তার প্রথম ফিফটি। ইনিংসের প্রথম ছক্কায় তিনি ছুঁয়েছেন বিপিএলে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে একশ ছক্কার মাইলফলক।
তামিমের ফিফটির সঙ্গে বাকিদের ছোট ছোট অবদানে ৬ উইকেটে ১৮৬ রান করে বরিশাল। পরে অ্যালেক্স রস ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও অন্যরা হতাশ করায় ১৫৯ রানে থামে ঢাকার ইনিংস। ২৭ রানের জয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে উঠে যায় তামিমের দল।
পিঠের পুরোনো চোট ফিরে আসায় গত সেপ্টেম্বরের পর ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন তামিম। বিপিএল দিয়েই তিনি ফিরেছেন মাঠে। প্রথম আট ম্যাচে বেশ কয়েকবার ভালো শুরুর পরও তার ইনিংস থেমেছে ত্রিশ-চল্লিশে।
চট্টগ্রামের মাঠে গিয়ে ঢাকার বিপক্ষে তিনি পেয়েছেন বড় রানের দেখা। এই ইনিংসের পর চলতি আসরে রানের তালিকায় সবার ওপরে ছিলেন তিনিই। পরে ঢাকার ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ স্রেফ তাকে ৩ রানে পেছনে ফেলে আবার উঠে গেছেন শীর্ষে।
আগের ম্যাচগুলোতে বারবার ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হওয়া তামিম এবার অধিনায়কোচিত ইনিংসে পেয়েছেন ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি। পুরস্কার গ্রহণের মঞ্চে বরিশাল অধিনায়কের কণ্ঠে ফুটে উঠল রানে ফেরার সন্তুষ্টি। ।
“অবশ্যই… অবশ্যই (বড় রান পাওয়া আনন্দের)। বেশ কয়েকটি ৩০-৪০ রানের ইনিংস খেলেছি। দল আমার ওপর অনেক নির্ভর করে। তারা আশা করে, আমি বড় রান করব। আজকে অবদান রাখতে পেরে আমি খুব খুশি।”
শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি অনায়াসে জিতলেও দলের স্কোরে অবশ্য তেমন খুশি হতে পারেননি তামিম।
“সার্বিক ব্যাটিং নিয়ে বললে, আমার এখনও মনে হয় যে, আমরা আরও ভালোভাবে শেষ করতে পারতাম। আমার মনে হয়, আমরা ১৫-২০ রান কম করেছিলাম এই উইকেটে।”
স্কোরবোর্ডে অধিনায়কের প্রত্যাশা অনুযায়ী রান না উঠলেও সেটি বুঝতে দেননি বরিশালের বোলাররা। প্রথম ওভারে মোহাম্মদ নাঈম শেখকে ফিরিয়ে শুরুটা করেন কেশাভ মহারাজ। পুরো স্পেলেই দারুণ বোলিং করেন বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনার।
পরে সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের তোপে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি ঢাকা। দুই পেসারই নেন ৩টি করে উইকেট। আরেক পেসার ওবেড ম্যাককয় স্রেফ ১ উইকেট পেলেও কিপটে বোলিংয়ে আটকে রাখেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের।
তাই তো ম্যাচ শেষে বোলারদের প্রশংসায় ভাসালেন বরিশাল অধিনায়ক।
“আমার বিশ্বাস, টুর্নামেন্ট জিততে বোলিং বিভাগ ভালো থাকতে হবে। বোলাররাই ট্রফি এনে দেয়, ম্যাচ জেতায়। আজকের বোলিং খুব ভালো ছিল। কেশাভ (মহারাজ) প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দারুণ বোলিং করেছে। ওবেড (ম্যাককয়) আবারও, সাইফউদ্দিন... সবাই-ই ভালো করেছে। আমি খুব খুশি।”
পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে উঠলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ নেই বরিশালের। তাদের সমান ৯ ম্যাচে ৫টি জিতেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সও। ৮ ম্যাচে ৪ জয় নিয়ে খুব পিছিয়ে নেই খুলনা টাইগার্স। এমনকি প্লে-অফের সম্ভাবনা টিকে আছে ৯ ম্যাচে ৩ জয় পাওয়া সিলেট স্ট্রাইকার্সেরও।
তাই নিজেদের শেষ তিন ম্যাচে নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিতে চান তামিম।
“টুর্নামেন্টজুড়ে আমরা যেভাবে খেলেছি, যেসব ম্যাচে আমরা হেরেছি, খুব খুব ক্লোজ ম্যাচ ছিল। এটি ভালো বিষয় যে, সঠিক সময়ে আমরা দল হিসেবে ভালো করছি। এটি গুরুত্বপূর্ণ।”
“(পয়েন্ট টেবিলের ওপরের দুই দলের জন্য) কোনো বার্তা নয় (হাসি)। আমরা শুধু নিজেদের খেলায় মন দিচ্ছি। আমরা জানি, এখান থেকে সব কিছু বাঁচা-মরার লড়াই। সামনের ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
একই মাঠে শনিবার নিজেদের পরের ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে খেলবে বরিশাল।