বদলে যাওয়া বরিশালের ‘গেম চেঞ্জার’ সাইফউদ্দিন-মেয়ার্স

শিরোপা জিতে দুই পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও কাইল মেয়ার্সকে বড় কৃতিত্ব দিলেন ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2024, 05:27 AM
Updated : 2 March 2024, 05:27 AM

ইনিংসের সেটি শেষ ওভার। স্ট্রাইকে তখন আগের ৮ বলে ৪টি ছক্কা মারা আন্দ্রে রাসেল। শেষ ওভারেই তার ব্যাটে চার-ছক্কার ঝড় ছিল প্রত্যাশিতই। কিন্তু তাকে একদম মিইয়ে রাখেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পাঁচ বল খেলে ছক্কা তো দূরের কথা, কোনো বাউন্ডারিও মারতে পারেননি রাসেল। সাইফউদ্দিনের ওভারটি ছিল এতটাই দুর্দান্ত। 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচের শেষ ওভারটির মতো প্রায় সব ম্যাচেই ফরচুন বরিশালের বোলিংয়ের বড় নির্ভরতা ছিলেন সাইফউদ্দিন। প্রয়োজনের সময় ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছেন ২৭ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডার। তাই তো তামিম ইকবালের চোখে বরিশালের ‘গেম চেঞ্জার’ সাইফউদ্দিন। 

সাইফউদ্দিনের মতো অলরাউন্ড নৈপুণ্যে শিরোপা জয়ে বড় অবদান রেখেছেন কাইল মেয়ার্সও। শিরোপা জয়ের পর ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের কথাও আলাদা করে বললেন বরিশাল অধিনায়ক। 

পিঠের পুরোনো চোটের কারণে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে খেলতে পারেননি সাইফউদ্দিন। তাকে ছাড়াই প্রথম ছয় ম্যাচ খেলে বরিশাল। ওই ছয় ম্যাচে তাদের জয়-পরাজয় ছিল সমান ৩টি করে। এরপর সাইফউদ্দিন দলে যোগ দিতেই বদলে যায় বরিশালের সার্বিক চিত্র। 

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে প্রায় ৯ মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরেন সাইফউদ্দিন। প্রথম ম্যাচে বল হাতে ২৪ রানে ১ উইকেটের পর ব্যাটিংয়ে তিনি খেলেন ১৮ বলে ৩০ রানের ইনিংস। দল না জিতলেও নিজের প্রত্যাবর্তনের বার্তা বেশ ভালোভাবেই দেন সাইফউদ্দিন। 

এরপর যত সময় গড়িয়েছে, পাওয়ার প্লে ও ডেথ ওভারে বরিশালের বড় অস্ত্রে পরিণত হয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। মাঝপথে দলে যোগ দিয়েও দলের সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট নিয়েছেন তিনিই। ওভারপ্রতি খরচ করেছেন সাত রানের কম। পাওয়ার প্লেতে তার শিকার ৬ উইকেট আর শেষের ওভারগুলোতে নিয়েছেন ৭টি। ব্যাট হাতে ৪ ইনিংসে ১৮৫ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৬৩ রান। 

শিরোপা জেতার পর সংবাদ সম্মেলনে ফাইনাল ম্যাচে সাইফউদ্দিনের শেষ ওভারটির কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেন তামিম। চোটের কারণে এই তাকে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেও তার ওপর দলের ভরসার কথা মনে করিয়ে দিলেন বরিশাল অধিনায়ক। 

“আমার মনে হয়, সাইফ উদ্দিনের অন্তর্ভুক্তি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা শিরোপা জিতেছি, ওই শেষ ওভারটা অবিশ্বাস্য ছিল। ওখানে যদি ১৫ রানও হতো, আমরা হয়তো ১৭০ রান তাড়া করতাম। তখন খেলাটা ভিন্ন হয়ে যেত। তাই সাইফউদ্দিনের অন্তর্ভুক্তিটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”  

“আমরা এই বাজিটা ধরেছি। কারণ কেউ নিশ্চিত ছিল না, সাইফউদ্দিন খেলতে পারবে কি পারবে না। আমরা সেই সুযোগটা দারুণভাবে নিয়েছি এবং সে খুব ভালোভাবে প্রতিদান দিয়েছে। আমার মনে হয়, তার অন্তর্ভুক্তিটা আমাদের জন্য গেম চেঞ্জার ছিল। শুরুর দিকে আমাদের বোলিং অতটা শক্তিশালী ছিল না। ও আসার পরে... (শক্তি বেড়েছে)।” 

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে মোহাম্মদ আমির, ফাখার জামানদের নিয়ে দল সাজিয়েছিল বরিশাল। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের অনাপত্তিপত্র বিষয়ক জটিলতায় বিপিএল খেলতে আসতে পারেননি এ দুই পাকিস্তানি ক্রিকেটার। টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র ৩-৪ দিন আগে তাদের অনুপস্থিতির কথা জানার পর দলীয় পরিকল্পনা সাজাতে ভোগান্তিতেই পড়ে বরিশাল। 

পরে বিদেশি সমস্যার সমাধান হয়ে আসেন মেয়ার্স। টুর্নামেন্টের শেষ দিকে দলে যোগ দিয়ে সাইফউদ্দিনের মতোই অলরাউন্ড অবদান রাখেন ক্যারিবিয়ান তারকা। নতুন বলে সুইং বোলিংয়ের প্রদর্শনী আর ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংসে প্রতি ম্যাচেই বরিশালকে এগিয়ে দেন তিনি। 

ফাইনাল ম্যাচে ২৬ রানে ১ উইকেটের পর ব্যাট হাতে করেন ৩০ বলে ৪৬ রান। তার হাতেই ওঠে ফাইনাল সেরার পুরস্কার। ছয় ম্যাচের তিনটিতে ম্যাচ সেরা হন। সব মিলিয়ে ১৫৭.৭৯ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেন ২৪৩ রান ও বোলিংয়ে ৯ উইকেট নেন ওভারপ্রতি মাত্র ৫.৯১ রান দিয়েও। 

ক্যারিবিয়ান তারকাকেও প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি বরিশাল অধিনায়ক। 

“আমরা যখন কাইল মেয়ার্সকে দলে নেওয়ার সুযোগ পেলাম... সে নতুন বলে বোলিং করে এবং যেভাবে ব্যাটিং করে, আমার মতে তার অন্তর্ভুক্তি অসাধারণ ছিল। আসার পর থেকে ব্যাটিং বা বোলিং, কোনো না কোনো কিছুতে ওর প্রভাব ছিল। প্রতিটি ম্যাচে সে দুটিই করেছে। তার পারফরম্যান্সটা আমাদের জন্য অনেক বড় বিষয় ছিল।”