ফরচুন বরিশালকে বিপিএলের ফাইনালে তুলে মোহাম্মদ আলি জানালেন, এক ওভারে চার উইকেট আগেও নিয়েছেন তিনি পাকিস্তানে।
Published : 04 Feb 2025, 09:23 AM
বিপিএলে এখনও পর্যন্ত হ্যাটট্রিক আছে আটটি। তবে এক ওভারে চার উইকেট শিকারের নজির ছিল না এতদিন। মোহাম্মদ আলির সৌজন্যে এই নজির দেখেছেন বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। পাকিস্তানি এই পেসারের অবশ্য এই অভিজ্ঞতা প্রথম নয়। নিজ দেশে আগেও এই স্বাদ দিনি একাধিকবার পেয়েছেন বলেই জানালেন ফরচুন বরিশালের পেসার।
বিপিএলের কোয়ালিফায়ার ম্যাচে সোমবার চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ২৪ রানে ৫ উইকেট শিকার করে ম্যাচ-সেরা হন আলি। এর মধ্যে ৪টি উইকেট নিয়েছেন তিনি এক ওভারেই। ১৯তম ওভারে আউট করেছেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ, শামীম হোসেন, আরাফাত সানি ও আলিস আল ইসলামকে।
১৯তম ওভারে আলির ওই দুর্দান্ত ওভার চিটাগংয়ের স্কোর আরও বড় হওয়ার সম্ভাবনা শেষ করে দেয়। শেষের ওভারগুলোয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন তিনি গত পাকিস্তান সুপার লিগেও।
ম্যাচের পর আলি বললেন, দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরে তার ভালো লাগছে।
“দলের জন্য পারফর্ম করলে সবসময়ই ভালো লাগে। পাকিস্তানের এই ধরনের কিছু আমি গোটা দুয়েকবার করেছি আগেও। আমার জন্য এটা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে এক ওভারে চার উইকেট শিকারি প্রথম বোলার হতে পেরে ভালো লাগছে।”
“এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোয় আমি আরও বেশি ধৈর্য ধরতে চাই, আরও ধারাবাহিক হতে চাই। চেষ্টা করি পরিস্থিতির দাবি মেটাতে।”
এই ম্যাচে তার পারফরম্যান্স নিয়ে যতটা আলোচনা, ততটাই আলোচনা তার সুযোগ পাওয়া নিয়েও। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই তিনি দলের সঙ্গে ছিলেন। অথচ প্রথম ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেন কোয়ালিফায়ারে এসে!
গত পাকিস্তান সুপার লিগে তার বোলিং দেখেই তাকে মনে ধরে যায় তামিম ইকবালের। ফরচুন বরিশালে খেলার জন্য বিপিএল শুরুর বেশ আগেই তাকে চুক্তিবদ্ধ করে রাখেন অধিনায়ক। কিন্তু ফাহিম আশরাফ, জাহান্দাদ খানরা খেললেও সুযোগ পাচ্ছিলেন না আলি। এর মধ্যে কিছুদিনে জন্য অবশ্য তাকে দেশেও ফিরতে হয়েছিল পাকিস্তানের টেস্ট স্কোয়াডে থাকায়।
দিনের পর দিন একাদশের বাইরে থেকে অপেক্ষা করে গেছেন সুযোগের আর চেষ্টা করে গেছেন অনুশীলনে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে।
“আমি শুধু আমার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম, আমার পালা কখন আসবে। সবসময়ই বিশ্বাস করি, আমি খেলি বা না খেলি, দলকে জিততেই হবে। পাশাপাশি এটিও বিশ্বাস করি, যখন সুযোগটি আসবে, তখন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ার চেয়ে একদম তৈরি থাকা ভালো। এই ‘টাইমলি’ পারফরম্যান্সের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম আমি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন পারফরম্যান্স করতে পেরে আমি খুশি।”
‘টাইমলি’ পারফরম্যান্সের কথা তিনি বলেছেন ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীয় আয়োজনেও। এত দিন ধরে তাকে ম্যাচ খেলার অপেক্ষা করতে হলো। শেষ পর্যন্ত যে ম্যাচে সুযোগ পেয়ে আলো ছড়ালেন, তার নিজের কাছেই সেটিকে মনে হচ্ছে সময়োচিত।
“আমার জন্য এটা ‘টাইমলি’ পারফরম্যান্স। কোয়ালিফায়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আমার কাছ থেকে এরকম পারফরম্যান্স এলো। খুবই খুশি আমি।”
পাকিস্তানের ক্রিকেটে তার মূল পরিচিতি লাল বলের ক্রিকেটার হিসেবে। পাকিস্তানের হয়ে চারটি টেস্ট খেলেছেন। গত অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি টেস্টেও তিনি খেলেছেন। লাল বলের বোলার তকমার কারণে পিএসএলেও খেলার সুযোগ পাননি দীর্ঘদিন। অবশেষে বয়স ৩১ পেরিয়ে গত পিএসএলে খেলার সুযোগ পান। মুলতান সুলতান্সের হয়ে ১৯ উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন দারুণভাবে।
পরে ডিসেম্বরে আরেক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন্স টি-টোয়েন্টি কাপে ২২ উইকেট শিকার করেন কেবল ৯ ম্যাচ খেলেই। এখন তো দেশের বাইরের লিগে অভিষেকে বাজিমাত করলেন।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৭ ম্যাচে ১৭৬ উইকেট শিকারি বোলারের মতে, বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে ভালো করলে অন্য সব সংস্করণই সহজ হয়ে যায়।
“টেস্ট ক্রিকেট বা চারদিনের ম্যাচ হলো সবচেয়ে কঠিন ক্রিকেট। চারদিনের ম্যাচে বা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো বোলার হলে সংক্ষিপ্ত সংস্করণ সবার জন্যই সহজ হয়ে ওঠে।”
“বিশ্বের সব জায়গাতেই, লোকে মনে করে, লাল বলের বোলাররা সাদা বলে ভালো পারফর্ম করতে পারে না। আমি শুধু নিজের ক্রিকেট উপভোগ করি, সেটা চারদিনে ম্যাচ হোক বা ওয়ানড কিংবা টি-টোয়েন্টি। পাকিস্তান দলে সুযোগ পেলাম বা না পেলাম, আমি শুধু খেলা উপভোগ করতে চাই, সব সংস্করণই।”
সব সংস্করণে ভালো করার জন্য বোলিং নিয়ে অনেক কাজও করে চলেছেন তিনি। বেশ কিছু ত্রুটি শুধরে নিয়ে নিজেকে আরও পোক্ত করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় পাশে পেয়েছেন তিনি সাবেক লেগ স্পিনার ও এখনকার কোচ মানসুর আমজাদকে।
“গত তিন বছরে আমার বোলিং কোচ মানসুর আমজাদের সঙ্গে কাজ করছি আমি। আমার মতো তিনিও শিয়ালকোটের। আমার বোলিংয়ে যা কিছু শুধরে নিয়েছি, সেসব কেবল তার কৃতিত্ব।”
ফাইনালেও এখন আলির কাছ থেকে দারুণ কিছুর অপেক্ষায় থাকবে বরিশাল। ফাইনাল ম্যাচটি হবে শুক্রবার।