ম্যাচের শেষ দিকে হঠাৎ উত্তেজনা ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত খুলনা টাইগার্সকে দ্বিতীয় হারের স্বাদ দিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় পেল সিলেট স্ট্রাইকার্স।
Published : 12 Jan 2025, 05:31 PM
সহজ জয়ের পথেই এগোচ্ছিল সিলেট। ১৫ বলে খুলার যখন প্রয়োজন ৪৫ রান, উইকেট বাকি তখন তিনটি। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ম্যাচের রঙ বদলাতে যে সময় লাগে না, তা ফুটে উঠল আবার। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও আবু হায়দার ম্যাচের চিত্র বদলে দিলেন চোখের পলকে। শেষ ওভারে যখন টানা দুটি চার মারলেন আবু হায়দার, খুলনার জয় তখন খুবই সম্ভব! শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর চাপ সামলে শেষ তিন বল দারুণভাবে শেষ করলেন বোলার রুয়েল মিয়া। নীরব হয়ে পড়া গ্যালারিতে প্রাণ ফিরিয়ে জয়ের উল্লাসে মেতে উঠল সিলেট।
বিপিএলে রোববার খুলনা টাইগার্সকে দ্বিতীয় হারের স্বাদ দিয়ে টানা দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেল সিলেট স্ট্রাইকার্স। শেষের শঙ্কা সরিয়ে ঘরের মাঠে জিতল তারা ৮ রানে।
খুলনা যেভাবে ঝড় তুলেছিল শেষ দিকে, ম্যাচের প্রথম ভাগে সিলেটও ১৮২ রানের সংগ্রহ গড়তে পারে খেলার গতি বদল করেই। প্রথম সাত ওভারে তাদের রান ছিল মোটে ৩০। এরপর রানের গতিতে দম লাগে একটু। তার পরও ইনিংসের মাঝমাঝি অবস্থা ছিল অনেকটা হাঁসফাঁস। কিন্তু পরের সময়টায় এমন উত্তাল হাওয়া বয়ে গেল মাঠময়, সেই তোড়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে স্কোরবোর্ডও। খুলনা শেষ পর্যন্ত আর নাগাল পায়নি সেই রানের।
সিলেটের আগের জয়ের নায়ক জাকির হাসান জ্বলে ওঠেন এ দিনও। ক্যারিয়ার সেরা ৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান তিনি টানা দ্বিতীয় ম্যাচে।
শম্বুক গতির শুরু
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেট স্ট্রাইকার্সের শুরুটা ছিল খানিকটা টেস্ট মেজাজের। পাওয়ার প্লেতে বাউন্ডারি আসে মাত্র দুটি। উইকেট হারাতে হয় দুটি। আবু হায়দারের বলে বাজে স্লগে বোল্ড হন রাকিম কর্নওয়াল (৪)। ব্যর্থতার ধারা থেকে বের হতে পারেননি জর্জ মানজি (২)। আসরের পাঁচ ম্যাচে স্কটিশ ব্যাটসম্যানের মোট রান ৬১।
পাওয়ার প্লেতে সিলেটের রান ২ উইকেটে ২১। ওপেনার রনি তালুকদারের রান তখন ১৯ বলে ১২।
ভাটার পর রানের জোয়ার
পাওয়ার প্লে শেষে যেন জোর চলে আসে রনি তালুকদার ও জাকির হাসানের ব্যাটে। বাউন্ডারি আসতে থাকে প্রতি ম্যাচে।
৯ ওভার শেষেও তবু রানরেট ছিল ছয়ের নিচে। দশম ওভারে নাসুম আমেদকে টানা দুটি ছক্কায় জাকির বুঝিয়ে দেন, ঝড় শুরু হয়ে গেছে। এরপর খুলনার বোলাররা উড়ে যেতে থাকেন।
মেহেদী হাসান মিরাজের ওভারে আসে ১৯ রান, জিয়াউর রহমানের ওভারে ছক্কা মারেন দুজনই।
জাকির ফিফটি করেন ২৯ বলে। চার ম্যাচের মধ্যে তার তৃতীয় ফিফটি এটি।
মোহাম্মদ নাওয়াজকে চার মেরে রনির ফিফটি আসে ৩৯ বলে।
৬২ বলে ১০৬ রানের জুটি ভাঙে রনি বিদায়ে। আগের ম্যাচে ছয়ে নেমে ৩০ রান করা রনি এবার ওপেনিংয়ে ফিরে করেন ৪৪ বলে ৫৬।
জোন্সের ক্যামিও
রনি বিদায় নিলেও রানের গতি কমেনি সিলেটে। অ্যারন জোন্স ক্রিজে গিয়ে দুটি ছক্কা মারেন মিরাজকে। ওই ওভার থেকে আসে ১৯ রান। পরে জিয়াউরকে ছক্কা মেরে আউট হয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যান (৬ বলে ২০)।
নতুন ব্যাটসম্যান জাকের আলি বিদায় নেন প্রথম বলেই। জিয়াউরের বল তার ব্যাটে লেগে প্যাডে লেগে গড়িয়ে আলতো করে ফেলে দেয় স্টাম্প।
পরে আরিফুল হক একটি ছক্কা মারলেও শেষ দিকে প্রত্যাশিত রান আসেনি। শেষ তিন ওভারে সিলেট তোলে মাত্র ২২ রান।
ছয় ছক্কা ও তিন চারে ৪৬ বলে ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন জাকির, ১৩ বলে ২১ রানে আরিফুল।
মিরাজের অনাকাঙ্ক্ষিত ফিফটি
চার ওভারে ৫৩ রান দেন খুলনা অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৪৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার রান দেওয়ার ফিফটি করলেন তিনি।
দুটি উইকেট নিলেও খরুচে ছিলেন অভিজ্ঞ জিয়াউর রহমান।
খুলনার মলিন চলা
১৮৩ রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল টপ অর্ডারে কারও বড় ইনিংস ও কার্যকর জুটি। কিন্তু খুলনা পায়নি কোনোটিই।
নাহিদুল ইসলামকে তেড়েফুঁড়ে খেলার চেষ্টায় ১১ রানে বোল্ড হন মোহাম্মদ নাঈম শেখ (১১)। তানজিম হাসানের বল সরাসরি পয়েন্টে তুলে দেন ইমরুল কায়েস (২)।
আসরে প্রথম খেলতে নামা দারভিশ রাসুলি দুটি চার একটি ছক্কার পর ফিরতি ক্যাচ দেন রিস টপলিকে। ব্যর্থ হন অধিনায়ক মিরাজও। ৩২ রানে জীবন পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি উইলিয়াম বসিস্টো। ৪০ বল খেলে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান করতে পারেন ৪৩ রান।
শেষের উত্তেজনা
পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নাওয়াজ ছয়ে নেমে করেন ১৮ বলে ৩৩। তার পরও শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৪৭ রানের।
অষ্টাদশ ওভারে জিয়াউর রহমান রান আউট হওয়ার পর টানা দুটি চার মারেন মাহিদুল। ম্যাচে নতুন প্রাণ ফেরে মূলত পরের ওভারে।
তানজিমের ওভারে চার দিয়ে শুরুর পর নো বলে ছক্কা মারেন মাহিদুল। ১৫ রান আসে ওভার থেকে।
শেষ ওভারে যখন প্রয়োজন ১৯ রান, প্রথম বলে মাহিদুলের সিঙ্গলের পর টানা দুটি চার মেরে গ্যালারিকে চুপ করিয়ে দেন আবু হায়দার।
তিন বলে ১৪ রান তখন খুবই সম্ভব!
তবে এরপর নিজেকে সামলে নেন বোলার রুয়েল। পরিকল্পনা মতোই স্টাম্পের বাইরে বল করেন তিনি। ছক্কার চেষ্টায় এক্সট্রা কাভার সীমানায় ধরা পড়েন আবু হায়দার (৬ বলে ১৪)। স্ট্রাইক নেওয়ার চেষ্টায় পরের বলে রান আউট মাহিদুল (১৬ বলে ২৮)।
ঘরের দলের জয়ে গ্যালারি তখন উত্তাল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৮২/৫ (রনি ৫৬, কর্নওয়াল ৪, মানজি ২, জাকির ৭৫*, জোন্স ২০, জাকের ০, আরিফুল ২১*; আবু হায়দার ৪-০-২৫-২, নাসুম ৩-০-১৭-১, মিরাজ ৪-০-৫৩-০, হাসান ৪-০-২৬-০, নাওয়াজ ২-০-২২-০, জিয়াউর ৩-০-৩৯-২)।
খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৭৪/৯ (বসিস্টো ৪৩, নাঈম ১১, ইমরুল ২, রাসুলি ১৫, মিরাজ ১৫, নাওয়াজ ৩৩, মাহিদুল ২৮, জিয়াউর ৪, আবু হায়দার ১৪, নাসুম ১*, হাসান ০*; কর্নওয়াল ৪-০-২৮-০, নাহিদুল ৪-০-২৮-১, তানজিম ৪-০-৪৫-২, টপলি ৪-০-৪৫-২, রুয়েল ৪-০-২৮-২)।
ফল: সিলেট স্ট্রাইকার্স ৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: জাকির হাসান।