বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘টানা তিন’

উত্তেজনাপূর্ণ শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে শেষ ওভারে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল ক্যারিবিয়ানরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2023, 05:49 AM
Updated : 22 Dec 2023, 05:49 AM

শেই হোপের ছক্কায় শেষ ম্যাচ শেষ হতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডাগ আউটে সে কী উল্লাস! ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকরা তো তখন উন্মাতাল। দুই বল আগেই ম্যাচে ছিল তুমুল উত্তেজনা আর অনিশ্চয়তা। সেই ম্যাচ শেষ চার বল আগেই। বড়দিনের আগেই যেন ক্যারিবিয়ানদের আরেকটি উৎসবের উপলক্ষ্য! 

টি-টোয়েন্টিতে দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয় আর এমন কী! কিন্তু এটি শুধুই বিচ্ছিন্ন এক সিরিজ জয় নয়। এই জয় বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে। ২-০তে এগিয়ে গিয়ে আবার দুই ম্যাচ হেরে শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড চাপের মধ্যে শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়। সবচেয়ে বড় কথা, এই সংস্করণে টানা তৃতীয় সিরিজ জয়! এই জয় তাই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের ক্ষয়িষ্ণু সময়ে উজ্জীবনী সুধাও। 

৪ উইকেটের জয়ে সিরিজ শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষটাও করল ৪ উইকেটের জয়ে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি তারা জিতে নিল ৩-২ ব্যবধানে। 

ত্রিনিদাদে বৃহস্পতিবার ম্যাচটি হয়েছে ঠিক আগের ম্যাচের উইকেটেই। তবে ৪৮ ঘণ্টা আগে যে উইকেটে রানের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল, ৩৫.৩ ওভারে রান উঠেছিল ৪৫৯, এবার সেই ২২ গজেই গলদঘর্ম ব্যাটসম্যানরা। ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ১৩২ রানে। ক্যারিবিয়ানরা ম্যাচ শেষ করে চার বল বাকি রেখে। 

মন্থর উইকেটে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তির কারণ হয়ে ওঠেন ক্যারিবিয়ানদের দুই বাঁহাতি স্পিনার গুডাকেশ মোটি ও আকিল হোসেন। ৪ ওভারে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা মোটি। ৪ ওভারে ২০ রানে ২ উইকেট নেন আকিল। 

রান তাড়ায় ইংলিশ বোলাররাও বেশ চেপে ধরেন ক্যারিবিয়ানদের। শেষ পর্যন্ত এক প্রান্ত আগলে রেখে ৪৩ বলে ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে পার করান শেই হোপ। 

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড প্রথম ৩ ওভারে উইকেট না হারিয়ে করে ২৪ রান। চতুর্থ ওভারে জেসন হোল্ডার আক্রমণে এসেই ফিরিয়ে দেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারকে (১১)। উইল জ্যাকস তিনে নেমে আকিলকে একটি ছক্কা মেরেই বোল্ড হয়ে যান পরের বলে। 

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ফিল সল্টের দারুণ ব্যাটিংয়ে তবু পাওয়ার প্লেতে ৫০ তোলে ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লে শেষেও মোটিকে বিশাল এক ছক্কা মারেন তিনি। তবে পরের বলেই মোটি শোধ তোলেন দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করে দিয়ে। 

আগের দুই ম্যাচে ম্যাচ জেতানো বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করা সল্টা এবার ফেরেন ২২ বলে ৩৮ রান করে। 

এর আগেই অবশ্য রেকর্ডে নাম লেখান ২৭ বছর বয়সী ওপেনার। এক টি-টোয়েন্টি সিরিজে সর্বোচ্চ রানের কীর্তি গড়েন তিনি। এই সিরিজে তার রান ৫ ম্যাচে ৩৩১। পেরিয়ে যান গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৬ ম্যাচে ৩১৬ রানের রেকর্ড। 

৫ ম্যাচের সিরিজে তিনশ রান করা প্রথম ব্যাটসম্যান সল্টই। 

সল্টকে ফেরানোর পর হ্যারি ব্রুককেও দ্রুত ফেরান মোটি। লিয়াম লিভিংস্টোন ও মইন আলি তবু লড়াই চালিয়ে যান। কিন্তু তারা কেউ ইনিংস বড় করতে পারেননি। শেষ দিকে ধসে পড়ে দলের ইনিংস। ২৯ বলে ২৮ করে লিভিংস্টোন ফিরতি ক্যাচ দেন মোটিকে। মইন ২১ বলে ২৩ করে আকিলের বলে আউট হন আন্দ্রে রাসেল ও রভম্যান পাওয়েলের যৌথ চেষ্টায় দুর্দান্ত ক্যাচে। 

শেষ দিকে আর কেউ দাঁড়াতে পারেননি। শেষ ৬ ওভারে স্রেফ ২৩ রান তুলতে ৬ উইকেট হারায় ইংলিশরা। 

পুঁজি বড় না হলেও ইংলিশ বোলাররা লড়াইয়ে কমতি রাখেনি। ব্র্যান্ডন কিংকে ৩ রানে ফেরান রিস টপলি। নিকোলাস পুরান নেমে একটি ছক্কা মেরেই আউট হয়ে যান। 

সিরিজে প্রথমবার খেলতে নেমে ওপেনিংয়ে ভালোই খেলছিলেন জনসন চার্লস। তবে ২২ বলে ২৭ রান করা ব্যাটসম্যানকে বিদায় করে দেন সিরিজজুড়ে অসাধারণ বোলিং করা আদিল রাশিদ। 

হোপ ও শেরফেন রাদারফোর্ড এরপর এগিয়ে নেন দলকে। চাপের মধ্যে রাদারফোর্ডের ২৪ বলে ৩০ রানের ইনিংসটি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এগিয়ে দেয় অনেকটা। 

আগ্রাসী দুই ব্যাটসম্যান রভম্যান পাওয়েল ও আন্দ্রে রাসেলকে এ দিন জ্বলে উঠতে দেয়নি ইংল্যান্ড। কিন্তু হোপকে হারাতে পারেননি তারা। 

হোপের রান একটা সময় ছিল ৩১ বলে ২৩। পরে পরিস্থিতি বুঝে রানের গতি বাড়ান তিনি। 

শেষ দুই ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যখন প্রয়োজন স্রেফ ১১ রান, স্যাম কারানের দারুণ একটি ওভার ম্যাচ জমিয়ে তোলে আবার। ১৯তম ওভারে রাসেলকে আউট করার পাশাপাশি স্রেফ ২ রান দেন এই বাঁহাতি পেসার। তাতে শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৯ রানের। মন্থর উইকেটে যা খুব সহজ নয়।

ক্রিস ওকসের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে তিন রান নেন জেসন হোল্ডার। পরের বলেই হোপের সেই ছক্কা এবং ক্যারিবিয়ান উৎসব। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

ইংল্যান্ড: ১৯.৩ ওভারে ১৩২ (সল্ট ৩৮, বাটলার ১১, জ্যাকস ৭, লিভিংস্টোন ২৮, ব্রুক ৭, মইন ২৩, কারান ১২, ওকস ২, রেহান ০, রাশিদ ১, টপলি ০*; রাসেল ৪-০-২৫-২, টমাস ৪-০-৩৬-০, আকিল ৪-০-২০-২, হোল্ডার ৩.৩-০-২৪-২, মোটি ৪-০-২৪-৩)। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৯.২ ওভারে ১৩৩/৬ (কিং ৩, জনসন ২৭, পুরান ২০, হোপ ৪৩*, রাদারফোর্ড ৩০, পাওয়েল ৮, রাসেল ৩, হোল্ডার ৪*; টপলি ৪-০-১৭২-, ওকস ৩.২-০-২৮-১, রেহান ৪-০-৩৬-০, রাশিদ ৪-০-২১-২, মইন ২-০-১৩-০, কারান ২-০-১৩-২)। 

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-২ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: গুডাকেশ মোটি।

ম্যান অব দা সিরিজ: ফিল সল্ট।