তিন বছরের বেশি সময় পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরে ৬১ বলে সেঞ্চুরি করার পর এবার আরেকটি বিধ্বংসী ইনিংস উপহার দিলেন এভিন লুইস।
Published : 01 Nov 2024, 10:37 AM
আদিল রাশিদের ফুল লেংথ বল উড়িয়ে মারলেন এভিন লুইস। ছক্কা হচ্ছে ভেবে চিৎকার করে উঠলেন দর্শকেরা। একটু পরই সব নীরব। লুইস যে ধরা পড়েছেন সীমানায়! ছক্কা হলেই তার সেঞ্চুরি পূর্ণ হতো। থামতে হলো ঠিক ছয় রান দূরেই। তবে ইংলিশ ক্রিকেটারদের আনন্দও খুব স্বতস্ফূর্ত হলো না। আউট হওয়ার আগেই যে তাণ্ডব চালিয়ে ম্যাচের ফয়সালা করে ফেলেছেন লুইস!
৫ চার ও ৮ ছক্কায় ৬৯ বলে ৯৪। দলের লক্ষ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ রান একাই করে ফেললেন লুইস। এরপর আর ম্যাচে থাকে কী! চার অভিষিক্ত আর সব মিলিয়ে অনভিজ্ঞ দল নিয়ে নামা ইংল্যান্ড পাত্তাই পেল না। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ৮ উইকেটের জয়ে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
লুইসের ব্যাট উত্তাল হলেও ম্যাচের সেরা গুডাকেশ মোটি। চার উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি দুটি ক্যাচও নেন বাঁহাতি এই স্পিনার। অ্যান্টিগায় বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে ৪৫.১ ওভারে ২০৯ রানেই গুটিয়ে যায় ইংলিশরা।
ক্যারিবিয়ানদের রান তাড়ায় ১৫ ওভারে ৮১ রান তোলার পর বৃ্ষ্টিতে বন্ধ থাকে খেলা। পরে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ৩৫ ওভারে ১৫৭। সেই ঠিকানায় পৌঁছে যায় তারা ৫৫ বল বাকি রেখেই।
লুইসের ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে উইকেটের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে না। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের উইকেটে বল গ্রিপ করেছে বেশ, বাউন্স ছিল অসম, গতি ছিল দুই রকমের। স্বচ্ছন্দ ছিলেন না প্রায় কোনো ব্যাটসম্যানই। কেবল লুইসই যেন ব্যাট করছিলেন অন্য উইকেটে!
তিন বছরেরও বেশি সময় পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরে পাঁচ দিন আগে শ্রীলঙ্কায় ৬১ বলে সেঞ্চুরি করেছেন লুইস। এরপর এই ইনিংস খেলে ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান যেন বুঝিয়ে দিলেন, সব পুষিয়ে দিতে প্রস্তুত তিনি।
প্রায় নতুন চেহারার ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামে টসে হেরে। জর্ডান কক্স, জন টার্নার, ডান মুজলি ও জেমি ওভারটন- চার অভিষিক্তকে নিয়ে একাদশ সাজায় তারা। ব্যাটিং লাইন আপ এত অনভিজ্ঞ যে, দলের সফলতম ওয়ানডে ব্যাটসম্যান আদিল রাশিদ, যিনি মূলত বোলার এবং ক্যারিয়ারে রান ছিল এই ম্যাচের আগে ৮৮৯!
সেই অনভিজ্ঞতার ছাপ ছিল তাদের ব্যাটিংয়েও। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের সবাই ১৫ পেরিয়েছেন, কেউ ৩০ পর্যন্ত যেতে পারেননি।
শুরুটা যদিও খারাপ ছিল না। ৮ ওভারে ৩৯ রান তোলেন ফিল সল্ট ও উইল জ্যাকস। ১৮ রান করা সল্টের বিদায়ে ভাঙে জুটি। জেডেন সিলসের বলে মিড অফ থেকে অনেকটা পেছনে ছুটে দারুণ ক্যাচ নেন আলজারি জোসেফ।
এরপর জ্যাকস ফেরেন ১৯ রানে, কক্স ১৭ ও জ্যাকব বেথেল ২৭ রান করে।
৯৩ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে কিছুটা এগিয়ে নেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিয়াম লিভিংস্টোন ও স্যাম কারান। পঞ্চম উইকেটে ৮৪ বলে ৭২ রান যোগ করেন দুজন।
দারুণ বোলিং করা মোটি ভাঙেন এই জুটি। জস বাটলারের চোটে নেতৃত্ব পাওয়া লিভিংস্টোন অধিনায়কত্বের অভিষেকে ৪৮ রান করে ফিরতি ক্যাচ দেন বোলারকে।
মোটি-জোসেফদের বোলিংয়ে এরপর নিয়মিত উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। কারান ফেরেন ৩৭ রান করে।
ইংলিশদের শেষ ৬ উইকেটের পতন হয় স্রেফ ৪৪ রানের মধ্যেই।
রান তাড়ায় চতুর্থ ওভারে জন টার্নারকে ছক্কা মেরে শুরু হয় লুইসের ছুটে চলা। এরপর তিনি এগোতে থাকেন ইংলিশ বোলিং গুঁড়িয়ে।
বৃষ্টির আগে-পরে মিলিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১১৮ রান। ম্যাচ মূলত শেষ ওখানেই।
তবে উইকেট কেমন ছিল, সেটি বোঝা যাবে লুইসের সঙ্গী ব্রান্ডন কিংয়ের ব্যাটিংয়ে। কিং নিজেও যথেষ্ট আগ্রাসী ব্যাটসম্যান, কিন্তু তার ৩০ রান আসে ৫৬ বল খেলে।
বৃষ্টির আগেই ফিফটি করে ফেলেছিলন লুইস। বৃষ্টির পর রাশিদের ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় আরও এগিয়ে যান। তার সেঞ্চুরি মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। ৮৮ থেকে রাশিদকে ছক্কা মেরে ৯৪ রানে পৌঁছে যান। সেখান থেকে আরেক ছক্কার চেষ্টায় বিদায়।
কেসি কার্টিকে নিয়ে এরপর ম্যাচ শেষ করে ফেরেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক শেই হোপ।
সিরিজের পরের ম্যাচ একই মাঠে শনিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৪৫.১ ওভারে ২০৯ (সল্ট ১৮, জ্যাকস ১৯, কক্স ১৭, বেথেল ২৭, লিভিংস্টোন ৪৮, কারান ৩৭, মুজলি ৮, ওভারটন ০, রাশিদ ১৫, আর্চার ৭, টার্নার ২*; ফোর্ড ৯-০-৪৮-২, সিলস ৯-১-২২-২, জোসেফ ৮.১-০-৪৬-২, মোটি ১০-০-৪১-৪, চেইস ১০-০-৪৭-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: (লক্ষ্য ৩৫ ওভার ১৫৭) ২৫.৫ ওভারে ১৫৭/২ (কিং ৩০, লুইস ৯৪, কার্টি ১৯*, হোপ ৬*; আর্চার ৫-২-২১-০, টার্নার ৫-০-২৬-০, রাশিদ ৭-০-৫০-১, কারান ২-০-১৩-০, লিভিংস্টোন ৫.৫-০-৩২-১, বেথেল ১-০-১২-০)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: গুডাকেশ মোটি