টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে প্রশংসায় জোয়ারে ভাসছেন রাশিদ খান, মোহাম্মদ নাবিরা।
Published : 23 Jun 2024, 06:04 PM
লক্ষ্যটা খুব বড় দিতে পারেনি আফগানিস্তান। কিন্তু তাতে কী! দুর্দান্ত বোলিংয়ে দলের জন্য দেড়শর কাছাকাছি পুঁজিই যথেষ্ট করে তোলেন নাবিন-উল-হাক, গুলবাদিন নাইবরা। সঙ্গে ফিল্ডিং ছিল চমৎকার। সব মিলিয়ে উজ্জীবিত ক্রিকেট খেলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক জয় তুলে নেয় আফগানরা। রাশিদ-নাবিদের চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স নিয়ে ক্রিকেট আঙিনায় চলছে আলোচনার ঝড়। দলটিকে ভাসানো হচ্ছে স্তুতির জোয়ারে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোববার অস্ট্রেলিয়াকে ২১ রানে হারিয়ে দেয় আফগানিস্তান। ১৪৮ রানের পুঁজি নিয়ে ২০২১ আসরের চ্যাম্পিয়নদের তারা গুটিয়ে দেয় ১২৭ রানে। তিন সংস্করণ মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছয় ম্যাচে এটি তাদের প্রথম জয়।
সাদা বলের ক্রিকেটে আফগানিস্তান এখন সমীহ দেখানোর মতো দল। চলমান বিশ্বকাপেই তারা নিউ জিল্যান্ডকে হারায় ৮৪ রানের বড় ব্যবধানে। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইতিহাস গড়া জয়।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সবশেষ দুটি বিশ্ব আসরে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর সম্ভাবনা জাগিয়েছিল আফগানিস্তান। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অ্যাডিলেইডে রাশিদ খানের বিধ্বংসী ইনিংসে দারুণ লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত ৪ হারে হেরে যায় তারা।
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের হারটা তো আফগানদের জন্য ছিল আরও বেদনাদায়ক। ২৯১ রানের পুঁজি নিয়ে ৯১ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেট তুলে নিয়েছিল তারা। কিন্তু মুম্বাইয়ে সেদিন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় এক ডাবল সেঞ্চুরিতে আর কোনো উইকেট না হারিয়েই অবিস্মরণীয় এক জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। এবারও ম্যাক্সওয়েল দাঁড়িয়েছিলেন আফগানদের সামনে বাধা হয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাশিদদের ইতিহাস রচনা করা থামাতে পারেননি তিনি।
দিনকে দিনকে উন্নতি করা আফগানিস্তানের এই জয়কে তাই অঘটন বলতে বারণ করেছেন ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ওয়াসিম জাফর। তার মতে, এমনটা বলা হলে সেটা আফগানদের অসম্মান করা হবে।
“এটাকে অঘটন বলে আফগানিস্তানকে অসম্মান করবেন না। নিজেদের দিনে যে কোনো দলকে হারানোর জন্য আফগানরা যথেষ্ট ভালো। তারা আজ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলেছে এবং খুব ভালো একটি অস্ট্রেলিয়ান দলকে হারিয়েছে। এটা উদযাপন করা উচিত। অভিনন্দন এবং ভালো খেলেছ।”
প্যাট কামিন্স-মিচেল মার্শদের যেভাবে হারিয়েছে আফগানিস্তান, তাতে মুগ্ধ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার টম মুডি।
“বিশাল ব্যাপার…আফগানিস্তান প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে হারাল। রাশিদ খান ও তার সত্যিকারের যোদ্ধাদের দলকে টুপি খোলা অভিনন্দন।”
এই আফগানিস্তান দলের প্রধান কোচ জোনাথান ট্রট। সাবেক এই ইংলিশ ব্যাটসম্যানের কোচিংয়ে দলটির ক্রিকেটে উন্নতি ছাপ স্পষ্ট। ট্রটের সাফল্যে খুশি সাবেক ইংলিশ পেসার স্টিভেন ফিন।
“জোনাথন ট্রট এবং আফগানিস্তানের জন্য উচ্ছ্বসিত। কী দারুণ এক বিশ্বকাপ হচ্ছে!”
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের পর নিজের আবেগ সামাজিক মাধ্যমেও প্রকাশ করেছেন রাশিদ খান। তাদের ওপর আস্থা রাখাদের জন্য এই জয় উৎসর্গ করেছেন আফগানিস্তান অধিনায়ক।
“বিশ্বাস করলে অবিশ্বাস্য অনেক কিছুই ঘটে। এটা এমন একটি জয় যেটা নিয়ে আমরা সবাই গর্বিত। এই জয় আপনাদের জন্য যারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন।”
আফগানিস্তানের এই জয় বিশ্বকাপের সুপার এইটের ‘এক নম্বর’ গ্রুপ এখন উন্মুখ হয়ে গেছে। চার দলের সবার এখন সুযোগ রয়েছে সেমি-ফাইনালে ওঠার। আফগানদের প্রশংসা করার পাশাপাশি সেটিই মনে করিয়ে দিলেন জিম্বাবুয়ের সাবেক পেসার ও ধারাভাষ্যকার এমপুমেলেলু মবাঙ্গওয়া।
“ক্রিকেট বিশ্বে জাদুকরী সব গল্প লিখে চলেছে আফগানিস্তান। বিশাল জয় এটা! গ্রুপটিকে যথাযথভাবে নাড়া দিয়েছে।”
ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে ৪ বলে ১০ রান করা মোহাম্মদ নাবি বল হাতে স্রেফ এক রান দিয়ে নিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেট। এই সাফল্যকে আফগান অলরাউন্ডার দেখছেন নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ হিসেবে।
“সবাইকে অভিনন্দন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমাদের আজকের জয় আমাদের শক্তি ও চেতনার সত্যিকারের প্রমাণ।”
আফগানিস্তানের এই জয়ে অবশ্য বিস্মিত নন ইংলিশ সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন।
“আফগানিস্তানের এমন পারফরম্যান্স যা আমরা এইমাত্র দেখেছি, এটা নিয়ে আর অবাক হওয়ার কিছু নেই…অত্যন্ত দক্ষ খেলোয়াড়দের একটি দল এবং যাদের দুর্দান্তভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে রাশিদ খান।”
অস্ট্রেলিয়া নারী দলের সাবেক অধিনায়ক ও তারকা ব্যাটার লিসা স্টালেকারের মতে, সেন্ট ভিনসেন্টের কন্ডিশন ভালোভাবে বুঝে সে অনুযায়ী পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করতে পেরেছে আফগানিস্তান। সঙ্গে আফগানদের ফিল্ডিংয়ের প্রশংসাও করেছেন তিনি।
“আফগানিস্তান দলের জন্য এটি আরেকটি ঐতিহাসিক জয়। তারা কন্ডিশন খুব ভালোভাবে পড়েছে, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সেটা ভালোভাবে কার্যকরও করেছে!! অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, ৬টি সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে, অন্যদিকে কিছু আফগানিস্তান দুর্দান্ত কিছু ক্যাচ ধরেছে!”
বাংলাদেশ সময় সোমবার রাতে ভারতের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া। পরদিন ভোরে বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়বে আফগানিস্তান।